বাসস
  ২৯ আগস্ট ২০২৪, ২২:৪৯

রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ১১টি টাস্কফোর্স গঠনের করে সংস্কার ফ্রেমওয়ার্ক' তৈরির আহ্বান

ঢাকা, ২৯ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস): গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব এবং অভ্যুত্থানের চেতনা রক্ষায় রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ১১টি টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে ‘সংস্কার ফ্রেমওয়ার্ক’ তৈরির আহ্বান জানিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। আজ রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা বাস্তবায়নে অন্তর্বতীকালীন  সরকারের দায়িত্ব এবং অভ্যূত্থানের স্পিরিট রক্ষায় করণীয়’ প্রসঙ্গে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রস্তাব শীর্ষক  'সংস্কার সংলাপ' -এর ৩য় পর্বে  নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
দলের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমনের সঞ্চালনায় এবং প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূমের সভাপতিত্বে আলোচনা করেন, ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণতন্ত্র মঞ্চের বর্তমান সমন্বয়ক এবং নাগরিক ঐক্যর সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, এবি পার্টির  সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, বাংলাদেশ ইসলামি আন্দোলনের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ফজলুল করিম মারুফ, অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের মুখপাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার, বিশিষ্ট গবেষক ড. স্বপন আদনান প্রমুখ।
সংলাপে দলের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করার মাধ্যমে এদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা। এই যুদ্ধ মোকাবেলা করে বিজয় অর্জন করতে গিয়ে বাংলাদেশের জনগণ ক্রমেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় ঐক্যের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। বাংলাদেশ এই প্রথম একটি সরকার পেয়েছে, যে সরকার ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের উপর প্রতিষ্টিত এবং যে সরকারে আন্দোলনকারী নেতৃত্বের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ আছে। এই অবস্থায় সকল পক্ষের উচিত হচ্ছে, এই বিজয় এবং ঐক্যকে সত্যিকারের জাতীয় ঐক্যে রূপন্তর করে অভ্যুত্থানের আকাঙ্খা বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
লিখিত বক্তব্য তুলে ধরে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থনৈতিক সমন্বয়ক দিদারুল ভুঁইয়া বলেন, শুধুমাত্র ফ্যাসিস্ট মাফিয়া শাসকদের সরানোর জন্য এতো মানুষ জীবন দেয়নি। তারা জীবন দিয়েছে এমন একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে যাতে রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করে আর কোন শাসক এমন ফ্যাসিস্ট ও মাফিয়া জুলুমবাজ হয়ে উঠতে না পারে।
মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, এবারের পরিবর্তন যাতে টেকসই হয়। সেই লক্ষ্যে মানুষের সেই আকাঙ্খাকে স্থায়ী করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের ক্ষমতাকাঠামোর সংস্কার করতে হবে। 
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা। একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে একব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতাকাঠামো সংস্কার করতে হবে। আমরা খুবই আশাবাদী, এতোবড় আত্মদান এতো বড় গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে সুযোগ এসেছে তা অভাবনীয়।
সাইফুল হক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নিয়মতান্ত্রিক সংলাপ শুরু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ১৯৭২ সাল যে একব্যক্তি কেন্দ্রিক ক্ষমতা তৈরি করা হয়েছিল যার কোনো জবাবদিহিতা নেই, সেই ক্ষমতাকাঠামো সংস্কার করতে হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে ওই মাফিয়া সরকার বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার উপর নগ্ন হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় গিয়েছে তখনই ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। আমরা কি বারবার রক্ত দিয়েই যাবো? এই রক্ত দেয়া বন্ধ করতে হলে এই সংবিধানের সংস্কার করতে হবে।
শহীদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসের এই প্রথম সাংবিধানের ঔপনিবেশিক, স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী ক্ষমতাকাঠামো সংস্কার করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সংস্কার প্রশ্নে আমাদের প্রস্তাবনা ও রোডম্যাপ ভিন্ন ভিন্ন থাকতে পারে কিন্তু এইগুলা সংস্কার আমাদেরকে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে করতেই হবে।
এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিবাদের দালালেরা এখনো ওঁৎ পেতে আছে এই সরকারকে অস্থিতিশীল করতে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই গণঅভ্যুত্থানকে রক্ষা করতে হবে। আর রাষ্ট্রের সংস্কারের সাথে সাথে রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার করতে হবে।
মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, এই সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে অধিকার নিশ্চিত করা। আমরা যেনো সংকটকালীন সময় যেভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, সামনের দিনেও সেভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকে সংস্কারের জায়গায় কাজ করতে পারি।
ফয়জুল হাকিম লালা বলেন, কোনো পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলতে দেয়া যাবে না। গণদুশমনদের পুনর্বাসন করতে দেয়া যাবে না। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্খা নিয়ে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সকলে মিলে কাজ করে যাবো।
রাশেদ খান বলেন, শুধুমাত্র গুটিকয়েক দল মিলে ঠিক করলে হবে না। আন্দোলনে যারা ছিলেন দেশের এইরকম সকল দল মিলে ঠিক করতে হবে। সরকার কতদিন থাকবে এবং কি কি কাজ করবে এবং কতদিন থাকবে তার রোডম্যাপ দ্রুত দিতে হবে।
ফজলুল করিম মারুফ বলেন, আমরা রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা ও রোডম্যাপের সাথে পুরোপুরি একমত। আমাদের দলের মধ্যে এই রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা করে আগামীদিনে আমরা সবাই একসাথে এই সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ করবো।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার বলেন, জনগণকে বলছি এই রাষ্ট্রের মালিক আপনারা। সরকার উন্নয়নের নামে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করেছে। এই টাকা আপনাদের, এই টাকা ফিরিয়ে এনে দেশের জনগণের উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে।
ড. স্বপন আদনান বলেন, যদি সম্ভব হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে রাজনীতি ও সমাজ নিয়েও প্রস্তাব দেয়া দরকার। দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মেরামত না করে যদি আবারও চলার চেষ্টা করা হয়, তাহলে আবারও অচলায়তন তৈরি হবে।
সংস্কার সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক সমন্বয়ক ফরিদুল হক, জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য জাকিয়া শিশির, সাবেক সচিব গোলাম শফিক এবং নির্বাহী ও সমন্বয় কমিটিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।