শিরোনাম
ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, ‘কারো নির্দেশে আমরা কোনো হত্যা বা জোরপূর্বক গুমের সাথে জড়িত হব না কারণ এগুলো ফৌজদারি অপরাধ।’
তিনি বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের সঙ্গে র্যাবের সম্পৃক্ততা নেই ।
এ ধরনের অপরাধে কোনো বাহিনীর সদস্য জড়িত থাকলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন র্যাব প্রধান। অতীতের কর্মকাণ্ডের জন্য বাহিনীর পক্ষ থেকে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বর্তমান পরিস্থিতি ও বাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি এসব বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন র্যাব এডিজি (অপারেশন্স) কর্নেল ইফতেখার আহমেদ, র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব ডিজি বলেন, র্যাব একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, যা সবসময় আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের হামলায় জড়িতদের চিহ্নিতকরণ ও গ্রেফতারে আমরা তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, হত্যা ও হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে এবং নাশকতার নেতৃস্থানীয় ৪ জন সাবেক মন্ত্রী, ১৭ জন সাবেক এমপিসহ সাড়ে ৩ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় লুণ্ঠিত অস্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে র্যাব কাজ করছে।
তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় র্যাবের বিভিন্ন ধরনের ১৬৮টি অস্ত্র এবং ১২ হাজার ৪৬৯ রাউন্ড গোলাবারুদ লুণ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি ও জেলা থেকে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়েছে। এর মধ্যে ৯০টি অস্ত্র ও ৭ হাজার ৩০৩ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের লুন্ঠিত ২২৮টি অস্ত্র ও ১১ হাজার ৯৪১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ১৫০টি অবৈধ অস্ত্র ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি ৮০ জন অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাব ডিজি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি হামলা ও গুলি বর্ষণকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে প্রায় ৩০ জনের অধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের ত্বকী হত্যা মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ত্বকী হত্যা মামলায় ৫ আগস্টের আগে পর্যন্ত ৫ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ১৮ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলির করার অভিযোগ প্রসঙ্গে র্যাব ডিজি বলেন, র্যাবের কার্যক্রম সবসময় আইন ও বিধি মেনে পরিচালিত হয়। হেলিকপ্টার থেকে গুলি বর্ষণের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন করা হবে। র্যাব কখনোই এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কার্যকলাপ সমর্থন করে না।
তিনি জানান, সম্প্রতি র্যাব সদর দপ্তরসহ কয়েকটি ব্যাটালিয়নের ১৬ জন সদস্যকে চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও ডাকাতির অভিযোগে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠা হতে অদ্যবধি র্যাবের ৫৮ জন কর্মকর্তাসহ ৪ হাজার ২৩৫ জন সদস্যকে শৃঙ্খলাবহির্ভূত কার্যক্রমের জন্য লঘুদণ্ড ও গুরুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, র্যাব কোনো গুম বা খুনের ঘটনাকে সমর্থন করে না। গুমের অভিযোগ এবং আয়নাঘরের বিষয়ে তদন্ত চলছে।
বিভিন্ন মহল থেকে র্যাব বিলুপ্তির দাবি উঠেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের জনগণ ও রাষ্ট্রের সার্বিক কল্যাণে র্যাবের ব্যাপারে রাষ্ট্র যে সিন্ধান্ত নেয়, আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব।
সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত সংবেদনশীল মামলা। র্যাব সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। মামলাটি সম্প্রতি মহামান্য হাইকোর্টের আদেশে গঠিত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। যে কমিটিতে র্যাবের প্রতিনিধিও রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে র্যাবের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও আয়নাঘর তদন্তে গঠিত কমিশনকে তারা সব ধরনের সহযোগিতা করছেন।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসরণ করে র্যাবে আয়নাঘর থাকার অভিযোগ তদন্তে কমিশনের সুবিধার্থে কোনো কিছু পরিবর্তন করবেন না।
র্যাবের ইউনিফর্ম পরিবর্তনের জনসাধারণের দাবির বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, র্যাবের পোশাক পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে।