শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র বিষয়ে জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ব্যাপক রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দলীয় রাজনীতির পরিবর্তে ঐক্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ‘ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ’ আয়োজিত জাতীয় সংলাপে বক্তৃতাকালে বলেন, ‘আমি আশা করি আগামীতে যারা নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসবেন তারা বিশেষ করে জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ঐক্যমতের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করবেন।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত আমরা বিগত ৫৩ বছরে এটি কখনো দেখিনি। সব সময় সরকার যেটা মনে করেছে সেটা করেছে। কখনো কখনো এমনও হয়েছে সরকার বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়নে সত্যিই ভালো কিছু করার উদ্যেগ নিয়েছে কিন্তু বিরোধী দল সেটা সমর্থন করেনি। এটা এমন ছিল যে, বিরোধী দল সরকারের কোন কিছু মানবেনা আর সরকার বিরোধী দলের কোন কিছু মানবেনা। এই অবস্থা থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে। আমাদের ঐক্যমত লাগবে। দেশের স্বার্থ যেখানে জড়িত সেখানে আলোচনা হবে দুই পক্ষের মাঝে। এক তরফা কোন কিছু করা যাবে না।
তিনি ভবিষ্যতে এই ধরনের বিভেদমূলক পন্থা পরিহার করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
তৌহিদ ভারত, চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় শক্তির সাথে বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘এই সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থ রয়েছে। আমরা আমাদের পররাষ্ট্র নীতি নেভিগেট করার সময় এটি মনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও ভারত ও চীনের বাণিজ্য সম্পর্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে বাস্তববাদী কূটনীতির উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ যা তিনটি দেশের সাথে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখতে অনুকরণ করতে পারে।
সংলাপের প্রতিপাদ্য, ‘ঐক্য, সংস্কার এবং নির্বাচন’এর প্রতিফলন ঘটিয়ে তৌহিদ জাতীয় ঐক্যের তাৎপর্যের ওপর জোর দেন।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ১৯৭১ সালে দেশ কীভাবে স্বাধীনতা অর্জনের কথা স্মরণ করেন।
তিনি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে প্রদর্শিত ঐক্যের কথাও উল্লেখ করেন, যা দেশে একটি মুক্ত পরিবেশের পথ সুগম করেছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত হলে তাদের জবাবদিহি করা জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকারের প্রচেষ্টার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি সম্প্রতি থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাঙ্গিয়াম্পংসার সভাপতিত্বে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ছয় দেশের আলোচনার কথা উল্লেখ করেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা স্থবির হয়ে পড়েছে এবং আরাকান আর্মি কর্তৃক বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
তৌহিদ জোর দিয়ে বলেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা আঞ্চলিক শক্তির পাশাপাশি মিয়ানমারের দায়িত্ব।
বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাংককে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় আমি আমাদের অবস্থান বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছি।’