ঢাকা, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : প্রাণঘাতী নিউমোনিয়াকে পেছনে ফেলে একটু একটু করে সুস্থ হচ্ছেন পোপ ফ্রান্সিস। তবে আসন্ন ইস্টার সপ্তাহে ৮৮ বছর বয়সী এই ধর্মগুরুর অংশগ্রহণ নিয়ে ক্যাথলিক বিশ্বাসীদের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
খ্রিস্টান ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে রয়েছে একাধিক অনুষ্ঠান, যার মধ্যে আছে ‘ওয়ে অব দ্য ক্রস’ (ক্রুশের পথ) থেকে শুরু করে ‘ইস্টার ভিজিল’ পর্যন্ত।
ভ্যাটিকান সিটি থেকে এএফপি জানায়, সাধারণত এসব আয়োজনে বিশ্বজুড়ে ১৪০ কোটি ক্যাথলিকের নেতা পোপ উপস্থিত থাকেন এবং বহু বিশ্বাসীর সামনে নেতৃত্ব দেন।
তবে রোমের জেমেলি হাসপাতালে প্রায় ৪০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মার্চের ২৩ তারিখে বাসায় ফিরলেও চিকিৎসকেরা তাঁকে অন্তত দুই মাস জনসমক্ষে না আসার এবং বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন।
এই পরামর্শ পুরোপুরি মানেননি পোপ। গত কয়েকদিনে তিনি একাধিকবার অপ্রত্যাশিতভাবে জনসমক্ষে হাজির হয়েছেন। পাম সানডের প্রার্থনার পর তিনি উপস্থিত হন সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে—শিশুদের আশীর্বাদ দেন, ভক্তদের সঙ্গে করমর্দন করেন এবং শুভেচ্ছা জানান।
কমজোর ভঙ্গিতে, হুইলচেয়ারে করে ঘুরে বেড়ানো পোপ ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, ‘শুভ পবিত্র সপ্তাহ’। এ সময় তাঁর নাকে অক্সিজেন দেওয়ার নলও দেখা যায়নি।
গত বুধবার তিনি ব্যক্তিগতভাবে ব্রিটেনের রাজা চার্লস তৃতীয় ও রানি ক্যামিলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বৃহস্পতিবার তিনি যান সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায়, যেখানে সংস্কারকাজ ঘুরে দেখেন এবং তীর্থযাত্রীদের শুভেচ্ছা জানান। শনিবার তিনি যান সান্তা মারিয়া মাজিওর গির্জায়—যেটি তাঁর খুব প্রিয়।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় তাঁর পদত্যাগ নিয়েও গুঞ্জন ছড়ায়। তবে সুস্থ হয়ে ওঠার এই প্রক্রিয়ায় ইস্টার সপ্তাহে ঠিক কতটুকু অংশ নিতে পারবেন তিনি, সে বিষয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
তবু সাম্প্রতিক উপস্থিতিগুলোর ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত ইস্টার সানডের দিন তাঁকে কোনো না কোনোভাবে দেখা যাবে।
ভ্যাটিকানের প্রেস অফিস মঙ্গলবার জানিয়েছে, 'পোপের শারীরিক অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে। তাঁর চলাফেরা, শ্বাস-প্রশ্বাস ও কণ্ঠস্বর—সবকিছুই উন্নতি করছে।' তবে এখনও তাঁর অংশগ্রহণের ব্যাপারে কিছু বলার সময় আসেনি বলে জানানো হয়েছে।
ভ্যাটিকান জানিয়েছে, ঐতিহ্য অনুযায়ী এবারের ইস্টার সানডেতেও পোপ ‘উরবি এত ওরবি’ (শহর ও বিশ্বের প্রতি) আশীর্বাদ দেবেন। রোববার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায় সেন্ট পিটার্স বাসিলিকার বারান্দা থেকে এটি সম্প্রচার করা হবে।
তবে আশীর্বাদ পাঠ শেষে বক্তব্য তিনিই দেবেন, নাকি অন্য কাউকে দিয়ে পড়াবেন—তা এখনও নিশ্চিত নয়।
'এই আশীর্বাদ কেবলমাত্র পোপই দিতে পারেন... এটা বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী—সব মানুষের জন্য একটি প্রতীকী বার্তা,' বলেন ইতালির পুরোহিত জিওভান্নি তেরানিয়ি।
২০২৫ সাল ক্যাথলিক চার্চের জন্য একটি বিশেষ বর্ষ —‘জুবিলি ইয়ার’, যা প্রতি পঁচিশ বছরে একবার উদযাপিত হয় এবং লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী এতে অংশ নেন। ফলে এই সময়ে পোপের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তবে পবিত্র সপ্তাহের অন্যান্য আয়োজনে তিনি অংশ নেবেন কিনা—তা এখনও অনিশ্চিত। এর মধ্যে রয়েছে মণ্ডি বৃহস্পতিবারের ‘ক্রিসম মেস’, গুড ফ্রাইডের প্রার্থনা এবং রোমের কলোসিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ে অব দ্য ক্রস’, যা শুক্রবার রাতে হয়ে থাকে।
শনিবার রাতে ‘ইস্টার ভিজিল’ অনুষ্ঠিত হবে সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায়।
২০২৩ ও ২০২৪ সালে পোপ স্বাস্থ্যগত কারণে ‘ওয়ে অব দ্য ক্রস’ অনুষ্ঠানে অংশ নেননি, তবে পরদিন ইস্টার ভিজিলে উপস্থিত ছিলেন।
ইতালির এক সন্ন্যাসিনী সিস্টার এরমেলিন্দা পেত্তেনন বলেন, 'এই পবিত্র বছরের ডাক তিনিই দিয়েছেন। আর এখন প্রভু তাঁকে পরীক্ষার মুখে ফেলেছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তিনি এই কষ্টের সময়টাকে কীভাবে গ্রহণ করছেন।'