নওগাঁয় জমজমাট পশুর হাট, চাহিদার চেয়ে যোগান বেশি

বাসস
প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ১১:৫৫
নওগাঁয় জমজমাট পশুর হাট। ছবি: বাসস

বাবুল আখতার রানা

নওগাঁ, ২৬ মে ২০২৫ (বাসস) : ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলার হাটগুলোতে কোরবানির পশুর কেনা-বেচা জমে উঠেছে। হাটগুলোতে গরু উঠছে প্রচুর। হাটে বড় গরুর তুলনায় ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। এসব গরু উপযুক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে বড় গরু আমদানির তুলনায় চাহিদা কম হওয়ায় প্রত্যাশার চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

উত্তরবঙ্গের অন্যতম বড় পশুর হাট হিসেবে পরিচিত নওগাঁর মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া পশুর হাট। প্রতি হাটে সেখানে ১৫ থেকে ২০ হাজার গরু-ছাগল বিক্রি হয়। সরেজমিন দেখা গেছে, দুপুর থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে মিনি ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, ইঞ্জিনচালিত যান ভটভটি ও নছিমনে করে গরু-ছাগল নিয়ে হাটে আসতে থাকেন বিক্রেতারা। দুপুর ২টা নাগাদ গরু ও ছাগলে হাট ভরে যায়। বৃষ্টির মধ্যেই গরু-ছাগল কেনা-বেচা চলতে দেখা যায়।

ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাটে যে পরিমাণ গরু আমদানি হয়েছে, সে তুলনায় ক্রেতা নেই। স্থানীয় লোকজন কোরবানি দেওয়ার জন্য গরু কিনলেও ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় বড় বাজারের ব্যাপারী ও গরু ব্যবসায়ীরা গরু কিনছেন না। ফলে বেচাবিক্রি তুলনামূলক কম। নওগাঁতে সাধারণত কোরবানি ঈদের দুই-তিন সপ্তাহ আগে থেকেই গবাদিপশুর হাটগুলোতে বেচাবিক্রি জমে যায়। সে তুলনায় এবার ঈদের বাকি আর ১০-১১ দিন, কিন্তু পশুর হাটে কেনা-বেচা খুব একটা জমেনি।

খামারী ও গৃহস্থ গরু বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চাহিদার তুলনায় হাটগুলোতে অনেক বেশি গরু উঠছে। ফলে বেচাবিক্রি আগের বছরগুলোর তুলনায় কম। স্থানীয় কোরবানিদাতারা ছোট ও মাঝারি গরু কিনছেন বেশি। বড় গরু বিক্রেতাদের প্রত্যাশার চেয়ে কম দামে গরু বিক্রি করতে হচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে লোকসান দিয়েও গরু বিক্রি করছেন। শেষ পর্যন্ত বড় গরুর দাম এমন থাকলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন খামারি ও গৃহস্থেরা।

মান্দা উপজেলার দেলুয়াবাড়ি এলাকা থেকে নিজের খামারের ১২টি গরু নিয়ে চৌবাড়িয়া হাটে বিক্রি করতে এসেছিলেন খামারি আনোয়ার হোসেন। চৌবাড়িয়া পশুর হাটে বিকেল ৪টার দিকে তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, বড় আকৃতির ১২টি গরু বিক্রি করতে এনেছি। দুপুর ১টার দিকে গরুগুলো বিক্রির জন্য হাটে তুলেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি করতে পারিনি। প্রতিটি গরুর দাম ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রত্যাশা করছি। কিন্তু ক্রেতারা দাম বলছেন ৮৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত। কেনা ও লালন-পালনের খরচসহ প্রতিটি গরুর দাম ১ লাখ টাকার নিচে হলে আমার লোকসান হবে। এর আগে আরও দুটি হাট ঘুরেছি। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম না পাওয়ায় বিক্রি করিনি। শেষ পর্যন্ত এই দাম থাকলে লোকসান দিতে  হবে।

তবে ছোট ও মাঝারি গরু যারা বিক্রি করতে এসেছিলেন তারা অনেকটাই সন্তষ্ট। প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম পেয়েছেন বলে বিক্রেতাদের অনেকেই জানিয়েছেন। নিয়ামতপুর উপজেলার রামনগর এলাকা থেকে গরু বিক্রি করতে আসা আনিছার রহমান বলেন, বাড়িতে লালন-পালন করা মাঝারি আকারের একটি ষাঁড় গরু বিক্রি করলাম। গরুটার দাম ৯০ হাজার টাকা চেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। চাওয়া দামের চেয়ে মাত্র ৫ হাজার টাকা কম দামে বিক্রি করতে পেরেছি। এই দামে আমি সন্তুষ্ট।

রাজশাহীর তানোর উপজেলা থেকে গরু কিনতে এসেছিলেন একটি বেসরকারি কলেজের প্রভাষক হামিদুল ইসলাম। তিনি একটি গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। গরুর দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৬৫ হাজার টাকায় এই মাঝারি আকারের বকনা কিনলাম। ধারণা করছি ২ মণ ৩০ কেজি থেকে ৩ মণ পর্যন্ত মাংস হতে পারে। গতবার এ ধরনের গরু ৫৫-৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। সে তুলনায় এবার দাম কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে। তারপরেও লাভ- লোকসান যাই হোক কোরবানির নিয়তে গরু কিনেছি। দোয়া করি, আল্লাহ যেন কোরবানিটা কবুল করেন।

চৌবাড়িয়া পশুর হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি সাইদুল ইসলাম বলেন, গতবারের তুলনায় এবার হাটে গরুর আমদানি বেশি। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকেই হাটে কোরবানি উপলক্ষে প্রচুর গরুর আমদানি হচ্ছে। তবে আমদানির তুলনায় বেচাবিক্রি কম। ছোট ও মাঝারি গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে। সে তুলনায় বড় গরু বিক্রি হচ্ছে কম। ঈদের আগে এখানে আর দুই দিন হাট বসবে। এই দুই হাটে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় বাজারের ব্যাপারী ও ব্যবসায়ীরা ঢুকলে বড় গরুর চাহিদা বাড়তে পারে।

নওগাঁর পুলিশ সুপার সাফিউল সারোয়ার বলেন, পশুর হাটকে কেন্দ্র করে জেলার কোন সড়ক কিংবা মহাসড়কে যেন কেউ কোন চাঁদা আদায় করতে না পারে সেজন্য জেলা পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া জেলার প্রতিটি হাটের পরিবেশ সুন্দর রাখার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মাহফুজার রহমান বলেন, দেশের বাইরে থেকে কোন গবাদিপশু আমদানি না করায়  জেলার ছোট-বড় সকল শ্রেণির খামারিরা গবাদিপশুর ভালো দাম পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, জেলায় ছোট-বড় ১০৪টি হাট রয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী গবাদিপশুর হাট রয়েছে ৩৮টি। মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া ও সতিহাট, নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়া, মহাদেবপুর উপজেলার মহাদেবপুর সদর ও মাতাজীহাট, নওগাঁ সদরের ত্রিমোহনী, বদলগাছীর কোলা, রানীনগরের আবাদপুকুর, আত্রাইয়ের আহসানগঞ্জ, পত্নীতলার মধইল, পোরশার মশিদপুর এবং সাপাহারের দীঘিরহাটে গবাদিপশু বেশি বিক্রি হয়। প্রতিটি হাটে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পুলিশ সদস্যদের পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ আইজিপির
ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে নিহত সৈনিকদের সমাধিতে কুটনৈতিকদের শ্রদ্ধাঞ্জলি
তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সাক্ষাৎ : চব্বিশের শহীদ পরিবার বিএনপি’র সঙ্গে কাজ করবে
ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তির অনলাইন আবেদনের সময় বাড়ল
অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজপথ আর উত্তপ্ত হতে দেব না : সালাহউদ্দিন আহমেদ
মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে খেলাধুলা : হাসনাত আব্দুল্লাহ
৭ নভেম্বর শুরু হওয়া দলকে সংস্কার শেখাতে হবে না : মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল
রাজশাহীতে আইডিইবি’র ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত
আল্লামা ইকবালের ১৪৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাবি ও প্রেসক্লাবে সেমিনার
সাংবাদিকদের দলবাজি ত্যাগ করে পেশাদারিত্ব সমুন্নত রাখতে হবে : এম আবদুল্লাহ
১০