শিরোনাম
লালমনিরহাট, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বিজয়ের মাসে চলছে বউ জামাই মেলায় বিভিন্ন স্বাদের পিঠার উৎসব । লালমনিরহাট সদরের বড়বাড়ি শহীদ আবুল কাশেম মহাবিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ১৫ দিনব্যাপী বউ-জামাই মেলা ও পিঠা মেলার উদ্বোধন করেন বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু।
১৬ ডিসেম্বর সকাল থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ মেলার প্রথম দিন থেকেই উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। প্রতিদিন দুপুর থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি আশপাশের জেলা থেকেও পিঠা প্রেমীরা এ পিঠা উৎসবে আসছেন। বিকেলের পর থেকে পিঠার স্বাদ গ্রহণে ব্যস্ত থাকেন পিঠা প্রেমীরা। গরম গরম তেলে ভাজা আর ধোয়া উড়ানো পিঠার স্বাদ নিতে স্টলে স্টলে ভিড় জমান তারা। যাদের ঐতিহ্যগতভাবে পিঠা তৈরির দক্ষতা রয়েছে তারাই মূলত এবার বিভিন্ন পিঠার স্টল দিয়েছেন । উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার ভিন্ন ভিন্ন ধরনের আদি পিঠার স্থান রয়েছে স্টলগুলোতে। এ পিঠাগুলোর এলাকাভেদে রয়েছে বিভিন্ন নাম। এখানে এমন কিছু পিঠা আছে যা সারাদেশেই প্রসিদ্ধ এবং জনপ্রিয়।
এবারের পিঠা মেলায় পাওয়া যাচ্ছে জামাই পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, তেল পিঠা, নারিকেল পিঠা, দুধ পিঠা, পুলি পিঠা, চিতই পিঠা, দুধ চিতই,গুরি পিঠা, ভাঁপা পিঠা, ঝাল পিঠা, ছাঁচ পিঠা, চুটকি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, চাঁদ পিঠা, পাতা পিঠা, মালাই পিঠা, মুঠি পিঠা, কুলশি পিঠা, কাটা পিঠা, কলা পিঠা, খেজুরের পিঠা, ক্ষীর কুলি পিঠা, গোকুল পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, লবঙ্গ লতিকা পিঠা, রসফুল পিঠা, জামদানি পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, ঝালপোয়া পিঠা, ঝুরি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, সূর্যমুখী পিঠা, নকশি পিঠা, নারকেলে ভাজা পুলি পিঠা, নারকেলের সেদ্ধ পুলি পিঠা, তেজপাতা পিঠা, তেলপোয়া পিঠা, দুধরাজ পিঠা, ফুল ঝুরি পিঠা, ফুল পিঠা, বিবিয়ানা পিঠা ও সেমাই পিঠা। নানা ধরনের আদি পিঠার পসরা নিয়ে বসেছেন পিঠা তৈরির শিল্পীরা।
সন্ধ্যায় আলোর ঝলকানিতে গরম গরম ধোয়া ওঠা পিঠা উপভোগ করেন আগত পিঠাপ্রেমীরা।
মেলার অপরপ্রান্তে রয়েছে শিশুদের বিনোদনের জন্য ট্রেন, দোলনা, নাগরদোলা, জাম্পিং প্যাড ও মোটরসাইকেল কারের আকর্ষণীয় সার্কাস খেলা। মাঠজুড়ে বসেছে ফুসকা-চটপটিসহ কসমেটিকস, ইলেকট্রিক্যাল সরঞ্জাম, আসবাব, টেক্সটাইল, যন্ত্রপাতি, ইমিটেশন জুয়েলারি, পাটজাত দ্রব্য, তৈজসপত্র, গৃহস্থলিতে ব্যবহারের বিভিন্ন পণ্য, স্টেশনারি, প্লাস্টিক পণ্য, মেলামাইন, খাদ্যসামগ্রী, টয়লেট্রিজ, প্রক্রিয়াজাত খাবার, হস্তশিল্প, গৃহসজ্জা মিলসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির আমেজ। মেলায় পোশাকের স্টলগুলোতে মেয়েদের থ্রি-পিস, শাড়ি, ওড়না, চাদর ও ছোটদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। মেলার উত্তর পাশে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছের স্টল। যেখানে চলছে মাছের প্রদর্শনী ও বিক্রি। আগত দর্শনার্থীরা এগুলো দেখে মেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে কিনছে বিভিন্ন জাতের মাছ।
রংপুর থেকে আসা আব্দুর রাজ্জাক (৩২) বলেন, মিডিয়ায় এ মেলার খবর দেখে বউ সন্তানসহ এখানে এসেছি। মেলায় এসে দেখি এখান সব ধরনের কেনাকাটা করা যাচ্ছে ।
একদিকে বসেছে মৎস্য মেলা অন্যদিকে বসেছে পিঠার মেলা। আর এমেলার প্রধান গেটে দেখলাম লেখা বউ জামাই ও মৎস্য মেলা । এক মেলার ভিতরেই সব কিছু পেয়ে যাচ্ছি জন্য ভালোই লাগছে ।
এখন সব ধরনের টুকটাক কেনাকাটা করে বাসায় যাচ্ছি ।
কুড়িগ্রাম শহর থেকে মেলায় এসেছে আসিফ মাহমুদ(২৪) ও তার বন্ধুরা। তারা কয়েকজন পিঠা খাচ্ছিলেন। তারা বলেন, বাসায় তো আমরা কম বেশি সবাই পিঠা তৈরি করে খাই। কিন্তু এ পিঠা মেলায় এসে বন্ধুদের নিয়ে পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা।
ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া (১৩) তার বাবা-মার সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন পিঠা মেলায়।
তিনি বলেন, মেলায় এসে অনেক মজা করেছি। এখানে সবকিছুই পাওয়া যাচ্ছে। বাবা-মাসহ অনেক মজা করে পিটাও খেলাম। প্রতিবছর যদি এ এলাকায় এমন আয়োজন হতো তাহলে আমাদের জন্য মাঝেমধ্যে একটু ঘুরতে আসতে সুবিধা হতো।
লালমনিরহাট সদরের বড়বাড়ি এলাকার পিঠার কারিগর জামিল হাসান (৩৮) বলেন, আমাদের পিঠা স্টলে বিক্রি মোটামুটি ভালই। তবে মেলা চলবে ১৫ দিন। মেলা কর্তৃপক্ষ যদি একটু সময় বাড়িয়ে দিতেন তাহলে আরো ভালো হতো। প্রথম কয়েকদিন মেলায় লোক সমাগম খুব বেশি ছিল না।
কিন্তু বর্তমানে পিঠা প্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়ে বেচাকেনা বেশি হচ্ছে।
মেলা আয়োজক কমিটির আহবায়ক এবিএম ফারুক সিদ্দিকী ও সদস্য সচিব নাজমুল হুদা লিমন বাসস’কে জানান, গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বউ-জামাই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বউ জামাই মেলায় থাকছে 'পিঠা উৎসব' ও 'মৎস্য মেলা'। এখানে বিভিন্ন পিঠার স্টলের, পাশাপাশি রয়েছে বড় বড় মাছের স্টলসহ হরেক রকমের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান। সব মিলিয়ে এ মাঠে প্রায় ১৫০টি দোকান রয়েছে। মেলার পাশাপাশি গ্রাম বাংলার বিভিন্ন ঐতিহ্যকে উপস্থাপন করা হচ্ছে । এছাড়াও নতুন প্রজন্ম বিলুপ্ত প্রায় অনেক প্রজাতির মাছ ও পিঠার সঙ্গে পরিচিত হতে পারছে। সব মিলিয়ে গ্রাম-বাংলার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতেই এ ব্যতিক্রমী মেলার আয়োজন করা হয়েছে।