শিরোনাম
রংপুর, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, দেশের গণমাধ্যম হাউজগুলোতে সবচেয়ে বেশি দরকার প্রাতিষ্ঠানিকতা। আংশিক নয়, সাংবাদিকতা হতে হবে পুরো সত্য।
তিনি বলেন, ‘সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে হবে। সব ভয়-ভীতি ও লোভ-লালসার উর্ধ্বে উঠে জাতির সামনে সত্য তুলে ধরতে হবে। যারা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সাহস রাখেন না, তাদের জন্য অন্তত সাংবাদিকতা নয়।’
আজ শনিবার রংপুর টাউন হলে রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন আয়োজিত সাংবাদিক সমাবেশে তিনি এসব বলেন।
রংপুর ছাড়াও দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, সৈয়দপুর, বগুড়ার সাংবাদিকগণ সমাবেশে যোগ দেন।
সমাবেশের উদ্বোধন করেন ২৪-এর জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়’র মা ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সদস্য শামসি আরা জামান কলি।
রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন- বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, ড. সাদিকুল ইসলাম স্বপন, এরফানুল হক নাহিদ, মমতাজ শিরীন ভরসা, বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সল, পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী, পুলিশ সুপার আবু সাইম, সাংবাদিক স্বপন চৌধুরী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর বিভাগের সমন্বয়ক ইমরান আহমেদ, জামিল আহমেদ ও নাহিদ হাসান খন্দকার, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক ও সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক, সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম মানিক। দিনাজপুরের জি এম হিরী, কুড়িগ্রামের তামজিদ হাসান, গাইবান্ধার সৈয়দ রোকনুজ্জামান, লালমনিরহাটের বকুল রায়, নীলফামারীর ইয়াসিন মুহাম্মদ সিপু, ঠাকুরগাঁওর আল মাহমুদ ইমন, পঞ্চগড়ের মোশাররফ হোসেন, টেলিভিশন জার্নালিস্ট ফোরামের এহসানুল হক সুমন, শরীফা শিউলি, আসাদুজ্জামান আফজালসহ আরও অনেকে।
কাদের গনি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য দরকার সাংবাদিকের লড়াকু মন, গণমাধ্যমের প্রাতিষ্ঠানিকতা আর গণতান্ত্রিক শাসন। কিন্তু এ তিনটিরই বড্ড অভাব রয়েছে। সাংবাদিকতা আসলে কেবল তথ্য-উপাত্ত ও ঘটনার বিবরণ সংগ্রহের পেশা নয়; এটির ভিত্তি হচ্ছে তথ্য যাচাই করাও।
এই সাংবাদিক নেতা বলেন, দুই-একটি বাদ দিলে গণমাধ্যম হাউজগুলোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিকতা নেই। তাই তারা সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ অবস্থানকে সমর্থন করতে পারে না এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সুরক্ষাও দিতে পারে না, বরং অধিকাংশ গণমাধ্যম মালিক রাজনীতি ও ব্যবসার ঢাল হিসেবে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করছেন।
অপসাংবাদিকতা, হলুদ সাংবাদিকতা ও তথ্য সন্ত্রাস সাংবাদিকতার মর্যাদাকে ম্লান করে দিচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন- রাজনীতিক, আমলা এবং বিজ্ঞাপনদাতারা গণমাধ্যমকে তাদের মতো করে ব্যবহার করতে চায়, কখনও-কখনও এরা গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মীদের জীবনও বিপন্ন করে তোলে। গত ১৫ বছরে ষাটের অধিক সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন এসব কারণে। তাই গণমাধ্যমের প্রাতিষ্ঠানিকতা খুব দরকার। বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের দেশে দুই-একটি বাদ দিলে গণমাধ্যম হাউজগুলোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিকতা নেই।
বিএফইউজে মহাসচিব বলেন, বস্তুনিষ্ঠতা মানে হলো কোনো ঘটনাকে বা বিষয়কে বাড়িয়ে বা কমিয়ে না বলা।
যাকে বা যার প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের তিনি রিপোর্ট করবেন তার বক্তব্য অবশ্যই থাকতে হবে। ঘটনা এবং বিষয়ে অনিবার্যভাবে একাধিক পক্ষ থাকে। সবার সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট করতে হবে। এক পক্ষের কথা শুনে অন্য পক্ষকে ঘায়েল করা সাংবাদিকতা নয়। সাংবাদিককে নিরপেক্ষ থাকতে হয়। এটা না করলে আপনি ‘সাংবাদিক’ না আপনি ‘সাংঘাতিক’। আপনাকে মানুষ ঘৃণা করবে। আপনাকে জনরোষে পড়তে হবে। দেখছেন না জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর অনেক দালাল সাংবাদিককে পালাতে হয়েছে! এটা গণমাধ্যমের জন্য লজ্জার।
ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত গণমাধ্যম। গণতন্ত্র, সুশাসন ও আইনের শাসনের নিরন্তর সহযোগী। কাজেই যে সরকারই আসুক সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন কোনোভাবেই কাম্য নয়।
শহিদুল ইসলাম বলেন, ভালো সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি অপ-সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে হবে। গত ১৫ বছর দেশ সাংবাদিকতা বলে কিছুই ছিল না। সাংবাদিকরা যেন স্বস্তি নিয়ে কাজ করতে পারে সে লক্ষ্যে সাংবাদিক ইউনিয়ন কাজ করছে।
এরফানুল হক নাহিদ বলেন, গণমাধ্যম অতীতের স্বৈরশাসকদের তোষামোদ করে চলেছে তাদের নিজস্ব স্বার্থে বা তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক ও আর্থিক স্বার্থ রক্ষার জন্য। এর ফলে, তারা নিজেদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারেনি।