শিরোনাম
ঢাকা, ১১ মার্চ, ২০২৪ (বাসস) : খাদিজা বেগম নারায়ণগঞ্জ থেকে এসে আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের ভর্তি হয়েছেন। তিনি ছোট বোনের কাছে শুনেছেন, এই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা অনেক ভালো। স্থানীয় এক হাসপাতালে আগের বাচ্চা জন্মের সময় মারা যায়। তাই এবার এখানে চলে এসেছেন। এবার সুস্থ বাচ্চার জন্ম হয়েছে, তাই তিনি অনেক খুশি। এই প্রতিষ্ঠানকে মানুষ ‘ম্যাটারনিটি’ নামে চেনেন।
খাদিজা বেগম বলেন, ‘অন্য হাসপাতালের চেয়ে এখানে সেবা অনেক ভালো দেয়। এ জন্যই দূর থেকে আসছি। এর আগে জন্মের সময় আমার সন্তান মারা যায়। তাই আমারা ছোট বোনের পরামর্শ নিয়ে এখানে আসছি। এবার আমার বাচ্চাটি সুস্থ হয়েছে। তাই আমি অনেক খুশি।’
জানাগেছে, আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান হাসপাতালে প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা পাচ্ছেন প্রসূতিরা। গর্ভাবস্থায় এখানে এসে কার্ড করিয়ে নিলে চিকিৎসকেরা সমস্যা ধরে-ধরে প্রসূতিকে সেবা দিয়ে থাকেন। এখানে শুধু গর্ভবতিদের চিকিৎসা দেওয়া হয় তা নয়, এখানে শিশুদেরও নানা ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়,আরজু বেগম নামের একজন মহিলা প্রসব কক্ষের বাইরে অপেক্ষা করছেন। তার জা’কে প্রসবের জন্য ভেতরে নেওয়া হয়েছে। আরজুর দুই সন্তানের জন্মও এই হাসাপাতলেই হয়েছে। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, এখানে সবাইকেই স্বাভাবিক প্রসবের জন্য চেষ্টা করা হয়। খুব সমস্যা না হলে অস্ত্রোপচার করা হয় না। স্বাভাবিক প্রসবের একদিন পরে মা ও শিশুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর অস্ত্রোপচার হলে এক সপ্তাহ রেখে বাচ্চা ও মাকে পর্যবেক্ষণ করে ছাড়া হয়। সেবার মান নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। খরচ খুব কম। কারণ এখানে অধিকাংশ ওষুধ বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
রিয়াজ উদ্দিনের তিনমাস বয়সী মেয়ের ঠান্ডার সাথে জ্বরও আছে। কামরাঙ্গীচর থেকে আজিমপুর মাতৃসদন নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের কোনো কিছু হইলে এখানে চইলা আসি। এই মেয়েও এইখানে হইছে। এই হাসপাতালটা থাকায় আর দূরে যাওয়া লাগে না।’
আজিমপুর মাতৃসদনের তত্ত্বাবধায়ক ডা. তৃপ্তি বালা বাসসকে বলেন, ১৭৩ শয্যার এই হাসপাতালে ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ রোগী থাকে সব সময়। শয্যার অতিরিক্ত রোগী নেওয়া হয় না।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সব সুযোগ-সুবিধা আছে কিন্তু লোকবল না থাকায় আউটডোরে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া অনেক কষ্ট হচ্ছে। তারপরও আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
পরিচালক বলেন, সেবা নিতে আসা অধিকাংশ নারীই গর্ভধারণের পর নিয়মিত চেকআপের জন্য মাতৃসদনে আসেন। বিশেষ করে প্রসবের সময় ঘনিয়ে এলে রক্ত, আলট্রাসনোগ্রাফিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে গাইনি চিকিৎসকের কাছে আসেন। এখানে শুধুমাত্র মহিলা চিকিৎসকরাই ডেলিভারি করান। এ কারণে রোগীরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা থেকে জানা গেছে, ১৭৩ শয্যার বিশেষায়িত এ হাসপাতালে ১১৬ গাইনি ও প্রসূতি এবং ৫৭টি শিশু বেড রয়েছে। মোট বেডের মধ্যে ১০৯টি নন-পেয়িং ও ৬৪টি পেয়িং বেড। নন-পেয়িং বেডের মধ্যে ১২টি পোস্ট অপারেটিভ, ১৮টি লেবার ওয়ার্ড, ১৮টি গাইনি, ৩৯টি শিশু ওয়ার্ড ও ২২টি প্রসূতি বেড। অন্যদিকে মোট পেয়িং বেডের মধ্যে ১৮টি শিশু ওয়ার্ড, ছয়টি গাইনি, ২৪টি প্রসূতি ও ১৬টি কেবিন।
হাসপাতালের আউটডোরের টিকিট মূল্য পাঁচ টাকা এবং ভর্তি ফি ১০ টাকা। সাধারণ পেয়িং বেডের দৈনিক ভাড়া ১০০০ টাকা এবং কেবিন ২০০০ টাকা। আর নন পেয়িং সাধারণ বেড ১০০ ও কেবিন ২০০ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে ৬০০-৭০০ রোগী আসে। ইনডোরে প্রতি মাসে গড়ে ৩০০-৩৫০ সন্তানসম্ভবা নারীর ডেলিভারি হয়।
সরেজমিন আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণের আউটডোর ঘুরে দেখা যায়,সেখানে প্রসবপূর্ব, প্রসবকালীন ও প্রসবপরবর্তী চেকআপের জন্য নির্দিষ্ট সময় অন্তর-অন্তর কেন্দ্রটিতে আসা, জম্ম নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী ও অস্থায়ী বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিতকরণ, গ্রহণ ও জন্মনিয়ন্ত্রণের সামগ্রী বিতরণ, মা ও শিশুদের ভিটামিন ও আয়রন ট্যাবলেট বিতরণ ও টিকা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসক ছাড়াও পুষ্টিবিদ ও কাউন্সিলাররা মায়েদের সব বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের পরিচালক (এমসিএইচ- সার্ভিসেস) ডা. মো. মুনীরুজ্জামান সিদ্দিকী বাসসকে জানান, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের অধীনে রাজধানীর আজিমপুরে ‘আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান’ নামে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। হাসপাতালটি সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। এই হাসপাতালটি দরিদ্র মানুষের ভরসাস্থলে পরিনত হয়েছে। এখানে শুধু নারী ও শিশুদের সেবা দেওয়া হয়। বিশেষ করে প্রসবকালিন ও প্রসব পরিবর্তী সেবার জন্য সুনাম কুড়িয়েছে আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। তবে কিছুটা জনবল সংকট আছে, আমরা চেষ্টা করছি কিছু লোক বল সেখানে পদায়ন করার।