শিরোনাম
ঢাকা, ৩ জুলাই, ২০২৪ (বাসস): নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন কার্যক্রমে প্রথমবারের মতো ২০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী ষান্মাসিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথমবারের মতো একই প্রশ্নপত্রে সারাদেশে একযোগে শিক্ষার্থীরা এ মূল্যায়ন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে আজ সকাল ১০টা থেকে বিরতিসহ বেলা তিনটা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টা এ মূল্যায়ন কার্যক্রম চলেছে।
নতুন শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন হওয়া নিয়মে পরীক্ষার পরিবর্তে অনুষ্ঠিত ষান্মাসিক সামষ্টিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা মূল্যায়নের নির্দেশিকা বা প্রশ্নপত্রের আলোকে এই মূল্যায়ন কার্যক্রমে অংশ নেয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎকণ্ঠার পাশাপাশি ছিল কৌতুহল। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।
এ কার্যক্রমের প্রথম দিনে ষষ্ঠ শ্রেণিতে তিন বিষয়-বাংলা, সপ্তমে ধর্ম, অষ্টম শ্রেণিতে দুই বিষয়-জীবন ও জীবিকা এবং নবম শ্রেণিতে দুই বিষয় ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের মূল্যায়ন করা হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষা শুরু হওয়ার তিনঘন্টা আগে নৈপুণ্য অ্যাপের মাধ্যমে শিক্ষকরা ডাউনলোড করে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র বিতরণ করেন।
এর আগে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন কার্যক্রম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে নির্দেশনা অনুযায়ী মূল্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে শিক্ষকদের নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। শিক্ষার্থীদের যে প্রশ্নপত্রের ওপর মূল্যায়ন নেওয়া হবে, তা নৈপুণ্য অ্যাপ থেকে পরীক্ষা শুরুর তিন ঘণ্টা আগে ডাউনলোড করা যাবে বলে জানিয়েছে এনসিটিবি।
এই মূল্যায়ন পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা কী কী সঙ্গে রাখতে পারবে সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের সাধারণ উপকরণের মধ্যে কলম, পেন্সিল, ইরেজার, শার্পনার ও স্কেল নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য ১৬ পৃষ্ঠার লেখার খাতা, শিক্ষার্থীকে মূল্যায়নের নির্দেশিকা, মার্কার, সাইন পেন, স্ট্যাপলার ইত্যাদি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহ করা হবে এ-ফোর সাইজের কাগজ।
বাংলা পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের বাংলা বই নিতে হবে। ধর্ম বিষয়ের মূল্যায়নের জন্য সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট পাঠ্যবই, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেতে হবে ক্যালেন্ডারের খালি পৃষ্ঠা। এই মূল্যায়নের উপকরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহ করা হবে চার-পাঁচটি পেন্সিল বাক্স। ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের জন্য নিজ পাঠ্যপুস্তক রাখতে হবে।
রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাসমিয়াহ চৌধুরী বলেন, লিখিত ও গ্রুপ ওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলা মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। গ্রুপ ওয়ার্কে সবাই খুব আনন্দ পেয়েছি। এর আগে যে ধরনের লিখিত পরীক্ষা হতো সেটা যেমন ভাল লেগেছে তেমনি এবারের অংশগ্রহণও ভাল লেগেছে।
রাজধানীর বনশ্রীর আইডিয়াল স্কুল বনশ্রী শাখার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আদিব আহাম্মদ বলেন, সকাল ১০ টা থেকে পাঁঘণ্টা সময় নিয়ে এই মূল্যায়ন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছি। সকল সহপাঠী দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। এই পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম যেমন ভাল লেগেছে তেমনি আগের লিখিত পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতিও ভাল ছিল।
মীরপুরের বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষাথীর একজন অভিভাবক জামাল আহমেদ জানান, শিক্ষার্থীরা এতো সময় ডিনয়ে এর আগে এই ধরনের মূল্যায়ন কার্যক্রমে অংশ নেয়নি। দুশ্চিন্তা কাজ করেছে ভেতরে। পরীক্ষার পর বের হয়ে ছেলে যখন বলেছে মূল্যায়ন পদ্ধতির এই কার্যক্রম ভাল ছিল। তার মুখ দেখে নিজেকে ভারমুক্ত লেগেছে।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের শিখন, দক্ষতা ও অ্যাকাডেমিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। লিখিত অংশে ৬৫ শতাংশ এবং ব্যবহারিক অংশে ৩৫ এই মোট ১০০ নম্বারে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। চলতি বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে। ২০২৫ সালে পঞ্চম শ্রেণি ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এই প্রক্রিয়া চালু করা হবে। মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়নসহ পরীক্ষা থাকবে।
নতুন কারিক্যুলামে প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে না।