বাসস
  ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০১

জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা 

চট্টগ্রাম, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ (বাসস) : জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে এবং আইনের শাসন ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমুক্ত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা। বিচারপতি, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা চট্টগ্রামে এক আলোচনা সভায় এ মত ব্যক্ত করেন। 

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর জাতীয় ঐক্য এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যমতকে রক্ষা করার জন্য জুলাই বিপ্লবের সকল স্টেকহোল্ডারকে সজাগ থাকার আহবান জানিয়েছেন বক্তারা।  

আজ শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ৪র্থ সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। 

দেশের অন্যতম শিল্প গ্রুপ পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং বিএসআরএফ চেয়ারম্যান এলিনা খান ও মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসানের যৌথ সঞ্চালনায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।  

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ এবং  ‘গুম’কে পৈশাচিক অপরাধ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এটা কোনো রাষ্ট্রযন্ত্র অথবা উচ্ছৃঙ্খল গোষ্ঠী দ্বারা যে কারণেই সংঘটিত হোক না কেন, তা একেবারেই মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। 

তিনি বলেন, দেশবাসী কয়েক দশক ধরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুমের বীভৎস ঘটনা  প্রত্যক্ষ করেছে। অথচ এ ধরণের জঘন্য অপরাধের পেছনে যারা রয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ খুব কমই দেখা গেছে। 

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, কমিশনের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কাজ থেকে কমিশন প্রমাণিত হয় যে এটা একটি দন্তহীন বাঘ ছাড়া আর কিছুই নয়। যার কোনো আইন লঙ্ঘনকারীদের বিচারের মুখোমুখি করতে বাধ্য করার ক্ষমতাই নেই। তাই কমিশনের এ ধরনের অন্তর্নিহিত আইনগত সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে ইতিপূর্বে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে কমিশনকে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। 

অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় নিজে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত উল্লেখ করে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেছেন, এখনো রক্তে আগুন জ্বলে, যখন শুনি জুলাই বিপ্লবের সময় ৭০ জনের লাশ শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পেছনে দাফন করা হয়েছে। এসব কিছু আমরা যখন উন্মোচনের দিকে যাচ্ছি, সেই মুহূর্তে একশ্রেণির মানুষ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারত, নেপালসহ আশপাশের কোথাও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় উৎসবের দিন পালনের জন্য কোনো একটি ছুটির দিন পায় না।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষ ও সরকার অসম্প্রদায়িক বলেই আমরা যেমন ঈদের ছুটি পালন করি, ঠিক একইভাবে দুর্গাপূজা, বৌদ্ধ পূর্ণিমা, খ্রিষ্টানদের বড়দিনের জন্য ছুটি পালন করি। কারণ এদেশের মানুষ মনে প্রাণে অসাম্প্রদায়িক। 

বাংলাদেশের মানুষ সাংস্কৃতিকভাবে মনে করে ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এদেশে লক্ষ কোটি যুবককে রাতের পর রাত সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি এবং মন্দির পাহারা দিতে দেখেছি।
  
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এ আইন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কোনো ঘাটতি নেই। যেখানে সংখ্যালঘুদের ওপর কোনো আক্রমণ নেই। সেই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে বলে কিছু মানুষ দেশকে হেয় করতে চাইছে বিশ্বের কাছে। কদিন আগে এই চট্টগ্রামে আমাদের সুপ্রিম কোর্টবারের সদস্য আলিফকে কি নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। কে বা কারা করেছেন সেটা শীঘ্রই তদন্তের মাধ্যমে উদ্ঘাটিত হতে যাচ্ছে।  

সাংবাদিক ভাইয়েরা নির্দ্বিধায় লিখতে পারবেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, যে কোনো ব্যক্তির সমালোচনা আইনের উর্ধ্বে নয়। আপনারাও কিন্তু আইনের উর্ধ্বে নন। আপনারা আইনের ভেতর থেকে এবং ব্যক্তির স্বাধীনতা রক্ষা করে আপনারা মত প্রকাশ করতে পারবেন। আপনারা সমাজের দর্পণ, আপনাদের যে দায়িত্ব আছে সেই দায়িত্বের জায়গাটাকে ম্রিয়মাণ করবেন না। মানবাধিকার রুদ্ধ দেখে মানুষ আপনাদের কাছে ছুটে যাচ্ছে, আপনাদের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে মানুষ ন্যায়বিচারের কথা তুলে ধরতে পারছে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে  সবার মানবাধিকার নিশ্চিত থাকবে। এ জন্য মানবধিকার সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট এএসএম বদরুল আনোয়ার, সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রেজা, চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন রাজ্জাক, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নওয়াজসহ অনেকে।