চাঁদপুর, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস): চাঁদপুরের হাইমচর মেঘনা নদীতে সারবাহী এমভি বাখেরাহ জাহাজে ৭ খুনের ঘটনায় গ্রেফতার আসামি আকাশ মন্ডল ইরফানের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন চাঁদপুরের আদালত।

আজ বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় চাঁদপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তদন্তকারী কর্মকর্তা নৌ-পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক মো. কালাম খান আসামির ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালতের বিচারক মুহাম্মদ ফারহান সাদিক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) শরীফ মাহমুদ সায়েম এই তথ্য নিশ্চিত করেন। 

এর আগে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে আসামি আকাশ মন্ডল ইরফানকে র‌্যাব-৬ এর সহযোগিতায় র‌্যাব-১১ কুমিল্লার একটি দল অভিযান চালিয়ে বাগেরহাট জেলার চিতলমারী থেকে তাকে গ্রেফতার করে। পরে দুপুরে আসামিকে র‌্যাব-১১ কুমিল্লায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন র‌্যাব-১১ এর উপ-অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন।

গ্রেফতার আকাশ মণ্ডল (২৫) বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট এলাকার জগদীশ মণ্ডলের ছেলে।

বুধবার বিকেলে র‌্যাব-১১ এর একটি দল আসামি আকাশ মন্ডলকে নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চল’র পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হস্তান্তর করেন। সেখান থেকে তাকে কঠোর নিরাপত্তায় র‌্যাব, নৌ-পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে নিয়ে যায়। আদালতে নৌ পুলিশ পরিদর্শক ও তদন্তকারী কর্মকর্তা ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে হাজির করেন। এরপর আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে বিচারক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট শরীফ মাহমুদ সায়েম, মাসুদ প্রধানীয়া, ইয়াসিন আরাফাত ইকরাম ও মো. শাহজাহান খান। তবে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না।

রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট শরীফ মাহমুদ সায়েম সংবাদিকদের জানান, জাহাজে ৭ খুন সারাদেশের আলোচিত একটি ঘটনা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে আদালতে উপস্থিত করে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত শুনানি শেষে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, আমরা আশা করি এই আসামিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসবাদের মাধ্যমে আসামির সাথে অন্য কেউ সংশ্লিষ্ট আছে কিনা এবং রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার জন্য কেউ জড়িত আছে কিনা তা বেরিয়ে আসবে।

এর আগে গত ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর ইশানবালা মাঝেরচর খালের মুখে নোঙর করে রাখা সারবাহী জাহাজ থেকে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় রক্তাক্ত অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুজনের মৃত্যু হয়।
 
খুন হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- জাহাজের মাস্টার ফরিদপুর সদরের জোয়াইর গ্রামের গোলাম কিবরিয়া (৬৫), তার ভাগনে লস্কর শেখ সবুজ (৩৫), সুকানি নড়াইলের লোহাগড়ার আমিনুল মুন্সী (৪০), মাগুরার মহম্মদপুরের মাজেদুল ইসলাম (১৭), একই এলাকার লস্কর সজিবুল ইসলাম (২৬), ইঞ্জিনচালক নড়াইল লোহাগড়া এলাকার সালাউদ্দিন মোল্লা (৪০) এবং মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানার বাবুর্চি রানা (২০)।

এছাড়াও আহত সুকানি জুয়েল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।

ইতোমধ্যে জাহাজে হতাহতের ঘটনা তদন্তে শিল্প মন্ত্রণালয়, চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আলাদা কমিটি করা হয়েছে। জাহাজ মালিক মাহবুব মোর্শেদ মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে হাইমচর থানায় ৩৯৬/৩৯৭ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।