শিরোনাম
ঢাকা, ১ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস): সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আজ এক আলোচনা সভায় বক্তারা রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ সংসদ, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের কর্মকান্ডে পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিতে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
রাজধানীর গ্রীন রোডে পাবলিশিং হাউজ ইউসিএল’র প্রধান কার্যালয়ে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রের সামগ্রিক সংস্কার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ এবং সাংবাদিকরা এ আহবান জানান।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘বিচার বিভাগে নির্বাহী শাখার হস্তক্ষেপ বন্ধ করার জন্য বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় স্থাপন করা দরকার।’
তিনি বলেন, আমরা শুধু প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতার কথা বলছি না, বিচারক এবং বিচার বিভাগের অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের পেশাগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলছি।
সারা হোসেন বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের একটি বড় অর্জন হলো জনগণ এখন স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে।
তিনি ঔপনিবেশিক আমলের আদালত অবমাননা আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন।
মাসদার হোসেন মামলার রজতজয়ন্তী এবং এর রায় ও বাস্তবায়নের ১৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর গ্রীন রোডে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
আলোচনায় লেখক ও গবেষক মিল্লাত হোসেনের অনূদিত ও সম্পাদিত ‘বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের প্রেক্ষাপট এবং মাসদার হোসেন মামলার রায়ের বাংলা অনুবাদ’ বইয়ের ওপরও আলোকপাত করা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির, সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষক ড. রিদওয়ানুল হক।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ৯৮ শতাংশ বিচারপ্রার্থী ন্যায়বিচার পেতে নিম্ন আদালতে যান। কিন্তু, নির্বাহী শাখা নিম্ন আদালতের পাশাপাশি বিচারকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করে, তাদের থাকার ব্যবস্থা এবং সুযোগ-সুবিধা সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় তিনি বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় সরকার বিচার বিভাগ ব্যবহার করে সহজেই প্রতিপক্ষকে দমন করতে পারে।
লেখক ও গবেষক মিল্লাত হোসেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতিমা ও নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণ চেয়ে বহুল আলোচিত মামলার অন্যতম আবেদনকারী সাবেক জেলা জজ মাসদার হোসেনও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দীন।
নুরুল কবির বলেন, বিচার ব্যবস্থায় বাংলা ভাষা ব্যবহার করা উচিত যাতে সমাজের যে কোনো শ্রেণির বিচারপ্রার্থী যুক্তি ও আদালতের রায় সহজে বুঝতে পারে।
তিনি বলেন, বিচারপ্রার্থীরা যুক্তি বা রায় বুঝতে না পারলে তা তার জন্য ন্যায়সঙ্গত হবে না।
সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রীয় সংস্কার সম্পর্কে নুরুল কবির বলেন, "বিভিন্ন সময় বহু মানুষ যে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে এবং দীর্ঘ সংগ্রাম করেছে তার জন্য একটি স্বপ্নের জাতি পেতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ অব্যাহত রাখতে হবে।’
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক সরকারই বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চায়নি।
তিনি স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য বিচার বিভাগে রাষ্ট্রের নির্বাহী শাখার হস্তক্ষেপ বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
ড. রিদওয়ানুল হক বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ও নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ নির্বাহী শাখার হাতে থাকা উচিত নয়।
তিনি বিচারক নিয়োগের জন্য একটি কাঠামো বা নীতি তৈরির ওপর জোর দেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, নির্বাহী বিভাগ বিচারক নিয়োগের ক্ষমতা ভোগ করলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, নিম্ন আদালত ও সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।