ঢাকা, ২৭ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ফন ডার লায়েন রোববার স্কটল্যান্ডে সাক্ষাৎ করছেন ট্রান্সআটলান্টিক বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই সমঝোতার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ বলে উল্লেখ করেছেন।
যুক্তরাজ্যের টার্নবেরি থেকে এএফপি জানায়, ইতোমধ্যে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। ১ আগস্টের মধ্যে চুক্তি না হয়, তাহলে তিনি একাধিক দেশের ওপর দণ্ডমূলক শুল্ক আরোপ করবেন। যার মধ্যে ইইউ-ও রয়েছে। তাদের পণ্যের ওপর সর্বব্যাপী ৩০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে।
ভন ডার লেইনের নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয় কমিশন, ইইউ’র ২৭টি দেশের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং বছরে আনুমানিক ১.৬ ট্রিলিয়ন ইউরো (১.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যের বাণিজ্য রক্ষার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
ব্রাসেলস ইউরোপের রাজধানীগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করেছে। যদি ট্রাম্প ও ফন ডার নায়েন একমত হতে পারেন, তাহলে ইউরোপীয় কূটনীতিকেরা দ্রুত একত্রিত হয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন।
স্কটল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে টার্নবেরিতে ট্রাম্পের একটি বিলাসবহুল গলফ রিসোর্টে স্থানীয় সময় বিকাল ৪:৩০টায় (১৫৩০ জিএমটি) এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শুক্রবার ৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্প আগমনের সময় বলেন, তিনি আশা করছেন ইইউ’র সঙ্গে ‘সবচেয়ে বড় চুক্তিটি’ করবেন। ভন ডার লেইনকে শুধু ‘উরসুলা’ বলে সম্বোধন করে ট্রাম্প তাকে ‘একজন অত্যন্ত সম্মানিত নারী’ হিসেবে প্রশংসা করেন। যা তার পূর্বের সেই শত্রুভাবাপন্ন অবস্থান থেকে অনেকটাই ভিন্ন। যখন তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে ইইউ মূলত ‘যুক্তরাষ্ট্রকে ঠকানোর জন্যই তৈরি’।
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় আমাদের ৫০-৫০ সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করেন যে এখনো ‘২০টি বিষয়’ রয়ে গেছে, যেগুলোতে মতভেদ রয়েছে। ইউরোপীয় কমিশন বৃহস্পতিবার জানায়, তারা মনে করে একটি সমঝোতা ‘কাছাকাছি’ রয়েছে।
ইউরোপীয় কূটনীতিকদের মতে, আলোচনায় থাকা প্রস্তাবিত চুক্তিতে ইইউ থেকে আমেরিকায় রপ্তানির ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা রয়েছে। যা জাপানের সঙ্গে হওয়া চুক্তির সমতুল্য। তবে এর বাইরে থাকবে বিশেষ কিছু খাত যেমন বিমান, কাঠ এবং মদ ব্যতীত অন্যান্য মদ্যপ পণ্য।
ইইউ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনা আরও বাড়াতে প্রতিশ্রুতি দেবে এবং আরও কিছু বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।
ইউরোপীয় পক্ষ চায়, ইস্পাত রপ্তানিতে একটি নির্দিষ্ট কোটা নির্ধারণ হোক, যার অতিরিক্ত অংশের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন একাধিক দফায় শুল্কের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে, গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ৫০ শতাংশ এবং সর্বব্যাপী ১০ শতাংশ যা চুক্তি না হলে বেড়ে ৩০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
ইইউ তাদের ধীরগতির অর্থনীতিকে আরও ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে এই শুল্ক এড়াতে চুক্তির চেষ্টা করছে এবং প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপকে শেষ উপায় হিসেবে দেখছে।
তবে যদি আলোচনা ব্যর্থ হয়, তাহলে ইইউ ইতোমধ্যে ১০৯ বিলিয়ন ডলারের (৯৩ বিলিয়ন ইউরো) মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপে সম্মতি দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বিমান ও গাড়ি। যা ধাপে ধাপে ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। পাশাপাশি ইউরোপীয় কমিশন মার্কিন সেবা খাতেও পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার তালিকা তৈরি করছে।
ফ্রান্সসহ কিছু দেশ বলছে, ব্রাসেলস যেন মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য ইউরোপীয় বাজার ও সরকারি চুক্তিতে প্রবেশ সীমিত করতে পারে। যাকে অনেকে ‘ট্রেড বাজুকা’ (বাণিজ্যিক কামান) হিসেবে উল্লেখ করছে, যদিও সেটি হবে একটি বড় ধরনের উত্তেজনা বৃদ্ধির পদক্ষেপ।
ট্রাম্প তার ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে বৈশ্বিক বাণিজ্য পুনর্গঠনের একটি অভিযানে নেমেছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জনমত বলছে যে জনগণ তার কৌশল নিয়ে আশ্বস্ত নয়। গ্যালাপের সাম্প্রতিক জরিপে তার জনপ্রিয়তা মাত্র ৩৭ শতাংশ— জানুয়ারি থেকে ১০ পয়েন্ট কম।
‘৯০ দিনে ৯০টি চুক্তির’ প্রতিশ্রুতি দেওয়া ট্রাম্প এখন পর্যন্ত ব্রিটেন, জাপান ও ফিলিপাইনের মতো কয়েকটি দেশের সঙ্গে মাত্র পাঁচটি চুক্তি সম্পন্ন করেছেন।
ইইউ’র সঙ্গে একটি বড় ধরনের চুক্তি তার ‘চুক্তিবাজ’ পরিচিতিকে শক্তিশালী করতে পারে। এটি জেফ্রি এপস্টেইন কেলেঙ্কারি থেকে মনোযোগ সরানোর একটি উপায়ও হতে পারে।
যিনি একজন ধনকুবের ও যৌন পাচার মামলার আসামি ছিলেন এবং ২০১৯ সালে বিচার শুরুর আগেই কারাগারে মারা যান।
এক সময় ট্রাম্পসহ নিউইয়র্কের উচ্চবিত্ত মহলের অনেকেই এপস্টেইনের বন্ধু ছিলেন, তবে এখন ট্রাম্প তার নিজ দলের (মাগা) সমর্থকদের চাপের মুখে রয়েছেন। যারা চাইছেন এপস্টেইনের মামলার নথিপত্র উন্মুক্ত হোক।