বিপুল ইসলাম
লালমনিরহাট, ১৫ মে ২০২৫ (বাসস) : মধুমাস জ্যৈষ্ঠ শুরু হতে না হতেই জেলার বাজারগুলোতে সীমিত আকারে রসালো ফল লিচু উঠতে শুরু করেছে। তবে সরবরাহ কম হওয়ায় বাজারে এখনো লিচুর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।
এই অঞ্চলে এ সময়ে আম, কাঁঠালসহ নানা রসালো ফলের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে, অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও ফল উৎপাদন ও বিক্রির মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বাজারে স্থানীয় জাতের লিচু উঠতে শুরু করেছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বোম্বাই জাতের লিচু বাজারে পাওয়া যাবে। চায়না-৩ (হাইব্রিড), বোম্বাই এবং মাদ্রাজ জাতের লিচু এই অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়। ফলে অনেক কৃষক এসব জাতের লিচু চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
মৌসুমি ব্যবসায়ীরা শহরের বিডিআর গেট, মিশন মোড়, পৌরবাজার, গোশালা বাজার, চাঁদনী বাজার, হাড়িভাঙ্গা, বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন ও কোর্ট বাজার এলাকায় অস্থায়ী দোকান স্থাপন করেছেন। এসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে আকর্ষণীয় ও মানসম্মত লিচু।
লিচুর মৌসুম শুরু হওয়ায় আকার ও গুণগত মান অনুযায়ী প্রতি ১০০ লিচু ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, সরবরাহ কম থাকায় দাম বেশি, তবে সরবরাহ বাড়লে দামও কমে আসবে।
জেলা সদরের চাষি আজিজ আলী জানান, এক বিঘা জমিতে ২০টি লিচু গাছে এ বছর প্রচুর ‘গুটি’ এসেছে। তার অভিজ্ঞতায়, পাঁচ বছর বয়সী একটি গাছ থেকে বছরে ১০০ থেকে ১৫০ কেজি পর্যন্ত লিচু পাওয়া যায়। যা প্রায় ২ হাজার থেকে ৫ হাজারটি লিচুর সমান।
কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, এই অঞ্চলের অনেক বসতবাড়ির জমিতে লিচুর বাগান গড়ে উঠেছে। তিনি জানান, এ বছরের আবহাওয়া লিচু চাষের জন্য অত্যন্ত অনুকূল। তাই ভালো ফলনের ব্যাপারে তারা আশাবাদী।
উপযুক্ত মাটি, অনুকূল জলবায়ু এবং লাভজনক বাজার মূল্যের কারণে লালমনিরহাটে ফল চাষ, বিশেষ করে লিচু চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এতে তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
লিচু চাষি মনসুর রহমান বলেন, প্রতি বছর তার বাগান থেকে উল্লেখযোগ্য লাভ হয়, যা তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সহায়ক।
লিচু ব্যবসায়ী হবিব আলী জানান, তিনি গত আট বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে জড়িত। প্রতি বছরই লাভজনক হওয়ায় তিনি ধীরে ধীরে লিচু চাষের জমি বাড়াচ্ছেন।
লিচু ব্যবসায়ী আকবর আলী জানান, তিনি এ বছর ৫০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে চায়না-৩, বোম্বাই ও মাদ্রাজ জাতের লিচুর চাষ করছেন। প্রতিদিন পাঁচজন শ্রমিক বাগানের পরিচর্যা করেন। ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে আগত ব্যবসায়ীরা ফল কেনা শুরু করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন জানান, এ বছর জেলায় ২৪৪ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে। বসতবাড়িতেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে লিচু চাষ বেড়েছে। বাণিজ্যিক চাষের পাশাপাশি বসতবাড়ির আঙিনায় উচ্চফলনশীল জাতের লিচু চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তার মতে, লালমনিরহাটে আম ও লিচুর বাণিজ্যিক চাষ দিন দিন বাড়ছে। যা জেলার কৃষি অর্থনীতিকে আরও মজবুত করবে।