বাসস
  ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:০৪

তিনশো বছরের পুরানো হাতিয়া দ্বীপে যাতায়াতে দুর্ভোগ, ফেরী পেলে বদলে যাবে জীবনযাত্রা

॥ এ.এস.এম. নাসিম ॥

নোয়াখালী, ১ জানুয়ারী, ২০২৫ (বাসস) : যতদূর চোখ যায় শুধুই পানি আর পানি। মাঝে রয়েছে একটি বড় দ্বীপ। দ্বীপটিতে বসবাস প্রায় আট লাখের বেশি মানুষের। নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চিত্র এটি। বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে তিনশো বছর ধরে মানুষের বসবাস থাকলেও যাতায়াত নিয়ে এখনো ভোগান্তির অন্ত নেই। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যাতায়াত আধুনিক ব্যবস্থা করা সহজ হলেও সিন্ডিকেটের কারণে থমকে আছে সেই সুযোগ।

স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে মেঘনার বুকে জেগে ওঠা ২ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটারের দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। প্রায় তিনশো বছর আগে এই দ্বীপে প্রথম জনবসতি গড়ে উঠে। সেখান মানুষের বাড়তে শুরু করে বসতি।

বর্তমানে আট লাখের বেশি মানুষ এখানে বসবাস করছে। এখানের যোগাযোগের প্রধান এবং একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। নোয়াখালী জেলা থেকে ১৮ কিলোমিটার নৌপথে পাড়ি দিয়ে দ্বীপটিতে যেতে হয়। আর এই পথ পাড়ি দিতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় এখানে বসবাসরতদের।

জরুরী কাজে কিংবা কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও ঝুঁকি নিয়ে স্প্রীডবোট কিংবা ট্রলারেই তাদের একমাত্র ভরসা। বর্ষাকালে নদী অধিক উত্তাল থাকলেও এই দ্বীপের জনগনের নদী পারাপারে নেই বিকল্প কোন ব্যবস্থা। অতীতে বিভিন্ন সময় দ্বীপটিতে যাতায়তের সমস্যা সমাধানের লক্ষে সরকারীভাবে একাধিক সমিক্ষা চালানো হলেও কার্যত তার কোন ফল পায়নি স্থানীয়রা। এর জন্য একাধিক সিন্ডিকেটকে দুষছেন স্থানীয়রা।

হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু জাহেদ মামুন বলেন, এমন একটি দ্বীপে জন্ম নিয়েছি যেখানে চাইলেও কেউ নিজের মন মত দেশের কোথাও যেতে পারি না। আমাদের হাতিয়া থেকে অন্য কোথাও যেতে হলে সিট্রাক এবং স্পিডবোট আমাদের একমাত্র ভরসা। বর্ষাকালে এবং নদীতে যখন অনেক জোয়ার থাকে  তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়েই আমদের নদী পার হতে হয়। তার উপর গুনতে হয় বাড়তি ভাড়া। 

বুড়িরচর ইউনিয়নের  সৈকত দাস বলেন, হাতিয়া বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা একটি দ্বীপ। এ দ্বীপটিকে পরিকল্পিতভাবে সাজালে এটি একটি দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে পারে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা এখনো এই দ্বীপের চলাচলের সহজ কোনো উপায় করতে পারিনি। এ দ্বীপের বয়স ৩০০ বছরের বেশি হলেও এখানের মানুষ এখনো বাস কিংবা বড় গাড়ি কখনো চলাচল করতে দেখেনি। 

নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আবু রায়হান বলেন, আমাদের হাতিয়া দ্বীপবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আমাদের এই রুটে ফেরি চলাচল করবে । কিন্তু একটি অসাধু চক্রের কারণে এ প্রকল্পটি বিভিন্ন সময় সমীক্ষার পরও থেমে গেছে। আমরা বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই আমাদের এই রুটে যেন দ্রুত ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করে। এই রুটে ফেরি চলাচল করলে আমাদের হাতিয়ার অর্থনীতির পুরো চিত্রই পরিবর্তন হয়ে যাবে। 

নিমতলীর বাসিন্দা মো. সুমন জানান, হাতিয়া উপজেলার হরণি এবং চানন্দি ইউনিয়ন থেকে নলচিরা ঘাটে ফেরী চলাচলের সুযোগ থাকলেও নেই কোনো ব্যবস্থা। নোয়াখালী-হাতিয়া নৌ রুটে ফেরি চালু করলে হাতিয়া উপজেলার সঙ্গে সড়কপথে সাধিত হবে যোগাযোগের নতুন বিপ্লব, বন্ধ হবে ঘাট কেন্দ্রিক সিন্ডিকেটের হয়রানি।

নলচিরা ঘাট এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণ দাস জানান, বর্তমান সময়েও দেশের মূল ভূখন্ডের সাথে আমাদের ফেরি চলাচল না থাকাটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। আমরা চাই সকল সিন্ডিকেট বন্ধ করে বর্তমান সরকার আমাদের অঞ্চলের জন্য ফেরি বরাদ্দ করুক। নোয়াখালী থেকে আমাদের এই দ্বীপের ফেরি চলাচল শুরু হলে আমরা প্রতিদিন সকালে শহরে গিয়ে বিকেলে আবার নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারবো। বর্ষা কিংবা দুর্যোগের সময়ও আমাদের বড় কোন ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হবে না। 

প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ চলাচল করা নোয়াখালী-হাতিয়া রুটে ফেরীর অত্যাবশ্যকতা রয়েছে বলে জানান স্থানীয় প্রশাসন। 
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন বলেন, পর্যটনের অপার সম্ভাবনার এই দ্বীপের যাতায়াত ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হলে ঘুরে যাবে এই দ্বীপের অর্থনীতির চাকা, লাঘব হবে দ্বীপে বসবাসরতদের দুর্ভোগ। ইতোমধ্যে এই রুটে ফেরী চালুর লক্ষে ১০ দশমিক ৮৪ কোটি টাকার চাহিদা সম্বলিত চিঠি দেয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। আশা করছি দ্রুত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।