বন অধিদপ্তরের প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অভিযান

বাসস
প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:৪৫

ঢাকা, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : বন অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম, বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ, বদলি ও পদোন্নতিসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট সোমবার বন ভবনে এই অভিযান পরিচালনা করে।

দুদকের এই অভিযান পরিচালনা করেন সহকারী পরিচালক মো. ইসমাঈলের নেতৃত্বাধীন এনফোর্সমেন্ট টিম। 

অভিযানের সময় প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী, উপপ্রধান বন সংরক্ষক এবং টেকসই বন ও জীবিক (সুফল) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক গোবিন্দ রায়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। 

অভিযান শেষে দুদক টিম আজ এনফোর্সমেন্ট প্রতিবেদন দাখিল করে।

প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরীর অধীনে প্রশাসনিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার অভাব রয়েছে। বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতার অভাবে গুরুতর অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার দপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয়িত অর্থের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের বিষয়ে তিনি কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

এছাড়া, তার তত্ত্বাবধানে বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসে। নির্ধারিত নীতিমালা উপেক্ষা করে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি ও নিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে।

দপ্তরের প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম এতটাই প্রকট যে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে দায়িত্বশীলতার সংকট দেখা দিয়েছে। 

বদলি ও পদায়ন নীতিমালার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির বিস্তারের ফলে বন অধিদপ্তরের প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বদলি ও পদোন্নতি ‘বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বদলি সংক্রান্ত নীতিমালা, ২০০৪’ অনুসারে হওয়ার কথা থাকলেও, এটি অনুসরণ করা হয়নি। 

বিভিন্ন বন বিভাগের রেঞ্জ ও স্টেশন পোস্টিংয়ে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বদলি ও পদায়নের তথ্য পাওয়া গেছে, যেখানে প্রধান বন সংরক্ষকের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

এছাড়া টেকসই বন ও জীবিক (সুফল) প্রকল্পের অধীনে গত দুই অর্থবছরে ৮৭২ হেক্টর নার্সারি ও বনায়ন করার পরিকল্পনা থাকলেও, তদন্তে দেখা গেছে, উল্লেখযোগ্য অংশে কোনো বনায়ন করা হয়নি। কিছু এলাকায় শুধু সীমানা নির্ধারণের জন্য সামান্য চারা লাগানো হয়েছে।

অভিযান চলাকালে আরও জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা বিট এলাকায় ৫১০ হেক্টর বনভূমিতে নতুন বাগান সৃজনের বরাদ্দ থাকলেও, বাস্তবে মাত্র ১৬০ হেক্টরে বনায়ন হয়েছে। 

একইভাবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৩৬২ হেক্টর বনায়ন প্রকল্পেও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব প্রকল্পে অর্থের অপচয় ও আত্মসাতের ক্ষেত্রে প্রধান বন সংরক্ষকের অসহযোগিতা ও নজরদারির অভাব সুস্পষ্ট।

এনফোর্সমেন্ট টিম আরও জানতে পারে, অধিকাংশ এলাকায় চারা রোপণের নামে বরাদ্দ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। যেখানে গাছের অস্তিত্ব নেই, সেখানে সরকারি সাইনবোর্ড বসানো হয়েছে। পরিচর্যার অভাবে রোপিত চারাগুলোর বেশিরভাগই মারা গেছে।

এই অভিযানের মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে কমিশন পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ইউরোপ সফর করছেন চীনের শীর্ষ কূটনীতিক
রাজধানীতে শিশু ধর্ষণচেষ্টা মামলায় শুকুর আলীর ১০ বছর কারাদণ্ড
চিলমারীর আকাশে ও ব্রহ্মপুত্র পাড়ে  ড্রোন উড়িয়ে পুলিশের নজরদারি
সাবেক এমপি মমতাজসহ তিনজনকে নতুন মামলায় গ্রেফতার
পিরোজপুরে জরাজীর্ণ স্কুল ভবনে চলছে শ্রেণি কার্যক্রম
খুলনায় কৃষি দপ্তর আয়োজিত ‘পার্টনার ফিল্ড স্কুল কংগ্রেস’ অনুষ্ঠিত
শেরপুরে অগ্নিকাণ্ডে ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে
ময়মনসিংহ বিভাগীয় শিশুশ্রম কল্যাণ পরিষদের ১০ম সভা অনুষ্ঠিত
পটুয়াখালী বাস টার্মিনালের বেহাল দশা, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
ডিবি পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় নগদ টাকাসহ গ্রেফতার ৩
১০