কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬ তম জন্মবার্ষিকী : ঢাবিতে কাল নানা কর্মসূচি

বাসস
প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ১৭:৩৫
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ফাইল ছবি

ঢাকা, ২৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬ তম জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

তিনি ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ, মঙ্গলবার, ২৪ মে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যের জীবনের পরতে পরতে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। জড়িয়েছিলেন নানা পেশায়। ১৯১৭ সালে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। অংশ নেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও।

যথাযোগ্য মর্যাদায় আগামীকাল ২৫ মে ২০২৫ (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২) রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬ তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপিত হবে। এ উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দ আগামীকাল রোববার সকাল সোয়া ছয়টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হবেন। সেখান থেকে তারা সকাল সাড়ে ৬টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান-এর নেতৃত্বে শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধিতে গমন, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান-এর সভাপতিত্বে কবি’র সমাধি প্রাঙ্গণে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জনসংযোগ দফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম আজ এ কথা জানান।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, সাংবাদিক, দার্শনিক ও সমাজচিন্তক। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যার স্থান চিরভাস্বর। তার সাহিত্যকর্ম ও সংগীতশিল্পী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে, সমাজ পরিবর্তনের পথ দেখায়। কাজী নজরুল ইসলাম একটা প্রতিষ্ঠান ও আন্দোলনের নাম, যুগে যুগে এক জীবন্ত আদর্শ। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, সঙ্গীত আর দর্শনেও নজরুলের অনবদ্য উপস্থিতি বর্ণাঢ্য করেছে বাংলা সাহিত্যকে। কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের সূচনা হয়েছিল দারিদ্র্য আর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে। ছোটবেলায় পিতৃহারা নজরুল মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করেছেন, লেটো গানে অংশ নিয়েছেন। কঠিন জীবনসংগ্রাম তাকে দমাতে পারেনি। তিনি সাহিত্য ও সংগীতের মাধ্যমে সমাজের বৈষম্য, শোষণ, কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন।

কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য জীবনের সূচনা ঘটে বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে। তৎকালীন প্রভাবশালী কবি-সাহিত্যিকদের সংস্পর্শে আসেন তিনি। ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় তার বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ যা বাংলা সাহিত্যে সৃষ্টি করে নতুন এক ধারা। এই কবিতায় কবি নিজের আত্মাকে রূপ দিয়েছেন এক বিরাট শক্তিতে, যিনি অন্যায়, শোষণ ও ভণ্ডামির বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেন সাহসের ঘোষণা। এই কবিতা কবি কাজী নজরুল ইসলামকে শুধু সাহিত্যের জগতে নয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনেও পরিচিত করে তোলে। তার লেখা প্রবন্ধ, কবিতা ও গল্প ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে গণচেতনাকে উজ্জীবিত করে।

কাজী নজরুল ইসলামের অমর সৃষ্টি প্রায় চার হাজার গান লিখে ও সুর দিয়ে বাংলা সংগীতকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার গানে আছে প্রেম, প্রতিবাদ, ধর্মীয় ভাব, আধ্যাত্মিকতা এবং সাম্যবাদের স্পষ্ট প্রকাশ। কাজী নজরুল ইসলাম তার গদ্য সাহিত্যে তুলে ধরেছেন সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ। তার উপন্যাস ‘মৃত্যুক্ষুধা’ ও ‘কুহেলিকা’ প্রগতিশীল চিন্তার ধারক। যুগবাণী, দুর্দিনের যাত্রী, রাজবন্দির জবানবন্দি প্রভৃতি প্রবন্ধগ্রন্থে তিনি সমসাময়িক সমাজ ও রাজনীতির নির্ভীক সমালোচনা করেছেন।

আজকের পৃথিবীতে যখন বিদ্বেষ, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও বৈষম্য বাড়ছে, তখন তার অমর সৃষ্টি আমাদের জন্য ‘আলোর দিশারি’। কাজী নজরুল বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর দ্যুতি। তার জন্মবার্ষিকী স্মরণ করিয়ে দেয় যে কবির আদর্শ ও ভাবনা আজও প্রাসঙ্গিক। বৈষম্য, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও সামাজিক অবিচার যখন বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের বিষয়, তখন তার জীবনদর্শন আলো জ্বালাতে পারে।

‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার জন্য নজরুলকে দেওয়া হয় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড।

সাহিত্যের পাশাপাশি সংগীত ও চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেছেন নজরুল। নিজের পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ধ্রুব’তে অভিনয়ও করেছিলেন। তাই শুধু কবি পরিচয়েই আবদ্ধ নন কাজী নজরুল।

১৯৭২ সালে কবি নজরুলকে সপরিবারে নিয়ে আসা হয় স্বাধীন বাংলাদেশে। এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এই মহাবিদ্রোহী ও প্রেমিক পুরুষ। কবির ইচ্ছানুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পুলিশ সদস্যদের পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ আইজিপির
ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে নিহত সৈনিকদের সমাধিতে কুটনৈতিকদের শ্রদ্ধাঞ্জলি
তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সাক্ষাৎ : চব্বিশের শহীদ পরিবার বিএনপি’র সঙ্গে কাজ করবে
ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তির অনলাইন আবেদনের সময় বাড়ল
অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজপথ আর উত্তপ্ত হতে দেব না : সালাহউদ্দিন আহমেদ
মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে খেলাধুলা : হাসনাত আব্দুল্লাহ
৭ নভেম্বর শুরু হওয়া দলকে সংস্কার শেখাতে হবে না : মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল
রাজশাহীতে আইডিইবি’র ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত
আল্লামা ইকবালের ১৪৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাবি ও প্রেসক্লাবে সেমিনার
সাংবাদিকদের দলবাজি ত্যাগ করে পেশাদারিত্ব সমুন্নত রাখতে হবে : এম আবদুল্লাহ
১০