বাসস
  ১২ আগস্ট ২০২৪, ১৩:০১
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৪, ১৫:০২

বাড়িতেও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে নারী ও শিশুরা

ঢাকা, ১২ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস): বেপরোয়া ধূমপানের কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যগত ক্ষতির শিকার হচ্ছেন পরোক্ষ ধুমপায়ীরা। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বাড়িতে শিশুরাও নিরাপদ নয়। দেশের বাস-লঞ্চ-ট্রেনের মতো জনসমাগমস্থল ও গণ পরিবহনে, বাসাবাড়ি ও হোটেল- রেস্তোরায়-সবখানে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে নারী ও শিশুরা।
গত ১৯ জুন ২০২৪ নিকোটিন অ্যান্ড টোব্যাকো রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৯২ শতাংশ শিশু ‘সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিং’ বা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত ধূমপানের ফলে ঢাকায় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়ার মাত্রা বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ধূমপানের হার ১৮শতাংশ। বাংলাদেশে উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধের আইন করা হলেও আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। এই প্রেক্ষাপটে গবেষকদলটি ঢাকার ৩৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী এক হাজার ৩৬৮ জন শিশুর ‘সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিং’য়ে শিকার হওয়া নিয়ে জরিপ পরিচালনা করে। এর অংশ হিসেবে শিশু ও তাদের বাড়ির বাসিন্দাদের লালা পরীক্ষা, ধূমপানের ধরন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। দেখা গেছে, যে শিশু প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীদের সঙ্গে বসবাস করে তাদের মধ্যে পরোক্ষ ধূমপানের মাত্রা বেশি।
গবেষক দলের প্রধান যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্কের অধ্যাপক কামরান সিদ্দিকী বলেন, শিশুদের সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিংয়ের’ শিকার হওয়া থেকে রক্ষা করতে ধূমপানমুক্ত বাড়ি এবং গাড়ির পক্ষে কথা বলা জরুরি। বিশেষকরে, শিশুরা প্রায়ই যায়, এমন খেলার মাঠ, পার্ক এবং মেলা প্রাঙ্গণ ধূমপানমুক্ত করা জরুরি।
এআরকে ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক রুমানা হক বলেন, এই গবেষণার ফলাফল সত্যি উদ্বেগজনক। যদি আমরা শিশুদের পরোক্ষ ধূমপানের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে না পারি, তাহলে তাদের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়বে। পরবর্তী জীবনে তারা উচ্চ হারে ধূমপানের দিকে ঝুঁকে পড়বে।
গ্লোব্যাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে ৪ কোটি ১০ লাখ মানুষ বাড়িতে এবং ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ গণপরিবহন ও জনসমাগমস্থলে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যগত ক্ষতির মুখোমুখি হয়। বাংলাদেশে কর্মস্থলে কাজ করেন এমন প্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠির ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। প্রায় ২৪ শতাংশ বা ২ কোটি ৫০ লাখ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ গণপরিবহনে যাতায়াতের সময়, ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ রেস্তোরাঁয় এবং ৩৬ দশমিক ২শতাংশ চা-কফির স্টলে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। প্রতিবছর প্রায় ৬১ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানজনিত বিভিন্ন অসুখে ভোগে।
গাইনিকোলজির চিকিৎসকদের মতে, সিগারেট থেকে নির্গত ধোঁয়া এবং এতে মিশে থাকা বিষাক্ত উপাদান গর্ভস্থ শিশুর রক্তসঞ্চালন কমিয়ে দেয়। এর ফলে বিকলাঙ্গ সন্তান জন্ম নিতে পারে। ধূমপায়ী নারীদের ঠোঁট কাটা এবং তালু কাটা সন্তান জন্ম দানের হার অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। মায়েদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাব পড়ে শিশুর জন্ম-পরবর্তী সময়েও। এর বিরূপ প্রভাবে শিশু স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্ন, অমনোযোগী ও অতিচঞ্চল হতে পারে। এ ক্ষেত্রে শিশুদের থাকতে পারে বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা, যা লেখাপড়া করার ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে সৃষ্টি করতে পারে বিভিন্ন সমস্যা।
এমনই এক নারী হকার রোকেয়া বেগম। তিনি জানান, রেলস্টেশনে ১১ বছর ধরে পান, সিগারেটসহ বিভিন্ন তামাক জাতীয় পণ্য বিক্রি করছেন। নারী যাত্রীরাও অনেক সময় তার কাছ থেকে এগুলো কেনে। তার সিগারেট রাখার বাক্সটি একটি নাম করা সিগারেট কোম্পানি বানিয়ে দিয়েছে। কোম্পানি ভেদে বেশি বিক্রি দেখাতে পারলে নানা উপহারসহ নগদ টাকা বোনাসও পান তিনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে পৃথিবীতে বছরে ১৩ লাখ মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তামাক পণ্যের ধোঁয়ায় আক্রান্ত হওয়ার নিরাপদ কোনো মাত্রা নেই। তামাকের ধোয়ায় রয়েছে ৭ হাজারটি রাসায়নিক পদার্থ যার মধ্যে ৭০টি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী। ফুসফুস ক্যান্সার, স্ট্রোক ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ পরোক্ষ ধূমপান। পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়া কোন ব্যক্তির মারাত্মক করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি একজন ধূমপায়ীর মতোই।