বাসস
  ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:২২

ভোলা উপকূল রক্ষায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি

॥ আল-আমিন শাহরিয়ার॥

ভোলা, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদী বর্ষা মৌসুমে হয়ে উঠে ভয়ঙ্কর।  শুরু হয় ভাঙ্গন।  বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানিতে ডুবে যায় বিস্তীর্ণ এলাকার শতশত বাড়িঘর। বর্ষার পূর্বেই এ শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ী টেকসই বাঁধ নির্মাণের  দাবি এলাকাবাসীর। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ পর্যায়ক্রমে সিসি ব্লকের আওতায় আনা হবে।

তথ্যমতে,দেশের উপকূলীয় ১৯ টির জেলার মধ্যে অন্যতম ভোলা। প্রায় ৮শত বছর পূর্বে হিমালয় থেকে নেমে আসা পদ্মা, মেঘনা আর ব্রমপূত্র নদীর প্রবাহিত পলি দিয়ে গড়ে উঠে ভোলা। এখানে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের বসবাস। চার দিকেই নদী-সাগর বেষ্টিত দেশের বৃহত্তর দ্বীপ জেলা এটি। সাগর- নদীর মোহনায় জেলাটি গড়ে উঠায় বর্ষার সময় বন্যা ও নদী ভাঙ্গনে দেখা দেয় দুর্যোগের ভয়াবহতা।

জেলার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় স্থায়ী ব্লক না থাকায় বর্ষা মৌসুমে ভাঙনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় শতশত বাড়ি-ঘর, ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বিলীন হয়ে যায় কৃষকের ফসলি জমি, কমে যায় ফসল উৎপাদন। অনেক স্থানে অতিরিক্ত জোয়ারে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজার হাজার পরিবার। ওই সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এসে তরিগরি করে কিছু জিও ব্যাগ ফেললেও তেমন রক্ষা পায়না ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ। তাই বর্ষার পূর্বেই এ শুকনো মৌসুমে স্থায়ী ব্লকবাঁধ নির্মাণ করে ভোলাকে রক্ষা করার জন্য দাবি ভুক্তভোগী এসব মানুষের।

সরেজমিন  জেলা সদর ভোলার ভাঙ্গন কবলিত পূর্ব ইলিশার গাজীপুরে গেলে সেখানে দেখা যায়,নদী স্বিকস্তি মানুষের দূ:খ-কষ্টে থাকা ছিন্নমূল জীবনের করুন চিত্র। ওই এলাকার মেঘনার পাড়ে বসবাসরত বাসিন্দা-ছিডু মাঝির  সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, একসময় বিশাল বিত্ত্বশালী ছিলাম আমরা। গোলাভরা ধান,গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছসহ সব কিছুই ছিলো তাদের।পরিবারে অভাবের চিহ্ন দেখেননি কখনো। কিন্তু এ রাক্ষুসী নদী আমাকে চারবার ভেঙ্গে নি:স্ব করে দিয়েছে। সবকূল হারিয়ে ছিডু মিয়ার এখন জীবন কাটে পাড়ভাঙ্গা মেঘনার একপাড় থেকে আরেক পাড়ে। একই এলাকায় ঝুপড়ি ঘরে বসবাস ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা আমেনা বিবি'র। তিনি যেনো তার জীবনের পাড়ভাঙ্গা নদীর ভয়ঙ্কর নোনাপানির বিষাক্ত ছোবলে নি:স্ব হওয়ার গল্প শোনাচ্ছিলেন। বলেন,এখন তিনি যেখানে বাস করছেন,ঠিক এর থেকে আরো ত্রিশ মাইল দূরের কালুপুরে ছিলো তাদের বাড়ি। ওইখানটাতেই বিত্ত্বশালী হালিম নিয়ার  সঙ্গে ধুমধাম করে বিয়ের সানাই বাজে তার। পালকিতে করে শ্বশুর বাড়ি আনা হয়েছিল তাকে। সীমাহীন আনন্দে সুূখের সংসারে দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে জীবন চলতো তার। কিন্ত উত্তাল মেঘনার ভয়াল গ্রাসে লন্ডভন্ড হয়ে যায়,আমেনা বিবির সাজানো সুুখের সংসার। যেপথ দিয়ে পালকিতে চরে এসেছিলো আমেনা, সেখানে এখন জাহাজ চলে। যেখানে বেজেছিলো সানাইয়ের সূর, সেখানে এখন শোনা যায়, উত্তাল নদীর ভয়ঙ্কর গর্জণের শব্দ। ভোলার প্রতিটি জনপদে এমন হাজারো হালিম মাঝি আর আমেনা বিবি'দের সাজানো গোছানো সুখের সংসার এখন স্রোতস্বীনি নদীর পেটে চলে গেছে। ভাঙ্গনের শিকার এমন লাখো মানুষকে রক্ষায় এখন টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি উঠেছে।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো,আজাদ জাহান বাসস'কে জানিয়েছেন,জেলার মনপুরার জন্য একনেকে অনুমোদিত এক হাজার ১৬ কোটি টাকার চলমান কাজসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে পর্যায়ক্রমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও ব্লক নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকায় পুরো বাঁধ টেকসই করা সম্ভব হচ্ছেনা। অগ্রাধিকার ও ঝূঁকি বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে সিসি ব্লক দ্বারা বাঁধ মেরামত করা হবে। ভোলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের  তত্বাবধায়ক,হাসানুজ্জামান বাসস'কে জানান,জেলায় ৩ শত ৩৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ থাকলেও স্থায়ী মাত্র ৪৭ কিলোমিটার। এরমধ্যে ৫৫ কিলোমিটার জিওব্যাগ ডাম্পিং করা। বাকি ২ শত ৩২ কিলোমিটার বাঁধ পুরনো, সরু, নিচু আর ঝূঁকিপূর্ণ। তাই এবাঁধ নির্মাণ করতে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশমালা প্রস্তুত করে পাঠানো হয়েছে।