ঢাকা, ২৩ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : সিরিয়ায় দ্রুজ অধ্যুষিত সুয়েইদা অঞ্চলে এক সপ্তাহ ধরে চলা সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার দেশটির সরকার এই তথ্য জানিয়েছে।
এই সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৩শ’ জনের বেশি। নিহতদের অধিকাংশই দ্রুজ সম্প্রদায়ের।
দামেস্ক থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
১৩ জুলাই শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ গত সপ্তাহের শেষে একটি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হয়। প্রথমে দ্রুজ যোদ্ধা ও সুন্নি বেদুইন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলেও পরে তা রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রূপ নেয়।
বৃটেন ভিত্তিক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, সংঘর্ষে সরকারি বাহিনীর সদস্যরাও জড়িত ছিল এবং তারা বেদুইনদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সুয়েইদায় প্রবেশের সময় সেনারা স্থানীয়দের ওপর তাৎক্ষণিক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠে।
মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন ভিডিও ছড়িয়েছে যেখানে সুয়েইদায় অজ্ঞাত পরিচয়ের কিছু ব্যক্তি সরাসরি মানুষকে হত্যা করছে। সরকার এই ঘটনা খুবই কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে।
ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, সাধারণ নাগরিকদের নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটা খুবই গুরুতর অপরাধ এবং এর জন্য আইন মোতাবেক সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে।
তারা জানিয়েছে, জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে জরুরি তদন্ত শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ঘোষণা দেওয়া হয়, ‘আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়।’
অবজারভেটরির তথ্য মতে, নিহতদের মধ্যে ৫৩৩ জন দ্রুজ যোদ্ধা এবং ৩শ’ জন বেসামরিক দ্রুজ রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৬ জনকে দেশটির প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদস্যরা সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছে বলে জানানো হয়।
এছাড়া সংঘাতে ৪২৩ জন সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং ৩৫ জন বেদুইন সুন্নি নিহত হন। নিহত বেদুইনদের মধ্যে তিনজন বেসামরিক ব্যক্তি, যাদের দ্রুজ যোদ্ধারা বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে বলে অবজারভেটরি জানায়।
সংস্থাটি আরও জানায়, দ্রুজদের সমর্থনে ইসরাইলি বিমান হামলায় ১৫ জন সিরীয় সরকারি সেনা নিহত হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সুয়েইদায় সামরিক পোশাক পরা একটি অজ্ঞাত গোষ্ঠীর দ্বারা সংঘটিত ‘গুরুতর ও ভয়াবহ’ অপরাধের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে বলা হয়, একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে যা সংশ্লিষ্টদের পরিচয় ও ঘটনার পিছনের কারণ খতিয়ে দেখবে।
তারা আরও জানায়, ‘বহিরাগত কিছু গোষ্ঠী সুয়েইদায় উপস্থিত ছিল এবং প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে।’
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মুরহাফ আবু কাসরা বলেছেন, ‘অপরাধে জড়িত যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমনকি তারা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও যুক্ত থাকলেও ছাড় পাবে না।’
মঙ্গলবারই আরেক তদন্ত কমিটি মার্চ মাসে আলাওয়ি সম্প্রদায়ের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সংঘটিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়, ঘটনাগুলোর সঙ্গে কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য জড়িত ছিল বলে শনাক্ত করা গেছে।
গত রোববার থেকে সুয়েইদায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর পর বেদুইন ও উপজাতি যোদ্ধারা শহর ছেড়ে চলে গেলে দ্রুজ যোদ্ধারা পুনরায় নিয়ন্ত্রণ নেয়। পাশাপাশি সরকারি বাহিনী প্রদেশের কিছু অংশে অবস্থান নেয়।
এদিকে জাতিসংঘ মঙ্গলবার জানিয়েছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা সুয়েইদা থেকে নিজেদের কর্মী ও তাদের পরিবারকে সরিয়ে নিচ্ছে। একইসঙ্গে শহরটির জন্য সিরিয়ান রেড ক্রিসেন্টকে নতুন একটি ত্রাণ চালান হস্তান্তর করেছে।