ঢাকা, ২৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকার মূল্যস্ফীতির হার আরও নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে, যদিও এটি কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। গত বছর বন্যার কারণে কৃষি খাতে বড় ক্ষতি হয়েছে। তবে এবার ভাল ফসলের আশা করছি।’
সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে বাসসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আসন্ন বাজেটের (২০২৫-২৬ অর্থবছর) প্রধান বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে গিয়ে অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন। এটা হতে যাচ্ছে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের আশাবাদের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আশা করছি ডিসেম্বরের (২০২৫) মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে এবং আগামী বছরের জুন নাগাদ এটি ৬ থেকে ৭ শতাংশে নামবে। তবে কিছুটা সময় লাগবে।’
জাতীয় সংসদ কার্যকর না থাকায় অর্থ উপদেষ্টা টেলিভিশনে ভাষণের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করবেন। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে যা অনুমোদিত হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার হবে আনুমানিক ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম।
২০০৭-০৮ অর্থবছরের পর এই প্রথম কোনো অন্তর্বর্তী সরকার টেলিভিশন ভাষণে বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। তৎকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম টেলিভিশন ভাষণের মাধ্যমে পর পর দুটি বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন।
আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো অগ্রাধিকার খাতের চাহিদা পূরণের চ্যালেঞ্জগুলো সরকার কীভাবে মোকাবিলা করবে জানতে চাইলে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি এক সময় ১১ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছালেও এখন তা ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত উভয় ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে, তবে ধীরে ধীরে তা কমছে।’
তিনি বলেন, ‘রমজানে সরবরাহ ব্যবস্থা জোরদার করায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং এখন পরিস্থিতি মোটামুটি স্থিতিশীল।’
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চাহিদা ও সরবরাহ উভয় বিষয়েই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চাহিদার দিকটি মুদ্রানীতি কঠোর করে এবং সরবরাহের দিকটি উৎপাদনে জোর দিয়ে সামাল দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘লক্ষ্য অর্জন কঠিন হলেও আমরা তা অর্জন করতে পারব বলে আশাবাদী।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে দেশের সার্বিক পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০২৫ সালের মার্চে ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী প্রবণতার কারণেই মূলত এই সামান্য হ্রাস ঘটেছে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২৫ সালের মার্চ মাসে ছিল ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
এদিকে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হারও সামান্য হ্রাস পেয়ে এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ হয়েছে , যা ২০২৫ সালের মার্চ মাসে ছিল ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ।
গত মাসে গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। গ্রামীণ এলাকায় এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা মার্চে ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।
বর্তমান ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘যে-সব ব্যবসায়ীর রেকর্ড ভালো তাদের এলসি খোলার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে যাদের ঋণ খেলাপি আছে তারা ব্যাংক থেকে কাঙ্ক্ষিত সহায়তা পাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘এখন ব্যবসা স্থবির হয়ে পড়েছে এমন নয় বরং রপ্তানিকারকরা এখন প্রণোদনা পাচ্ছেন।
গত আট মাসে সরকার আইএমএফ থেকে বাজেট সহায়তা না পেলেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও কারেন্ট অ্যাকাউন্টের অবস্থা মোটামুটি ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ইতোমধ্যেই আভাস দিয়েছেন জুন মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে এবং তা ধীরে ধীরে ৩০ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে ।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগে কিছু কৃত্রিম ব্যবস্থার মাধ্যমে রিজার্ভ ৪২ থেকে ৪৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল, যা সঠিক নয়।
তিনি বলেন, কোনো দেশের আদর্শ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নির্ভর করে সেই দেশের জিডিপি পরিস্থিতি, ব্রড মানির সঙ্গে সম্পর্ক, ঋণ পরিশোধ সক্ষমতা এবং অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য রিজার্ভের উপর।
‘আমরা মনে করি, আমাদের তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে যথেষ্ট রিজার্ভ রয়েছে। সামগ্রিকভাবে রিজার্ভ এখন স্থিতিশীল অবস্থায় আছে।’
অর্থ উপদেষ্টা বরেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধীরে ধীরে ৪৫ থেকে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছালে তা আরও স্বস্তিদায়ক হবে। ‘আমি আশাবাদী যে রিজার্ভ আরও বাড়বে তবে এ লক্ষ্যে আরও বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রয়োজন।’