বাসস
  ০৪ মার্চ ২০২৪, ১৮:১৩
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৪, ২২:২৪

জাকের-মাহমুদুল্লাহর দুর্দান্ত ইনিংসের পরও তীরে এসে তরি ডুবলো বাংলাদেশের

সিলেট, ৪ মার্চ ২০২৪ (বাসস) : জাকের আলি ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দুর্দান্ত ইনিংসের পরও শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে তীরে এসে তরি ডুবলো বাংলাদেশের। জয়ের সুযোগ তৈরি করেও মাত্র ৩ রানে ম্যাচ হারলো টাইগাররা। শ্রীলংকার করা ৩ উইকেটে ২০৬ রানের জবাবে ৮ উইকেটে ২০৩ রান করে বাংলাদেশ। জাকের ৩৪ বলে ৬৮ এবং মাহমুদুল্লাহর ৩১ বলে ৫৪ রানের পরও হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। 
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলামের করা ইনিংস প্রথম বলেই বাউন্ডারি আদায় করে নেন শ্রীলংকার ওপেনার আবিস্কা ফার্নান্দো। শরিফুলের পরের বলে উইকেটরক্ষক লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে নিয়ে সাজঘরে ফিরেন ৪ রান করা আবিস্কা।
দ্বিতীয় উইকেটে ২৫ বলে ৩৩ রান যোগ করেন আরেক ওপেনার কুশল মেন্ডিস ও কামিন্দু মেন্ডিস। পঞ্চম ওভারে দ্বিতীয়বারের মত বোলিংয়ে এসে ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৪ বলে ১৯ রান করা কামিন্দুকে শিকার করেন পেসার তাসকিন আহমেদ।
পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে ৪৫ রান আসার পর রানের গতি বাড়ান কুশল ও সাদিরা সামারাবিক্রমা। পরের ৮ ওভারে ৮৬ রান তুলে দলের রান তিন অংকে নেন দু’জনে। এরমধ্যে স্পিনার রিসাদ হোসেনের করা ১২তম ওভারে ১৮, শরিফুলের করা ১৩তম ওভারে ২১ রান নেন কুশল ও সামারাবিক্রমা।
১২তম ওভারে ছক্কা মেরে ক্যারিয়ারের ১৩তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ২৮ বল খেলা কুশল। পরের ওভারে সৌম্য সরকারের বলে লিটনের হাতে জীবন পান কুশল। ৫৬ রানে জীবন পাবার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি এই ডান-হাতি ব্যাটার।
১৫তম ওভারে স্পিনার রিসাদের বলে লং অফ দিয়ে মারতে গিয়ে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দারুন ক্যাচে আউট হন ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৬ বলে ৫৯ রান করা কুশল । সামারাবিক্রমা-কুশল  তৃতীয় উইকেটে ৬১ বলে ৯৬ রান যোগ করেন ।
দলীয় ১৩৩ রানে কুশল ফেরার পর ক্রিজে এসে বাংলাদেশের বোলারদের উপর ছক্কার বন্যা বইয়ে দেন শ্রীলংকার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কা। শেষ ৪ ওভারে আসালঙ্কার ৬ ছক্কায় ৬৪ রানের সুবাদে ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ২০৬ রানের বড় সংগ্রহ পায় লংকানরা। এই নিয়ে তৃতীয়বার বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ২শর  বেশি রান করলো শ্রীলংকা।   
৬টি ছক্কায় ২১ বলে ৪৪ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন আসালঙ্কা। ৪৩ বলে টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি করা সামারাবিক্রমা শেষ পর্যন্ত ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৮ বলে ৬১ রানে অপরাজিত থাকেন। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৩৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ৭৩ রান যোগ করেন আসালঙ্কা ও সামারাবিক্রমা। বাংলাদেশের শরিফুল-তাসকিন ও রিসাদ ১টি করে উইকেট নেন। মুস্তাফিজুর রহমানের করা শেষ ওভারে ২৪ রান পায় শ্রীলংকা।
জয়ের জন্য ২০৭ রানের টার্গেট পায় বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে একবারই ২শর বেশি রানের টার্গেট স্পর্শ করে জয় পেয়েছিলো টাইগাররা। সেটিই এই শ্রীলংকার বিপক্ষে। আর ঘরের মাঠে ১৬৪ রানের বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই টাইগারদের। এমন পরিসংখ্যান নিয়ে খেলতে নেমে পঞ্চম ওভারের মধ্যে দলীয় ৩০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে স্বাগতিকরা। 
রানের খাতা খোলার আগে ইনিংসের তৃতীয় বলে লিটনকে এবং পঞ্চম ওভারে তাওহিদ হৃদয়কে ৮ রানে বিদায় করেন মিডিয়াম পেসার ম্যাথুজ। চতুর্থ ওভারে সৌম্যকে ১২ রানে বিদায় করেন পেসার বিনুরা ফার্নান্দো। 
শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠে  চতুর্থ উইকেটে ২৮ বলে ৩৮ রান যোগ করেন অধিনায়ক শান্ত  ও মাহমুদুল্লাহ। এই জুটিতে ১২ বলে ২৫ রান তুলেন মাহমুদুল্লাহ। নবম ওভারে শান্তকে  শিকার করে শ্রীলংকাকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন পেসার মাথিশা পাথিরানা। ৩টি চারে ২২ বলে ২০ রান করে আউট হন শান্ত।
পঞ্চম উইকেটে জাকের আলিকে নিয়ে রানের গতি ধরে রাখেন ২৭ রানে ক্যাচ দিয়ে জীবন পাওয়া মাহমুদুল্লাহ। পাথিরানার করা ১১তম ওভারে ২টি ছক্কায় ২০ রান পায় বাংলাদেশ। 
১২তম ওভারে দলের রান ১শ পার হবার পর ২৭ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের পর এই সংস্করনে খেলতে নামা মাহমুদুল্লাহ। হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ন করে  শেষ পর্যন্ত ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩১ বলে ৫৪ রান করা  মাহমুুদুল্লাহ শিকার হন  স্পিনার মহেশ থিকশানার। জাকের-মাহমুদুল্লাহ  জুটিতে  ২৯ বলে ৪৭ রান করেন। 
দলীয় ১১৫ রানে মাহমুদুল্লাহ ফেরার পর শ্রীলংকার বোলারদের উপর চড়াও হন জাকের। পরপর ৪ ওভারে ৫টি ছক্কা মারেন তিনি। নিজের ইনিংসে প্রথম চার মেরে ২৫ বলে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি করেন জাকের। 
১৮তম ওভারে ২টি চার মেরে ১৬ রান করে আউট হন মাহেদি। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে জাকের-মাহেদি ২৭ বলে ৬৫ রানের জুটিতে শেষ ২ ওভারে ২৭ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের।
১৯তম ওভারে ৩টি চারে ১৫ রান তুলেন জাকের। এতে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১২ রানের সমীকরন পায় টাইগাররা। 
শেষ ওভারে শানাকার প্রথম বলে রিসাদ ও তৃতীয় বলে আউট হন জাকের। ৪টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৩৪ বলে ২শ স্ট্রাইক রেটে ৬৮ রান করেন জাকের। চতুর্থ বলে শরিফুল বাউন্ডারি মারলে শেষ ২ বলে ৬ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের। কিন্তু শেষ ২ বলে ২ রানের বেশি পায়নি টাইগাররা। ৮ উইকেটে ২০৩ রান করে হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। শ্রীলংকার ম্যাথুজ-বিনুরা ও শানাকা ২টি করে উইকেট নেন।
আগামী ৬ মার্চ একই ভেন্যুতে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা।  
শ্রীলংকা ইনিংস :
আবিষ্কা ক লিটন ব শরিফুল ৪
কুশল ক মাহমুদুল্লাহ ব রিসাদ ৫৯
কামিন্দু ক সৌম্য ব তাসকিন ১৯
সামারাবিক্রমা অপরাজিত ৬১
আসালঙ্কা অপরাজিত ৪৪ 
অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-৬, নো-১, ও-১১) ১৯
মোট (৩ উইকেট, ২০ ওভার) ২০৬
উইকেটের পতন : ১-৪ (আভিষ্কা), ২-৩৭ (কামিন্দু), ৩-১৩৩ (কুশল)
বাংলাদেশ বোলিং :
শরিফুল : ৪-০-৪৭-১ (ও-১),
তাসকিন : ৪-০-৪০-১ (ও-১),
মাহেদি : ৩-০-৩০-০ (ও-২),
মুস্তাফিজ : ৪-০-৪২-০ (ও-২, নো-১),
রিসাদ : ৪-০-৩২-১,
সৌম্য : ১-০-৮-০। 
বাংলাদেশ ব্যাটিং :
লিটন ক কুশল ব ম্যাথুজ ০
সৌম্য ক আসালঙ্কা ব বিনুরা ১২
নাজমুল ক ম্যাথুজ ব পাথিরানা ২০ 
হৃদয় ক কুশল ব ম্যাথুজ ৮
মাহমুদুল্লাহ ক আবিস্কা ব থিকশানা
জাকের ক আসালঙ্কা ব শানাকা ৬৮
মাহেদি ক ম্যাথুজ ব বিনুরা ১৬
রিসাদ ক আসালঙ্কা ব শানাকা ০
তাসকিন অপরাজিত ২
শরিফুল অপরাজিত ৪
মোট (৮ উইকেট, ২০ ওভার) ২০৩
উইকেটের পতন : ১-০ (লিটন), ২-২১ (সৌম্য), ৩-৩০ (হৃদয়), ৪-৬৮ (নাজমুল), ৫-১১৫ (মাহমুদুল্লাহ), ৬-১৮০ (মাহেদি), ৭-১৯৫ (রিসাদ), ৮-১৯৭ (জাকের)।
শ্রীলকা বোলিং ইনিংস :
ম্যাথুজ : ৩-০-১৭-২ (ও-১),
বিনুরা : ৪-০-৪১-২ (ও-১),
থিকশানা : ৪-০-৩২-১,
শানাকা : ৩-০-৩৬-২ (ও-১),
আকিলা : ২-০-১৯-০ (ও-১),
পাথিরানা : ৪-০-৫৬-১ (ও-৯, নো-৩)।
ফল : শ্রীলংকা ৩ রানে জয়ী। 
ম্যাচ সেরা: চারিথ আসালঙ্কা(শ্রীলংকা)।
সিরিজ : তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল শ্রীলংকা।