ঢাকা, ২৫ জুন, ২০২৫ (বাসস): বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সঙ্গে গভীরতর অংশীদারিত্বে যুক্ত হওয়ার জন্য জাপানি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এমন একটি জায়গা যেখানে সম্ভাবনা এবং কর্মদক্ষতা একত্রিত হয়ে সফলতার ভিত্তি তৈরি করে, আর অংশীদারিত্ব আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায়। এটি শুধুই একটি বিনিয়োগ প্রস্তাব নয়, এটি একটি অংশীদারিত্বের ডাক, যেখানে আমরা একটি টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি।”
আজ বুধবার (২৫ জুন) জাপানের রাজধানী টোকিওতে একটি উচ্চপর্যায়ের বিনিয়োগ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। যেখানে জাপানি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) এবং বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে (বেপজা ইজেড) বিনিয়োগের সুযোগগুলো অন্বেষণের আহ্বান জানানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সম্প্রতি জাপান সফরের ধারাবাহিকতায় এই সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
সফরকালে বিনিয়োগ, জ্বালানি ও প্রযুক্তি খাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারে একাধিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
মারুহিসা প্যাসিফিক কোম্পানি লিমিটেড, ইয়োকোহামা লেবেলস অ্যান্ড প্রিন্টিং (বিডি) কোম্পানি লিমিটেড, ওয়াইকেকে গ্রুপ এবং জাপানে বসবাসরত অনাবাসী বাংলাদেশিদের (এনআরবি) যৌথ সহযোগিতায় এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে জাপানের খ্যাতনামা বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ও শিল্পগ্রুপগুলোর প্রায় ১২৫ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
বেপজা নির্বাহী চেয়ারম্যান বাংলাদেশের কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান তুলে ধরে বলেন, “বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাজারে নির্বিঘ্নে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে তরুণ, শিক্ষিত ও সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য জনশক্তি রয়েছে, যা এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সাশ্রয়ী শ্রম শক্তি হিসেবে বিবেচিত।”
নির্বাহী চেয়ারম্যান বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সরকারের অঙ্গীকার ও বেপজার ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেন, যা কর অবকাশ, শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা এবং দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তির আওতায় আইনি সুরক্ষা প্রদান করে।
জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন এবং জাপানি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। তিনি আশ্বস্ত করেন যে, জাপানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যবসা ও ভ্রমণ ভিসা এক ঘণ্টার মধ্যে প্রক্রিয়াকরণে প্রস্তুত।
বিদ্যমান বিনিয়োগকারী এবং অনাবাসী বাংলাদেশিরা রাষ্ট্রদূতের প্রতি ঢাকা-নারিতা সরাসরি বিমান চালুর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান, যাতে বিনিয়োগ এবং ব্যবসায়িক যোগাযোগ আরও সহজ হয়।
জেট্রোর সদ্যবিদায়ী কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউজি আন্দো বাংলাদেশে তার দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ইপিজেডসমূহে বিনিয়োগের ইতিবাচক দিকসমূহ তুলে ধরার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এসব সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে।
সেমিনারে মারুহিসা প্যাসিফিক কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মি. হিরাইশি কিমিনোবো এবং ইয়োকোহামা লেবেলস অ্যান্ড প্রিন্টিং (বিডি) কোম্পানি লিমিটেডের বিনিয়োগকারী মি. কানো তেৎসুরো আদমজী ইপিজেডে তাঁদের এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্যবসা পরিচালনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তাঁরা বেপজার বিনিয়োগ সহায়তা ও দক্ষ ওয়ান স্টপ সার্ভিস ব্যবস্থার প্রশংসা করেন এবং অন্যান্য জাপানি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
বেপজার নির্বাহী পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. তানভীর হোসেন “বাংলাদেশের ইপিজেড ও বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ সম্ভাবনা” শীর্ষক একটি বিস্তারিত পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন, যেখানে বেপজার অর্জন, অবকাঠামো ও সেবাসমূহ তুলে ধরা হয়।
সেমিনার শেষে একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান, নির্বাহী পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) এবং পরিচালক আলী ইসতিয়াক চৌধুরী অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
বর্তমানে বেপজা ৮টি ইপিজেড এবং বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিচালনা করছে। যশোর ও পটুয়াখালীতে আরও দুটি ইপিজেড বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৮টি দেশের ৪৫০টি প্রতিষ্ঠান এসব জোনে প্রায় ৭.০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং যা পাঁচ লাখের বেশি বাংলাদেশির সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। গত অর্থবছরে ইপিজেডসমূহ থেকে জাতীয় রপ্তানির ১৭% এবং মোট বৈদেশিক বিনিয়োগের ৩০% এসেছে।
উল্লেখ্য, ২৯টি জাপানি প্রতিষ্ঠান বেপজাধীন জোনসমূহে ৬২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে যেখানে ১৭ হাজার ৭ শতাধিক বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছে।