শিরোনাম
ঢাকা, ৭ অক্টোবর, ২০২৩ (বাসস) : রাজধানীর খিলগাঁওয়ের দক্ষিণ বনশ্রী কাজীবাড়ী টিএন্ডটি টাওয়ার এলাকা থেকে এক নারীসহ অপহরণ চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)।
গ্রেফতারকৃত অপহরণ চক্রের সদস্যরা হলেন- বিলকিস ওরফে তানিয়া (৩০), মো. বিপ্লব (৩০), ইব্রাহিম হোসেন রাজু (২৯), লিংকন খলিফা (২৪) ও আমির শেখ (৩০)। আটককৃতরা বাগেরহাট জেলার চিতলমারী থানার শিবপুর, কলিগাতী, আদুয়াবর্পী চড়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
আজ শনিবার এন্টি টেররিজম ইউনিট এটিউই’র (মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইং) পুলিশ সুপার (অপারেশনস্) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বাসসকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত পৌঁনে ১১ টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) একটি চৌকস দল খিলগাঁও থানার দক্ষিণ বনশ্রী কাজীবাড়ী টিএন্ডটি টাওয়ার এলাকায় সাড়াশি অভিযান চালিয়ে এক নারীসহ অপহরণ চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
তিনি জানান, গ্রেফতারকালে তাদের কাছ থেকে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত ৬টি মোবাইল ফোন, নগদ ৪০ হাজার টাকা, লাঠি, হাতুড়ি ও রশি উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে, আজ শনিবার সন্ধ্যায় এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)’র (ল’ অ্যান্ড মিডিয়া) শাখার সিনিয়র এএসপি ওয়াহিদা পারভীন অপহরণ ঘটনার বিবরণ ও প্রতারনার কৌশল উল্লেখ করে বাসসকে জানান, ঘটনার এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের গ্রেফতারকৃত বিলকিস ওরফে তানিয়ার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয়। এরপর থেকে গ্রেফতারকৃত বিলকিস ওরফে তানিয়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়াসহ বিভিন্ন অযুহাতে ফেসবুকের মাধ্যমে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকে। পরে গত বৃহস্পতিবার সকালে ওই শিক্ষক তার এক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে খিলগাঁও থানার রামপুরা বনশ্রী এলাকায় যান। সেখানে অবস্থানকালে গ্রেফতারকৃত বিলকিস ওরফে তানিয়া বাউবি’তে ভর্তির বিষয়ে কথা বলতে চায় বলে ওই শিক্ষককে খিলগাঁও থানার দক্ষিণ বনশ্রী ১০ তলা মার্কেটের সামনে ডেকে নেয়। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক সেখানে গেলে গ্রেফতারকৃত বিলকিস তাকে খিলগাঁও দক্ষিণ বনশ্রীতে তার বাসায় যেতে বললে তিনি সেখানে যেতে অনীহা প্রকাশ করেন। তখন বিলকিস সেখানে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা গ্রেফতারকৃত অপরাপর আসামীদের সহযোগিতায় ওই শিক্ষককে জোরপূর্বক অপহরণ করে দক্ষিণ বনশ্রী কাজীবাড়ী টিএন্ডটি টাওয়ার এলাকার একটি বাসার ৬ষ্ঠ তলার ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। সেখানে আসামীরা ভুক্তভোগীকে হত্যার হুমকি দিয়ে হাত-পা বেঁধে লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে তার উপর অকথ্য নিযার্তন চালায় এবং অপহৃতের কাছে থাকা নগদ ৩ হাজার টাকা ও বিকাশ একাউন্টে থাকা ২০ হাজার টাকা নিয়ে নেয়।
ঘটনার বিবরণ ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, আসামীরা ভুক্তভোগীকে নগ্ন করে মোবাইল ফোনে তার আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে এবং তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। নির্যাতন থেকে বাচঁতে হলে গ্রেফতারকৃত অপহরণ চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীকে তার পরিবারের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ এনে দিতে বলে। ভুক্তভোগী বাধ্য হয়ে তার বোন জামাইকে নিজের প্রয়োজনের কথা বলে আসামীদের দেয়া বিকাশ নম্বরে ২ লাখ টাকা পাঠাতে বলেন। ভুক্তভোগীর ফোন বন্ধ থাকায় এবং তিনি বাসায় না ফেরায় তার বোন জামাইয়ের সন্দেহ হলে তিনি এ বিষয়ে শুক্রবার রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন।
এটিইউ পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, শুক্রবার আসামীদের নিযার্তন থেকে বাচঁতে অপহৃত ব্যক্তি নিজের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে পূনরায় ২ লাখ টাকা পাঠাতে বললে ভুক্তভোগীর বোন জামাই বিকাশের মাধ্যমে দুই দফায় মোট ৪৫ হাজার টাকা পাঠান। মুক্তিপণের টাকা পাঠানোর পরও অপহৃত ব্যক্তি ফিরে না আসায় এবং সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা আরো মুক্তিপণ দাবী করতে থাকায় ভুক্তভোগীর আত্মীয়-স্বজন বিষয়টি এন্টি টেররিজম ইউনিটকে অবহিত করে।
এটিইউ সূত্র আরো জানান, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে নামে এটিইউ’র একটি চৌকস দল। গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ ও নজরদারীর ভিত্তিতে অপহরণচক্র ও ভিকটিমের অবস্থান সনাক্ত করে খিলগাঁও থানা পুলিশের সহায়তায় খিলগাঁও থানার দক্ষিণ বনশ্রী কাজীবাড়ী টিএন্ডটি টাওয়ার এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে অপহৃত ভিকটিমকে উদ্ধার এবং এক নারীসহ অপহরণ চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় তারা।
তাদেরকে জিঙ্গাসাবাদ শেষে ডিএমপির খিলগাঁও থানায় সোপর্দ করা হয়েছে এবং এবিষয়ে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান এটিইউ পুলিশের এ কর্মকর্তা।