শিরোনাম
বরগুনা, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কদর বাড়েছে রাখাইনদের তাঁতের কাপড়ের। বরগুনার তালতলী উপজেলার বিভিন্ন রাখাইন পাড়ায় নারীদের তখন দম ফেলার ফুসরত থাকে না। রাখাইন নারীদের কর্মব্যস্ততার পাশাপাশি মনে বাড়ে অর্থ উপার্জনের আনন্দও।
ইতোমধ্যে তাদের তাঁতের খটখট শব্দে মুখরিত রাখাইন পল্লীগুলো জানান দিচ্ছে রাখাইন হস্তশিল্পের জনপ্রিয়তা ও ঐতিহ্যকে।
মায়ানমার (বার্মা) থেকে আমদানীকরা সূতা দিয়ে শীতের চাদর, শার্ট পিস, ব্যাগ, লুঙ্গী, ও গামছা বুনে রাখাইন নারী তাঁতীরা তাদের হস্তচালিত তাঁত বস্ত্রের উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিরলস ভাবে পরিশ্রম করেন। রাখাইন তাঁতীদের উৎপাদিত এ সব বস্ত্রের কদর দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের সর্বত্রই রয়েছে। বিশেষ করে শীতকালে স্থানীয় বাজারগুলোতে চাদর, শার্ট পিস, লুঙ্গী এ কাপড় খুব চলে বলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে।
রাখাইনদের হস্তচালিত তাঁতে বিভিন্ন রংয়ের সুতা দিয়ে তৈরি লতা পাতা ফুল ও বিভিন্ন কারুকাজে তৈরি এ সকল কাপড় যেমন ভালো ওম দেয় তেমনি তার আকর্ষণও রয়েছে। সারা বছর চাহিদা না থাকলেও শীত মৌসুম, ঈদে চাহিদা বেড়ে যায়। সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই তালতলীর ১৭টি রাখাইন পল্লী বর্তমানে সরগরম হয়ে উঠছে। তালতলীর আগাঠাকুর পাড়ার উসিট মং জানান, তালতলী উপজেলার তিন ইউনিয়নের তালতলী পাড়া, ছাতন পাড়া, মনুখে পাড়া, আগাঠাকুর পাড়া, সওদাগর পাড়া, তালুকদার পাড়া, কবিরাজ পাড়া, নামিষে পাড়া, লাউ পাড়া ও অংকুজান পাড়াসহ ১৭ টি রাখাইন পল্লীতে দুই শতাধিক হস্তচালিত তাঁত রয়েছে। কোন কোন পরিবারে ২-৩টি করেও তাঁত রয়েছে। সবাই ব্যস্ত হবেন মৌসুমী উৎপাদনে।
ছাতন পাড়ায় তাঁতী ও ব্যবসায়ী লাচিন খেইন জানান, রাখাইন পল্লীতে বর্তমানে প্রতিটি শীতের চাদর আকার ভেদে ৭ শ থেকে ১ হাজার টাকা, শার্ট পিস সাড়ে ৩ শ থেকে ৫ শ টাকা, লুঙ্গি ৫ শ টাকায় বিক্রি হয়। তাদের একটি শার্ট পিস দিয়ে বড়দের একটি এবং ছোটদের একটি মোট দুটি শার্ট তৈরি করা যায়।
আকর্ষণীয় হাত ব্যাগগুলো ৪ শ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। কাপড়ের পাশাপাশি তাদের কাছে বার্মার তৈরি বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীও পাওয়া যায়।
তালতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন রাখাইন তরুনী অংতেন তালুকদার। তিনি জানান, তাঁতে কাপড় বোনা রাখাইন নারীদের পারিবারিক ঐতিহ্য। রাখাইনদের মধ্যে এমন প্রচলন আছে, পরিবারের যে মেয়েরা হস্তচালিত তাঁত চালাতে জানেনা তাদের ভালো বিয়ে হয়না।
বরগুনার বিভিন্ন কাপড়ের বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, কম দামের কারনে রাখাইনদের বোনা কাপড়ের চাহিদার একটু বেশীই। তবে সরাসরি রাখাইন পল্লী থেকে কাপড় কিনলে আরও কম খরচ লাগে বলে জানালেন রাখাইন ব্যবসায়ী অংচিলা। তিনি আরও বলেন তালতলীতে ঘুরতে আসা পর্যটক, স্থানীয় বাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের বোনা কাপড় রপ্তানী করা হচ্ছে।