ঢাকা, ২২ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের নতুন করে আলোচনা শুরু হওয়ার আগে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণসহ পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই দেশটির।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মার্কিন হামলায় ইরানের স্থাপনাগুলোতে ‘মারাত্মক’ ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণসহ পারমাণবিক কর্মসূচি অব্যহত রাখবে।
তেহরান থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী শুক্রবার ইস্তাম্বুলে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
তেহরান ইউরোপীয় শক্তিগুলোকে ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করেছে।
গত মাসে ইসরাইলের সঙ্গে ইরানের ১২ দিনের যুদ্ধের পর এই প্রথম দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছিল।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সোমবার ফক্স নিউজের ‘ব্রেট বেয়ারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এই মুহূর্তে উইরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ আছে, কারণ হামলায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এটাকে পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া বা ত্যাগ করা আমাদের জন্য অসম্ভব। কারণ এটা আমাদের নিজস্ব বিজ্ঞানীদের অর্জন।’
তিনি বলেন, ভবিষ্যতের যে কোনও পরমাণু চুক্তিতেই ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার থাকা উচিত।
এদিকে ইরানের এই বক্তব্যের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের ইরানে হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন, ‘প্রয়োজনে ওয়াশিংটন আবারও হামলা চালাবে।’
ইরান ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানির মধ্যে ২০১৫ সালের চুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল।
তবে, ২০১৮ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে এবং পুনরায় ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে তা ভেঙে যায়।
চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে শুক্রবার ইস্তাম্বুলে আলোচনার আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই বলেছেন, চুক্তি বাস্তবায়নে অবহেলার জন্য ইউরোপীয় পক্ষগুলোকে দায়ী।
ইরান মঙ্গলবার চীন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন করবে। ওই বৈঠকে পারমাণবিক সমস্যা এবং সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বেইজিং ‘সংলাপ ও আলোচনা পুনরায় শুরু করতে এবং সকল পক্ষের বৈধ উদ্বেগ বিবেচনায় নিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে চাপ দেওয়ার জন্য গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে।’
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, তিনটি ইউরোপীয় শক্তি পারমাণবিক প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ইরানের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের হুমকি দিয়েছে।
জার্মান বলেছে, ইস্তাম্বুল আলোচনা বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে হবে। আলোচনায় ইউরোপীয় তিন দেশ বা ই৩ একটি টেকসই ও যাচাইযোগ্য কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার জন্য কাজ করবে।
জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মার্টিন গিজ বলেছেন, যদি আগস্টের শেষের মধ্যে কোন সমাধানে পৌঁছানো না যায়, তাহলে ই৩-এর জন্য স্ন্যাপব্যাকও একটি বিকল্প হিসেবে রয়ে যাবে।
২০১৫ সালের চুক্তির একটি ধারা অনুসারে, যদি তা অমান্য করা হয়, তাহলে ‘স্ন্যাপব্যাক’ পদ্ধতির মাধ্যমে ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা সম্ভব।