ঢাকা, ২৭ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : রুয়ান্ডা-সমর্থিত এম২৩ বিদ্রোহীদের সঙ্গে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের (ডিআর কঙ্গো) সাম্প্রতিক একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি, যা এ সপ্তাহে কার্যকর হওয়ার কথা, দেশের সংঘাতপীড়িত পূর্বাঞ্চলে শান্তির পথে এক প্রাথমিক ও ভঙ্গুর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কিনশাসা থেকে এএফপি জানায়, চলতি বছরের ১৯ জুলাই কাতারের দোহায় স্বাক্ষরিত চুক্তিতে উভয় পক্ষই ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতি’ এবং ‘সংলাপ ও আলোচনার’ মাধ্যমে শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত জনগণের ‘স্বেচ্ছামূলক’ প্রত্যাবাসনের প্রতিশ্রুতি দেয়।
তবে বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন যে খনিজ-সমৃদ্ধ এই অঞ্চলে শান্তি প্রক্রিয়া এখনও খুব ভঙ্গুর এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের ঘাটতি রয়েছে।
গোমা ও বুকাভু শহর নিয়ে চলমান সংঘর্ষে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন এবং অনেক হাজার বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবিক সংকটে পড়েছেন।
রুয়ান্ডার সীমান্তবর্তী ও খনিজ-সমৃদ্ধ পূর্ব কঙ্গো গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সংঘাতে জর্জরিত।
২০২১ সালে এম২৩ গোষ্ঠীর পুনরুত্থানের মধ্য দিয়ে সংকট নতুন মাত্রা পায় এবং চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে গোষ্ঠীটি গোমা ও বুকাভু দখল করে নিজস্ব প্রশাসন গড়ে তোলে।
কিনশাসা আগে এম২৩-এর সঙ্গে সরাসরি সংলাপ প্রত্যাখ্যান করেছিল। আঙ্গোলার মধ্যস্থতায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
তবে কাতারের আকস্মিক উদ্যোগে মধ্য মার্চে দোহায় কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স চিসেকেদি এবং রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামের বৈঠক সম্ভব হয়।
এক রুয়ান্ডার কূটনৈতিক সূত্র জানায়, উভয় নেতা সরাসরি ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হন, ‘এই সিদ্ধান্তই পুরো প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়।’
সূত্রটি আরও জানায়, এরপর কঙ্গো ও রুয়ান্ডার মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় ট্র্যাক এবং কঙ্গো ও এম২৩-এর মধ্যে একটি অভ্যন্তরীণ ট্র্যাক শুরু হয়।
‘এরপর যুক্তরাষ্ট্র এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে মূলত দ্বিপাক্ষিক দিকটি নিয়ন্ত্রণে নেয়।’
এম২৩-এর অগ্রযাত্রা ঠেকাতে বিদেশি সমর্থন চাইতে গিয়ে চিসেকেদি মার্চের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি খনিজ চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন।
২৮ জুন কঙ্গো ও রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ওয়াশিংটনে একটি ‘শান্তিচুক্তি’ স্বাক্ষর করেন।
১৭ জুলাই, ডিআর কঙ্গো সরকার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোবোল্ড মেটালস-এর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এতে প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ-পূর্ব কঙ্গোয় একটি লিথিয়াম খনি উন্নয়ন এবং ভূতাত্ত্বিক তথ্য ডিজিটাইজেশনে বিনিয়োগে সম্মত হয়।
এরপর প্রেসিডেন্ট চিসেকেদি এম২৩-এর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে রাজি হন, যা আগেই তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় দোহা চুক্তি হয়।
দোহা চুক্তিতে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর পূর্ব কঙ্গোতে কঙ্গো সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার রোডম্যাপের কথা বলা হয়েছে।
তবে শিগগিরই মতবিরোধ দেখা দেয়। ডিআর কঙ্গো সরকারের মুখপাত্র প্যাট্রিক মুইয়ায়া এম২৩-এর ‘তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার’-এর কথা বললে এম২৩-এর রাজনৈতিক শাখা অ্যাফ্রিকান কঙ্গো রিভার অ্যালায়েন্স (এএফসি) তা প্রত্যাখ্যান করে।
এএফসি মুখপাত্র লরেন্স কানিউকা এএফপিকে বলেন, ‘চুক্তির কোথাও বলা হয়নি যে এম২৩ বা এএফসি ‘মুক্ত অঞ্চল’ থেকে সরবে।”
এই কথার লড়াই ‘দুই পক্ষের মধ্যেই আবার সংঘাতে জড়ানোর ইচ্ছার ইঙ্গিত দেয়,’ বলেন কঙ্গোর ইবুটেলি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ফ্রেড বাউমা।
বাউমা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার এবং কিছুটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপ ছাড়া শুধু সংলাপের মাধ্যমে এই সংঘাতের অবসান কঠিন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুয়ান্ডা এম২৩-কে সমর্থনে ডিআর কঙ্গোতে সেনা পাঠিয়েছে এবং অস্ত্র ও প্রযুক্তি সরবরাহ করেছে।
রুয়ান্ডা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা শুধু পূর্ব কঙ্গোয় হুতু সশস্ত্র গোষ্ঠী এসডিএলঅঅর-এর বিরুদ্ধে ‘আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা’ নিচ্ছে, এই গোষ্ঠী ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডার গণহত্যার হুতু নেতৃত্বের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।
চুক্তিটি এখনও সংঘাত থামাতে পারেনি। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার এম২৩ ও কিনশাসা-সমর্থিত গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াইয়ে অন্তত ১১ জন নিহত হন। উভয় পক্ষই একে অপরকে দায়ী করে।
চুক্তি অনুযায়ী, কিনশাসা ও এম২৩ নিজেদের ২৯ জুলাইয়ের মধ্যে ঘোষণার বাস্তবায়ন এবং ৮ আগস্টের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তির আলোচনায় বসার কথা বলেছে, যা ১৭ আগস্টের মধ্যে স্বাক্ষরিত হবে।
তবে বিশ্লেষকেরা এই সময়সীমাকে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত মনে করছেন এবং যথেষ্ট আমেরিকান কূটনৈতিক চাপ ছাড়া এগুলো অর্জন কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেছেন কঙ্গো রাজনীতি বিশ্লেষক ক্রিশ্চিয়ান মোলেকা।
তার মতে, এম২৩ পুরোপুরি দখলকৃত এলাকা থেকে সরে যেতে ‘ছয় থেকে আট মাস বা এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।’