বাসস
  ০৩ জুন ২০২৩, ১২:৫৫
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩, ১২:৫৯

কুমিল্লায় ময়নামতির রাণীর প্রাসাদ হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী

।। কামাল আতাতুর্ক মিসেল।।
কুমিল্লা (দক্ষিণ), ৩ জুন, ২০২৩ (বাসস): অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাণী ময়নামতির প্রাসাদ হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পূর্ব পাশে অবস্থিত। 
প্রতিদিন দূর-দূরান্তের অসংখ্য দর্শনার্থীর ভীড় জমে। তবে নেই চারপাশের সুরক্ষা প্রাচীর এবং প্রবেশেও লাগে না টিকিট। এছাড়া বছরের পর বছর ধরে এখানে মাসব্যাপী বড় পরিসরে বাঙালির গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রাণের উৎসব বৈশাখী মেলা বসে। এ মেলা এতদাঞ্চলে বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করে আসছে। 
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, রাজা মানিক চন্দ্রের রাণীর নাম ছিল ময়নামতি। রাজা মানিক চন্দ্র দশম শতাব্দীতে এই অঞ্চলে রাজত্ব করেন। রাজা তার রাণীর আরাম-আয়েশের জন্য লালমাই পাহাড়ের সর্বউত্তর প্রান্তের বিচ্ছিন্ন উঁচু চুড়ায় একটি বাংলো নির্মাণ করেন। পরবর্তী সময় বাংলোটি রাণী ময়নামতির প্রাসাদ নামে পরিচিতি লাভ করে। 
জানা যায়, প্রাচীনতম সভ্যতার নগরী ও ঐতিহ্যের নিদর্শন রাণী ময়নামতির প্রাসাদ। রাণীর এই প্রাসাদকে ঘিরে পাহাড়ের এই অংশ এবং স্থানীয় ইউনিয়নের নামকরণও করা হয় ময়নামতি নামে। এখানে প্রায় ১০ একর আয়তনের এই প্রতœকেন্দ্রটি এতদাঞ্চলের অন্যান্য পুরাকীর্তির সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। এটি সমতল ভূমি থেকে প্রায় ১৫ দশমিক ২৪ মিটার উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য ও প্রতœসম্পদের বিশ্লেষণে এটি ৭ম থেকে ১২০০ শতকের প্রাচীন কীর্তি। ওই সময়ে  এই অঞ্চলে ৫০টিরও অধিক  বৌদ্ধ বসতি গড়ে উঠেছিল বলে ধারণা করা হয়। ১৯৮৮ সালে এখানে প্রতœতাত্ত্বিক খননকাজ শুরু করা হয়। খননে একটি ক্রুশাকৃতির বৌদ্ধ মন্দিরের চারটি নির্মাণ যুগের স্থাপত্য কাঠামো উন্মাচিত হয় এবং তিন মিটার গভীরে প্রাপ্ত একটি সুড়ঙ্গ পথের সামনে খননের মাধ্যমে এই প্রাসাদের সন্ধান পাওয়া যায়। ৫১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫০০ ফুট প্রস্থের প্রাসাদের বেষ্টনী প্রাচীর, পড়োমাটির ফলক বা টেরাকোটা, তা¤্রলিপি, মূল্যবান প্রতœবস্ত ও অলংকৃত ইট আবিস্কৃত হয়। ২০১৮ সালের খননে প্রথম ও দ্বিতীয় নির্মাণ যুগের ২ মিটার চওড়া সীমানা প্রাচীর এবং সারফেস লেভেলে একটি বিশেষ সিঁড়িপথ উন্মোচিত হয়। খননে প্রাগৈতিহাসিক যুগের হাতিয়ার, জীবাশ্ম কাঠ, কালির দোয়াত, সিলমোহর, ব্রোঞ্জ ও মাটির মূর্তি, কলস, হাঁড়ি, বাটি, পানির পাত্র, লোহার কাস্তে, ঘর নির্মাণসামগ্রী, পেরেক, শাবলসহ এখানে অনেক মূল্যবান পুরাসামগ্রী পাওয়া গেছে। এগুলো প্রাচীন প্রতœতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করছে। ঐতিহ্যবাহী স্থানটিতে বছরের সবসময় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ব্যাপক আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। 
এ বিষয়ে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক এ কে এম সাইফুর রহমান বাসসকে বলেন, এখানে বিভিন্ন সময়ে প্রতœতাত্ত্বিক খননে প্রাচীনতম সভ্যতার নগরীর নিদর্শন উন্মোচিত হয়েছে এবং মূল্যবান প্রতœবস্ত-পুরাসামগ্রী পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, অচিরেই এই পুরার্কীতিটিতে টিকিট ব্যবস্থা চালু করে রাজস্ব আদায়ের আওতায় আনার জন্য সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।