শিরোনাম
ঢাকা, ১৯ মার্চ, ২০২৪ (বাসস) : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহনন প্ররোচনার সাথে জড়িতদের বিচার ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে জবি উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নেতৃবৃন্দ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নিপীড়ন বন্ধ ও অবন্তিকার আত্মহনন প্ররোচনার সাথে জড়িতদের বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখ সড়কে আজ এক সমাবেশ আয়োজন করে। সমাবেশ শেষে তারা জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের সাথে সাক্ষাত করে স্মারক লিপি পেশ করেন।
সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র রায়হান সিদ্দিকী আম্মান এবং সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম কর্তৃক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকাকে আত্মহননের প্ররোচনার ঘটনার দ্রুত বিচার ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে এ সমাবেশ আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে বক্তারা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ওপর যৌন নিপিড়নের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নিপিড়ন বন্ধে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, গত ১৫ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহননের ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমরা লক্ষ্য করছি যে, দেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে বিভিন্নভাবে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এই নিপীড়ন বন্ধে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ৯% শিক্ষক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত যৌন নিপীড়নের ঘটনার সাথে জড়িত। তিনি বাকি ৯১% শিক্ষককে এসকল শিক্ষকের অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি শিক্ষাঙ্গনে যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রতিরোধে ২০০৯ সালে মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক প্রণীত যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সম্পর্কিত রায়কে শীঘ্রই একটি পূর্ণাঙ্গ আইন হিসেবে অনুমোদনের জন্য জোর দাবি জানান। তিনি বলেন, অভিযোগ কমিটি সম্পর্কে ছাত্র শিক্ষকদের কোন স্বচ্ছ ধারণা নেই, এবিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি নারী নির্যাতনমুক্ত সমাজ গড়তে তরুণ প্রজন্মকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীর হার ৫০:৫০ থাকার পরও সেখানে ক্রমাগত যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। শিক্ষাঙ্গনে নিরাপদ পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং একই সাথে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে।
শিক্ষাঙ্গনে একের পর এক যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের কোন উদ্যোগ না থাকায় বার বার এমন ঘটনা ঘটছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে দায়িত্ব পালনের চেয়ে ক্ষমতার লড়াইয়ের তৎপরতা থাকায় আজ জাতি প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম-এর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠন সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম, লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা, প্রশিক্ষণ-গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত লিগ্যাল এইড পরিচালক অ্যাড. দীপ্তি শিকদার, ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস, লিগ্যাল এইড সম্পাদক শামীমা আফরোজ আইরিন এবং সদস্য হেনা চৌধুরী এবং অ্যাড. হালিমা খাতুন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে আরো বক্তব্য রাখেন কর্মজীবী নারীর অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক সানজিদা সুলতানা, এসিড সারভাইভারম ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর তাহমিনা ইসলাম এবং জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহ-সাকিব এবং সংহতি প্রকাশ করেন প্রাগ্রসরের প্রতিনিধি।