বাসস
  ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৩৩

কুমিল্লার আন্দিকুট দেব মন্দির একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা

।। কামাল আতাতুর্ক মিসেল।।
কুমিল্লা  (দক্ষিণ), ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : জেলার আন্দিকুট সর্বজনীন দেব মন্দিরটি শতাধিক বছর আগে সনাতন ধর্মবিলম্বী সাধক ব্রহ্মচারী গঙ্গা বিষ্ণু ঠাকুর মুরাদনগর উপজেলার উত্তর সীমান্তবর্তী জনপদ আন্দিকুট ইউনিয়নের আন্দিকুট সিদ্বেশ্বরীতে উপাসনায় ধ্যানমগ্ন হন। গঙ্গাবিষ্ণু ঠাকুরের মহাপ্রয়াণের পর ধ্যানমগ্ন স্থানটিতে একটি বটবৃক্ষ তার উপাসনা ও ধ্যানমগ্নতার স্বাক্ষর বহন করছে। ওই স্মারক বট বৃক্ষটি কেন্দ্র করেই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বীদের উপাসনা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে গঙ্গাবিষ্ণু ঠাকুরের আরাধ্য স্থানটি ক্রমে সিদ্বেশ্বরী আশ্রম (ধাম) হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এ সিদ্বেশ্বরী আশ্রমের আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে এখন এটি আন্দিকুট সার্বজনীন দেব মন্দিরে রূপ লাভ করে। একটি বটগাছ কেন্দ্রীক শতবর্ষী এ আশ্রমটি সরকারী অর্থায়নের পাশাপাশি বহু ভক্তবৃন্দের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি আধুনিক সুযোগ সুবিধা সংবলিত দৃষ্টিনন্দন এক স্থাপত্বে রূপ লাভ করে। আন্দিকুট গ্রামের প্রয়াত মনিন্দ্র চন্দ্র সাহার ছেলে সঞ্জিত কুমার সাহা ধর্মীয় আশ্রমটির আধুনিকায়নে ভ’মিকা  রেখেছেন। দৃষ্টিনন্দন এ আশ্রমটি দেখে অভিভূত হবেন যে কেউ। 
সরজমিনে আশ্রম পরিচালনা কমিটির সম্পাদক ঠাকুর চান দাস, আন্দিকুট সৈয়দ গোলাম জিলানী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রবীন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ এবং প্রয়াত রামদয়াল শীলের ছেলে ধরনী কান্ত শিবসহ স্থানীয়দের সাথে কথা হয়। এ সময় তারা বাসসকে জানান, নব্বই’র দশকের মাঝামাঝি সময়কাল থেকে আশ্রমটির আধুনিকায়নে এগিয়ে আসেন সঞ্জিত কুমার সাহা। ১৪০ শতকেরও বেশি জমি নিয়ে গঠিত আশ্রম কমপ্লেক্সে রয়েছে পাঠশালা থেকে শুরু করে রন্ধনশালা, অতিথিশালাসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা। রয়েছে গঙ্গা ঠাকুরের সমাধি, নাটমন্দির, বটগাছ, শ্রী কৃষ্ণের মূল মন্দির, নাট মন্দিরের সামনে সুদৃশ্য বাগানযুক্ত মাঠ, শানবাঁধানো ঘাট, দেয়াল বেষ্টিত পুকুর, পুকুরের উত্তর পাড়ে বিশাল দ্বিতল ভবন, এর নিচতলায় অতিথিদের সেবার জন্য সুবিশাল আসন দ্বিতীয় তলায় রয়েছে কীর্তনে আগত কীর্তন দলের থাকার জন্য আধুনিক কক্ষ, হল রুম। নাট মন্দিরের দক্ষিণের ভবনে অফিস কক্ষ, আবাসিক কক্ষ, ভিআইপি অতিথিদের বিশ্রামাগার। এর দক্ষিণে রয়েছে বিশাল রন্ধনশালা, পাশে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খেলার মাঠ প্রভৃতি। কমপ্লেক্সের চারপাশে উঁচু নিরাপত্তা বেষ্টনি, পূর্ব পাশে সুনিয়ন্ত্রিত প্রধান ফটক। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কমপ্লেক্সের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের পাড়ে প্রশস্ত ও দৃষ্টিনন্দন রিটার্নিং ওয়াল সমেত পাঁকা রাস্তা ও ব্রিজ যেন কমপ্লেক্সের সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রতিবছরই মন্দিরটিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়ে থাকে  ১৯ পৌষ থেকে ২৮ পৌষ দশ দিনব্যাপী শ্রীমৎ ভগবৎ গীতা পাঠ, ২৯ পৌষ অধিবাস, ৩০ পৌষ থেকে মাঘ মাসের ৩ তারিখ পর্যন্ত নাম কীর্তন, ৪ মাঘ মহাপ্রসাদ বিতরণ। এছাড়াও বার্ষিক নানা অনুষ্ঠানমালার মধ্যে পয়লা বৈশাখ পালন, রথাযাত্রা, শ্রীকৃষ্ণের জš§াষ্টমী পালন ও দোল পূর্ণিমা। তাছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গীতা পাঠসহ ছোট বড় আরো অনেক ধরণের সনাতন রীতির উপাসনা, অনুষ্ঠানাদি পালন করা হয়ে থাকে। উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানাদিতে অন্তত তিন থেকে চার সহস্রাধিক লোকের সমাগম ঘটে এ আশ্রমে। তবে বর্তমানে করোনার কারণে এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে সব অনুষ্ঠান করা হচ্ছে।
কমপ্লেক্সটির পৃষ্ঠপোষক সঞ্জিত কুমার সাহা বাসসকে বলেন, কমপ্লেক্সটির উন্নয়নে সরকারী অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও মন্দিরের উন্নয়ন করেছেন এলাকার জনগণ আর আমি তাদেরই একজন মাত্র।