বাসস
  ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০০
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৪

শান্তিপুর অরণ্য কুটির বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম তীর্থস্থান

খাগড়াছড়ি, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস): শান্তিপুর অরণ্য কুটির বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পবিত্র একটি তীর্থস্থান । অপূর্ব সৌন্দর্যের লীলাভূমি, ধ্যান-সাধনার পীঠস্থান এ অরণ্য কুটির। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শহর খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার  অরণ্যে ঘেরা  প্রায় ১৮০ একর জায়গা জুড়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র এ তীর্থস্থানটি   অবস্থিত ।

প্রকৃতির অবারিত ঘন সবুজ বনানীর ছায়া সুনিবিড় মমতায় ঘেরা  পানছড়ি উপজেলা শহর থেকে সোজা দক্ষিণ দিকে প্রায় ৫/৬ কি.মি দূরে শান্তিপুর নামক জনপদের অনতিদূরে এর অবস্থান। যা জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে । বিশাল এলাকাজুড়ে অরণ্যে আবৃত বলেই  এর নামকরণ করা হয়েছে “অরণ্য কুটির”।

পাহাড়ি গাছ-গাছড়ায় ঘেরা পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ মূর্তি।সেখানে রয়েছে ভিত্তিসহ ৫০ ফিট উচ্চতার গৌতম বৌুদ্ধের মূর্তি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি অন্যতম তীর্থস্থান হিসেবে  পরিচিত । নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে ভিক্ষুদের ধ্যান করার সুবিধার্থে ১৯৯৯ সালে  ভদন্ত শাসনরক্ষিত মহাথেরো এ কুটির টি স্থাপন করেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় গুরু সাধনা নন্দ মহাস্থবির বনভান্তের ৮ম শীষ্য।

স্থানীয়রা জানান,পানছড়ির শান্তিপুরের গহীণ বনে শাসন রক্ষিত ভান্তে ধ্যান করছিলেন । দিনের পর দিন খোলা জায়গায় ধ্যান করতে দেখে প্রথমে একটি ছোট ঘর তৈরী করেন স্থানীয়রা ।এর পর ভদন্ত শাসন রক্ষিত মহাস্থবিরের প্রাণান্তকর চেষ্টায় বর্তমান শান্তিপুর অরণ্য কুটিরটি নির্মিত হয়েছে ।

অরণ্য কুটিরের দক্ষিণ পাশে বড় ভান্তে শাসন রক্ষিত মহাস্থবিরের ও সাধরন  বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কুটির। সবচেয়ে বড় বৌুদ্ধ মূর্তির পেছনের দিকটায় পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধ। কারণ, ভেতরের ১৩টি সাধনা কুটিরে নির্জনে বসে দিনের পর দিন সাধনা করেন ভাক্তেরা । প্রত্যেকটি কুটিরে একজন ভিক্ষু ও শ্রামন ধ্যানে মগ্ন থাকেন  ধর্মীয় আচার পালনের সুবিধার্থে বেলা ১১ টা থেকে দুপুর ১ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটির দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

হিংসা-বিদ্বেষহীন এ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি শুধুপানছড়ি নয় সমগ্র পার্বত্য এলাকার  শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলছে। প্রতি বছর বৌদ্ধ পূর্ণিমা, আষাঢ়ি ও প্রবারণা পূর্ণিমাতে এখানে বৌদ্ধ পূজা ও উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া এ বিহারে গণ প্রবজ্যা গ্রহণ অনুষ্টানটিও আকর্ষণীয়।

কটিন চীবর দানের সময় দেশের নানা স্থান থেকে ৫০ হাজারেরও অধিক ভক্ত এবং পূণ্যার্থীর আগমন ঘটে এ অরণ্য কুটিরে। এ বিহারে কঠিন চীবর দানের আবর্ষণীয় দিক হচ্ছে  একই দিনে বিভিন্ন ধাপ শেষ করে তুলা থেকে কাপড় বোনা ও সেলাই করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উদ্দেশ্যে দান করা আর এ কাজে অংশ নেন পাহাড়ি এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ। এ সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন এখানে শতাধিক পূণ্যার্থী ও পর্যটকদের আগমন ঘটে।

দম্মা-ধায়াদা ঐক্য পরিষদের (ডিওপি) সভাপতি সঞ্জয় চাকমা জানান, শান্তিপুরের গহীণ বনে ধ্যান করছিলেন শাসন রক্ষিত ভান্তে। দিনের পর দিন এভাবে খোলা জায়গায় ধ্যান করতে দেখে প্রথমে একটি ছোট ঘর তৈরি করে দেন স্থানীয়রা। এরপর শাসন রক্ষিতের প্রাণান্তকর চেষ্টায় বর্তমান শান্তিপুর অরণ্য কুটির হয়েছে। এটি এখন ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ নর নারীদের নয় পর্যটকদের মূল আকর্ষণে কেন্দ্রবিন্দু ।এখানে প্রায় প্রতিদিন ২০ হাজারেরও বেশী পর্যটকদের আগমন ঘটে ।

অরণ্য কুটিরে দর্শনার্থীদের আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে এখানে প্রায় ৩৫ হাজারের বেশী বনজ এবং ফলজ গাছ দেখতে পাওয়া যায় । এ বনজ ও ফলজ গাছ বন ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।