ঢাকা, ২৭ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ফেডারেল রিজার্ভ) তাদের আসন্ন বৈঠকে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জোরালো চাপের মধ্যেও ফেডের নীতিনির্ধারকরা তাদের স্বাধীন অবস্থান বজায় রাখতে সচেষ্ট।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে।
স্বাধীন সংস্থা ফেডারেল রিজার্ভ বছরের শুরু থেকে মূল সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছে। কারণ তারা নজর রাখছে ট্রাম্পের বিস্তৃত শুল্কনীতির প্রভাব কীভাবে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে পড়ছে।
ট্রাম্পের অস্থির ও কখনো শিথিল, কখনো কঠোর শুল্কনীতির ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর এর প্রভাব কিছুটা দেরিতে প্রকাশ পাচ্ছে। আর তাই ফেড কর্মকর্তারা গ্রীষ্মের অর্থনৈতিক উপাত্ত দেখে বোঝার চেষ্টা করছেন যে মূল্যস্ফীতি কোন দিকে যাচ্ছে।
সুদের হার পরিবর্তনের সময় ফেডারেল রিজার্ভ সাধারণত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কর্মসংস্থান বাজারের স্থিতিশীলতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে চায়। এবারের বৈঠক মঙ্গলবার ও বুধবার অনুষ্ঠিত হবে।
তবে এই তথ্যনির্ভর নীতিগত অবস্থান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করেছে। সুদের হার আরও না কমানোয় তিনি একাধিকবার ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে ‘বোকার হদ্দ’ ও ‘মূর্খ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সম্প্রতি, ট্রাম্প ফেডের ২.৫ বিলিয়ন ডলারের সংস্কার প্রকল্পকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে পাওয়েলকে বরখাস্ত করার ইঙ্গিত দেন। তবে শেষ পর্যন্ত তা থেকে সরে এসে বলেন, এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা কম।
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ফেডের নির্মাণস্থল পরিদর্শনে গিয়ে এক উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশে পাওয়েলের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে ক্যামেরার সামনেই পাওয়েল সংস্কারের মোট খরচ নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যকে খণ্ডন করেন।
তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, রাজনৈতিক চাপে না পড়ে ফেড তাদের নিজস্ব বিশ্লেষণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে।
অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের প্রধান মার্কিন অর্থনীতিবিদ রায়ান সুইট বলেন, ‘আমরা এখনই শুল্কের প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে দেখতে শুরু করেছি।’
তিনি এএফপিকে বলেন ‘জুলাই ও আগস্টে আরও প্রমাণ আসবে এবং সেটাই ফেডকে সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকার যুক্তি দেবে’।
গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট পদে ফেরার পর, ট্রাম্প প্রায় সব দেশের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, পাশাপাশি স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়ির ওপর আরও বেশি শুল্ক বসিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত এদের প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে সীমিত ছিল, যা ট্রাম্প সুদের হার তিন শতাংশ কমানোর দাবির ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করছেন।
বর্তমানে ফেডের বেঞ্চমার্ক সুদের হার ৪.২৫ শতাংশ থেকে ৪.৫০ শতাংশ রেঞ্জে রয়েছে।
ট্রাম্প আরও যুক্তি দিচ্ছেন, সুদের হার কমালে সরকার ঋণের সুদ বাবদ খরচ কমাতে পারবে। একপর্যায়ে তিনি পাওয়েলকে বরখাস্ত করার কথাও বলেন যা বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।
অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের বিশ্লেষক সুইট বলেন, ‘পাওয়েল দেখতে পাচ্ছেন প্রশাসন এক ধরনের পরীক্ষামূলক বার্তা ‘পরীক্ষামূলক বেলুন’ ছুড়েছিল তাকে সরিয়ে দেওয়ার, পরে বাজারের প্রতিক্রিয়ায় তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘এটি দেখিয়েছে যে বাজার একটি স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল্য বোঝে। তার মতে, এখন পাওয়েল কর্মসংস্থান খাতের অবস্থানকে বেশি গুরুত্ব দেবেন। পাওয়েলের মেয়াদ শেষ হবে মে ২০২৬ সালে।’
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি ফেড টানা পঞ্চমবারের মতো সুদের হার অপরিবর্তিত রাখে, তবে কিছু সদস্য হয়তো দ্বিমত পোষণ করতে পারেন।
সুইট সতর্ক করে বলেন, এই দ্বিমতগুলো অনেকে পাওয়েলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে ব্যবহার করতে পারেন। যদিও এটি সবসময় সঠিক ব্যাখ্যা নাও হতে পারে।
ন্যাশনওয়াইডের প্রধান অর্থনীতিবিদ ক্যাথি বস্তজানচিক বলেন, ‘এমন অনিশ্চিত সময়ে বা নীতিগত পরিবর্তনের সম্ভাবনার সময় ১-২ জনের দ্বিমত অস্বাভাবিক নয়।
ফেড গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার এবং উপ-চেয়ার মিশেল বোম্যান ইতোমধ্যে জুলাইয়েই হার কমাতে আগ্রহ দেখিয়েছেন, তাই তারা ভিন্নমত দিলেও বাজারে তা বিস্ময় তৈরি করবে না।
বস্তজানচিক আরও বলেন, ‘যদি দ্বিমতের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়, তাহলে হয়তো কেউ কেউ ভাবতে পারেন পাওয়েল বোর্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন, তবে আমি মনে করি না এমনটা ঘটবে।
সুইটের মতে, ‘সবচেয়ে বড় অজানা বিষয় হচ্ছে শ্রমবাজার।
ব্যক্তিগত খাতে দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে, নিয়োগের হার গড়ের চেয়ে নিচে এবং স্থায়ীভাবে চাকরি হারানো মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
তিনি বলেন, ‘শ্রমবাজারে কিছু চির ধরেছে, তবে এখনো তা ভয়াবহ সংকটে পরিণত হয়নি।
যদি হঠাৎ করে শ্রমবাজার দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে ফেড দ্রুত সুদের হার কমাতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।