ঢাকা, ৩১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত এক বছরে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে গত এক বছরে তাঁর মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘দেখতে দেখতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রায় এক বছর হয়ে গেল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার অসীম আত্মত্যাগের উপর দাঁড়িয়ে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে আইন মন্ত্রণালয় গত একবছরে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, আইন সংস্কার হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩ সংশোধন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ-২০২৫ প্রণয়ন, দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন, আইনগত সহায়তা প্রদান আইন সংশোধন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী বিধান যুক্ত করা হয়েছে। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ প্রণয়ন করে পূর্বের সাইবার নিরাপত্তা আইনের নিপীড়নমূলক ধারাগুলো এবং এসবের অধীনে দায়ের হওয়া মামলাগুলো বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা ও বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালা সংশোধন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার হিসেবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের পদ সৃজনের ক্ষমতা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উপর ন্যস্ত করে ‘বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা, ২০২৫’ এবং জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের সরকারের আইন ও বিচার বিভাগে পদায়নের সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের সকল আদালত প্রাঙ্গণে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। আদালতে দক্ষ কর্মচারী নিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগের কার্যক্রম চালু করার জন্য নীতিমালা প্রস্তুত হয়েছে।
দুর্নীতি প্রতিরোধে অধস্তন আদালতের বিচারকদের সম্পত্তির হিসাব গ্রহণ এবং সংগৃহীত হিসাবের নথিসমূহ পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, সাব-রেজিস্ট্রারদের জন্য ব্যক্তিগত তথ্য বিবরণী তৈরি করা হয়েছে। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার উপর সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের প্রসিকিউশন কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে।
বিচার কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করার অনেক উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন সেবাকে শতভাগ অনলাইন প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করা হয়েছে। বিচারপ্রার্থী জনগণের জামিনপ্রাপ্তি সহজীকরণের লক্ষ্যে অনলাইনে বেইলবন্ড জমা দেওয়ার নিমিত্ত প্রথমবারের মতো সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হয়েছে। শীঘ্রই পরীক্ষামূলকভাবে সফটওয়্যারটির ব্যবহার শুরু হবে।
রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, জেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটি এবং আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক এজাহার, চার্জশিটসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনার পর ১৫ হাজারেরও বেশি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া সাইবার আইনের অধীনে ৪০৮টি স্পিচ অফেন্স সংক্রান্ত মামলা এবং জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে দায়ের করা ৭৫২টি হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব মামলা প্রত্যাহারের কারণে কয়েক লক্ষ রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও স্বাধীন মতের মানুষ হয়রানি থেকে রেহাই পেয়েছে।
আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমান সরকারের কার্যকালে আইন মন্ত্রণালয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রমে লক্ষণীয় গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন- গত এক বছরে মন্ত্রী পর্যায়ে নিষ্পত্তিকৃত নথির সংখ্যা ১ হাজার ২৮৩টি, বিগত সরকারের একই সময়ে ৮৩৪টি নথি নিষ্পত্তি হয়েছিলো। গত এক বছরে আইন মন্ত্রণালয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগসহ অন্যান্য দপ্তরে ৩৯১টি বিষয়ে আইনি মতামত প্রদান করেছে (গত সরকারের আমলে ছিল ১৮০টি)। এসময়ে সনদ, এফিডেভিট, দলিলসহ ৩৬ ধরনের মোট ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫৪৪টি ডকুমেন্ট সত্যায়ন হয়েছে যা আগের তুলনায় দ্বিগুণ।
নতুন দায়িত্ব হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশন, গুম সংক্রান্ত অপরাধ তদন্ত কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে আইন মন্ত্রণালয় থেকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো বিধিমালা ও প্রবিধানগুলোকে কোডিফাই করার কাজ শুরু হয়েছে। সারাদেশের বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে ৪ হাজার ৮৮৯ জন সরকারি আইন কর্মকর্তা এবং অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে ২৭৪ জন অ্যাটর্নিকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক ও প্রসিকিউটর নিয়োগ করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে পাঁচজন বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগে ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগে সাচিবিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।