শিরোনাম
ঢাকা, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক, বাংলাদেশ ২০২৩ গবেষণা ফল প্রকাশিত হয়েছে। সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৭২। গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক : এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ বাস্তবায়ন প্রতিবেদন, বাংলাদেশ ২০২৩’ বিষয়ক ওয়েবিনারে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রোববার এই ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল এর সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে)এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, , গ্লোবাল সেন্টার ফর গুড গভার্নেন্স ইন টোব্যাকো কন্ট্রোল (জিজিটিসি) এর হেড অব গ্লোবাল রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ড. মেরি আসুন্তা , ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস টকনিক্যাল অ্যাডভাইজার বাংলাদেশ এর সৈয়দ মাহবুবুল আলম, আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বক্তব্য রাখেন। আত্মা’র কনভেনর মতুর্জা হায়দার লিটন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। প্রজ্ঞা’র কোঅর্ডিনেটর নাফিউর আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রজ্ঞা’র কর্মসূচি প্রধান মো: হাসান শাহরিয়ার।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আইন শক্তিশালীকরণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও আইন সংশোধনে এত সময় লাগছে কেন। আমরা বলি স্বাস্থ্যখাতে আমাদের অর্জন অনেক। তাহলে তামাকের কারণে এত মানুষ মারা যায়, আমরা কেন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারিনা। জনস্বাস্থ্যকে আমাদের প্রাধান্য দিতে হবে।’
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার করতে হবে। তামাক কোম্পানিকে পুরস্কৃত করা যাবেনা এবং সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। কয়েক বছর ধরেই আমরা এসব বলে আসছি, কিন্তু কাজ হচ্ছেনা। হয়ত একসময় আমাদের নীতিনির্ধারক ও সরকারি দপ্তরগুলোতে যারা আছেন তারা আমাদের কথা শুনবেন।’
হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, ‘আইন সংশোধন প্রক্রিয়ায় আমরা অনেকটাই অগ্রগতি লাভ করেছি। তবে তামাক কোম্পানিগুলো বার বার বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’
মেরি আসুন্তা বলেন, ‘স্পষ্টতই বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো এশিয়া এবং বাংলাদেশকে তাদের মুনাফা বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে পেতে চায়। কাজেই মুনাফা হুমকিতে পড়ে, এমন যেকোনো সরকারি পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ ও বিরোধিতা করবে তারা। তবে সরকার জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে বাধ্য, মৃত্যুবিপণনকারী কোন শিল্পকে নয়।
গবেষণার সুপারিশে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপমুক্ত থেকে আইন সংশোধনের পাশাপাশি ডব্লিউএইচও এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ প্রতিপালনে সচেতনতা সৃষ্টি, তামাক কোম্পানির সাথে যোগাযোগ বা আলোচনার ক্ষেত্রে আর্টিক্যাল ৫.৩ এর আলোকে আচরণবিধি চূড়ান্ত করা, তামাক খাতে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ করা, ১৯৫৬ সালের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে সিগারেটকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া, তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার, এবং একটি সহজ তামাককর ও মূল্য নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়া হয়েছে।
এবছর বিশ্বের ৯০টি দেশে এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। সরকারসমূহ তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ কিভাবে আমলে নেয় এবং হস্তক্ষেপ মোকাবিলায় কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তা এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ গাইডলাইনের আলোকে মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে এই গবেষণার মাধ্যমে। স্কোর যত কম, হস্তক্ষেপ তত কম। তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের বৈশ্বিক সূচক ২০২৩ অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো করেছে ব্রুনাই (স্কোর ১৪) এবং সবচেয়ে খারাপ করেছে ডোমিনিকান রিপাবলিক (স্কোর ১০০)।
প্রজ্ঞা ২০১৮ সাল থেকে ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক, বাংলাদেশ’ প্রকাশ করে আসছে। ব্লুমবার্গ ফিল্যানথ্রপিস এর সহায়তায় এই গবেষণা কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেছে সাউথইস্ট এশিয়া টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যালায়েন্স (সিটকা) এবং গ্লোবাল সেন্টার ফর গুড গভার্নেন্স ইন টোব্যাকো কন্ট্রোল (জিজিটিসি)।