বাসস
  ৩১ জুলাই ২০২৪, ২০:০৫
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৪, ২০:৫৮

ফুসফুসে সংক্রমন থেকেও হৃদরোগ হতে পারে : অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক

॥ মাহফুজা জেসমিন ॥
ঢাকা, ৩১ জুলাই ২০২৪ (বাসস): বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হৃদরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক বলেছেন, হার্টে ব্লক ছাড়াও  ফুসফুসে সংক্রমন বা ইনফেকশন থেকেও হৃদরোগ হতে পারে। যেসব কারনে আমাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ে, হৃদরোগ তার অন্যতম। তবে ফুসফুসের সংক্রমন থেকেও যে হৃদরোগ হতে পারে, সে সম্পর্কে জনসচেতনা কম।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে মৃত্যুর প্রধান কারণগুলির শীর্ষে রয়েছে হৃদরোগ। এতে বলা হয়, দেশে মোট মৃত্যুর ১৭.৪৫ শতাংশ ঘটে হৃদরোগের কারণে। এবছরের জানুয়ারিতে বিবিএস-এর নিয়মিত প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২’ বা  বিএসভিএস ২০২২ প্রকাশ করেছে। এতে মৃত্যুর প্রধান ১৫টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এই তালিকার শীর্ষে আছে হৃদরোগে মৃত্যু। মোট মৃত্যুর ১৭.৪৫ শতাংশের কারণ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু। আর তালিকার আট নম্বরে রয়েছে অন্যান্য হৃদরোগ। অন্যান্য হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার ৩.৬৭ শতাংশ। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, হার্ট অ্যাটাকসহ অন্যান্য হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২১ দশমিক ১২ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে। অর্থাৎ দেশে অসুস্থতাজনিত প্রতি পাঁচটি মৃত্যুর একটি হচ্ছে হৃদরোগে।
বাসসের সাথে আলাপকালে ডা. হারিস বলেন, হার্টে ব্লক ছাড়াও হৃদরোগ হয়। ইনফেকশন থেকেও হৃদরোগ হতে পারে। ফুসফুসের ইনফেকশন থেকে হার্ট ফেউলিওর হতে পারে। ইনফেকশন হৃদরোগের একটা অন্যতম কারণ। কিন্তু এটা একটা অবহেলিত কারণ, যা আমরা সবসময় খুঁজেও দেখিনা। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, বাংলা একাডেমি পদকপ্রাপ্ত খ্যাতিমান প্রচ্ছদ শিল্পী ধ্রুব এষ বর্তমানে হৃদরোগজনিত কারণে বিএসএমএমইউ’তে ভর্তি আছেন। এবছরের এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে দুই বার তার হার্ট ফেইলিওর হয়। হৃদরোগ শনাক্তের অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার হৃদরোগের কোন লক্ষণ খুঁজে না পেয়ে, বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসকদের বিশেষজ্ঞ দল ধ্রুব এষ এর এনজিওগ্রাম করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এনজিওগ্রাম  করে দেখা যায়, তার হার্টে কোন ব্লক  নেই। এক প্রশ্নের জবাবে ডা. হারিস বলেন, এটা ভাইরাল কার্ডিওমায়োপ্যাথি। এটা একটা আইকন হয়ে গেল আমাদের জন্য। শিল্পী ধ্রুব এষ-এর  হৃদযন্ত্র ভালো আছে। তাতে কোনো ব্লক নেই। কিন্তু ইনফেকশন জনিত কারণে প্রথমবার এ্যাকিউট হার্ট ফেইলিওর এবং পরের বার হার্ট এ্যাটাক হয়েছে।
জানা যায়, বিএসএমইউ’র  এই বিশেষজ্ঞ কমিটিতে ছিলেন, বিএসএমএমইউ’র উপ-উপাচার্য ও রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ, কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক, কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. সাকিব শাহরিয়ার, সহযোগী অধ্যাপক ডা. খোরশেদ আহমেদ, সহকারি রেজিস্ট্রার ডা. মোহাম্মদ আসাদ উল্যাহ, ডা আতিকুর রহমান, ডা. আশরাফ ও ডা. শাওন।     
ভাইরাল কার্ডিওমায়োপ্যাথির লক্ষণগুলো হলো-  বুক ব্যাথা, ক্লান্তি, পা, গোড়ালি ও পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া, দ্রুত বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন- যাকে বলা হয় অ্যারিথমিয়াস,  বিশ্রামে থাকা অবস্থায় এমনকি কার্যকলাপের সময় শ্বাসকষ্ট, হালকা মাথা ব্যাথা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি, ফ্লুর মতো উপসর্গ যেমন মাথাব্যথা, শরীরে ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, জ্বর বা গলা ব্যাথা। এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসা সম্পর্কে ডা. হারিস বলেন, ইনফেকশন যাতে আর নাহয়, সেজন্য আমরা  দুই ধরনের ভ্যাকসিন দেই। একটা ইনফ্লুয়েঞ্জা’র ভ্যাকসিন। যেটা বছরে একটা করে দিতে হয়।  আর পাঁচ বছর পর পর একটা করে ভ্যাকসিন দিতে পারি। এয়ার পলিউশন থেকে যেসব রোগ হয়- যেমন, কার্বন ডাই অক্সাইড, কলকারখানার ধোঁয়া, গাড়ির ধোঁয়া ইত্যাদি থেকে এক ধরনের উপাদান বের হয়, যেটা হৃদরোগের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। হৃদ রোগের জন্য এনভায়রনমেন্টাল পলিউশন বা বায়ূ দূষণ খুবই ক্ষতিকর।  স্মোকিং, এয়ার পলিউশন-  এসব পলিউশন থেকে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) হয়ে থাকে। ঢাকা শহরে যে পরিমাণ বায়ুদূষণ হয়, তাতে হাঁটলেও সিওপিডি হয়ে যেতে পারে। যেটা ধ্রুব এষ-এর হয়েছে।
ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জামান বলেন, হার্টে যেমন একটা করোনারি ট্রি আছে তেমনি ফুসফুসেও একটা ট্রি  আছে। ওইখানে কিছু ড্যামেজ হয় স্মোকিংয়ের জন্য। বায়ু দূষনের জন্যও পালমোনারি কিছু সমস্যা হয়। ওটার জন্য ও শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। হাঁটতে গেলেও শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। অনেক সময় বসে থাকলেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তিনি নিজে ধ্রুব এষ-এর এনজিওগ্রাম করেছেন এবং তার হৃদযন্ত্র ‘শিশুর মতো সুন্দর’ উল্লেখ করে বলেন, তার সিওপিডি আছে বলেই দুইবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।     
ডা. হারিস সিওপিডি সংক্রান্ত এক আন্তর্জাতিক গবেষণার বরাত দিয়ে বলেন, এ গবেষণায় এশিয়াকে পাঁচটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে এই সাউথ ইস্ট এশিয়ার দেশগুলো যেমন-  বাংলাদেশ,ভারত এবং চীনে  যাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি কমে আসার মতো রোগ হয়, তাদের সিংহভাগই হচ্ছে সিওপিডিতে আক্রান্ত রোগী, যেটা ধ্রুব এষ-এর হয়েছিলো। সিওপিডি থেকেই ভাইরাল হার্ট এ্যাটাক বারে বারে হয়। তিনি এধরনের হৃদরোগ থেকে রক্ষা পেতে ধুমপানে  বিরত থাকা, তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করার পাশাপাশি নিয়মিত কমপক্ষে আধা ঘন্টা সকালের রোদে হাঁটার পরামর্শ দেন।