বাসস
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:০৬

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

সিলেট, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ (বাসস): বর্ষীয়ান পার্লামেন্টারিয়ান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৭ সালের (৫ ফেব্রুয়ারি) এই দিনে ৭২ বছর বয়সে তিনি পরলেক গমন করেন।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার সিলেট, রাজধানী ঢাকায় ও তার নিজ এলাকা সুনামগঞ্জ ও দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি শ্রদ্ধা ভালোবাসায় পালন করা হয়েছে।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও প্রখ্যাত পার্লামেন্টারিয়ানের নাম। প্রায় ৫ দশকের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে স্বাধীন দেশের প্রথম সংসদ সদস্যসহ ৭ বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ১৯৪৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলাধীন আনোয়ারপুর গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ডা. দেবেন্দ্র নাথ সেনগুপ্ত ও মাতা সুমতি বালা সেনগুপ্ত। 
ষাটের দশকে বাম রাজনীতির মাধ্যমে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সক্রিয় রাজনীতির শুরু। আইয়ুব-মোনায়েম বিরোধী উত্তাল আন্দোলনে ছিলেন সামনের সারিতে। ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রাজপথ কাঁপিয়েছেন। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ হয় তার। এগার দফা, ছয় দফা আন্দোলন, সত্তরে ন্যাশনাল আসেম্বলির সদস্য, সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তিনি। সত্তরের প্রাদেশিক পরিষদে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন অন্যতম কনিষ্ঠ সদস্য। সাম্যবাদী দর্শনে দীক্ষা নিয়ে ছাত্রাবস্থায় রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন এই প্রবীণ নেতা। 
১৯৬৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) পিকিং ও মস্কো ধারায় দুই বিভক্ত হলে মাওলানা ভাসানীকে ত্যাগ করে সুরঞ্জিত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন অংশে যোগ দেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বাইরে ন্যাপ থেকে জয়ী হয়ে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ন্যাপের কেন্দ্রীয় কমিটি, এরপর একতা পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি হয়ে পরে নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। আপাদমস্তক রাজনীতিক হিসেবে সেক্যুলার ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনা ধারণ করেছেন সব সময়ই। 
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তিনি দেখেছেন খুব কাছে থেকে। লালন করেছেন তার রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণাকে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামীদ খান ভাসানীর রাজনৈতিক প্রভাব ছিল তার জীবনে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ৫ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। 
তিনি মহাজোট সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর রেলমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। এর কিছুদিন পরে তিনি এপদ থেকে পদত্যা করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে তার মন্ত্রীসভায় রেখে দেন। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সম্মেলন তিনি পুনরায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। 
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ৫ ফেব্রুয়ারি রোববার ভোররাত ৪টা ২৪ মিনিটে ৭২ বছর বয়সে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরলোক গমন করেন। সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের  মৃত্যুর পর তাঁর নির্বাচনী এলাকা (দিরাই-শাল্লা) আসনে একবার উপ নির্বাচন ও দুইবার সাধারন নির্বাচনে স্ত্রী জয়া সেন গুপ্ত এমপি হিসাবে জয়ী হয়ে বর্তামনে এপদে দায়িত্বরত আছেন।