।। মো.মিজানুর রহমান ।।
পিরোজপুর, ৩০ জুন, ২০২৫ (বাসস) : দেশের দক্ষিণ জনপদের অবহেলিত জেলা পিরোজপুর। এই জেলার সাক্ষরতার হার বরিশাল বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ হলেও দুঃখজনকভাবে এখানে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা তেমন গড়ে ওঠেনি।
জেলা শহরে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ছাড়া উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো মানসম্পন্ন বিদ্যালয় নেই।
এই দু’টি বিদ্যালয়ে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত আসনে লটারির মাধ্যমে ভর্তি নির্বারিত হওয়ায় বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এই সমস্ত কারণে এবং একটি মানসম্মত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে শহরের প্রাণকেন্দ্রে গড়ে ওঠে জেলা প্রশাসন পরিচালিত কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ। যে স্কুল নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করে শহরের শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকরা।
প্রতিষ্ঠার প্রথম বছর প্লে-গ্রুপ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি নেওয়া হলেও বর্তমানে তা দশম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। এখন এখানে বালক-বালিকা মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ শতাধিক। এছাড়া বিদ্যালয়টিতে একজন অধ্যক্ষ, ১৭ জন সহকারী শিক্ষক, দুইজন অফিস সহকারী এবং চারজন এমএলএসএস রয়েছেন।
এই বছরের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা আগামী বছর (২০২৬ সালে) বিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচ হিসেবে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। এছাড়া ২৬/২৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম ব্যাচ হিসেবে এইচএসসি শিক্ষার্থীদেরও ভর্তি নেওয়া শুরু হবে।
জেলা প্রশাসনের সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যেই শিক্ষার মানের দিক থেকে ইতোমধ্যেই অত্যন্ত সুনাম অর্জন করেছে। এখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নিয়মিত মনিটরিং করেন এবং প্রতিদিন ক্লাস নেন। ফলে শিক্ষার মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কারণে প্রতিবছরই বাড়ছে শিক্ষার্থী ভর্তির চাপ।
কিন্তু জেলা প্রশাসনের বহুপ্রাচীন কালেক্টরেট ভবনে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টি বর্তমানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ হওয়ায় এবং অপ্রতুল শ্রেণিকক্ষের কারণে আশানুরূপ শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ছাড়াও বিদ্যালয়টি নানা সমস্যায় জর্জরিত। বিদ্যালয়টিতে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কোনো কম্পিউটার ল্যাব ও বিজ্ঞানাগার নেই, এমনকি লাইব্রেরি, কমনরুম, ওয়াশ ব্লকসহ নেই প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। শিক্ষকদের বসার জন্যও নেই কোনো ভালো রুম। ১৭ জন শিক্ষককে ছোট একটি কক্ষে গাদাগাদি করে বসতে হয়।
এছাড়া খেলার মাঠ না থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের শারীরিক বিকাশেও ব্যাঘাত ঘটছে।
অন্যদিকে বিদ্যালয়ের দরজা জানালাগুলো ভাঙ্গা থাকার কারণে এর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। মাঝেমধ্যেই ভবনের ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে। এতে একাধিক বার শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার মত ঘটনা ও ঘটেছে। এর কারণে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা সবসময়ই একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের ছাদ থেকে বর্ষাকালে পানি চুয়ে পড়ে।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার বলেন, বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যসম্মত ওয়াশরুম না থাকা আমাদের জন্য বড় সমস্যা।
অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রের অভিভাবক হায়দার আলী বাচ্চু বলেন, বিদ্যালয় ভবনটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে আমাদের টেনশনে থাকতে হয়।
তবে শত প্রতিকূলতার মাঝেও স্থানীয় জেলা প্রশাসনের সহায়তায় সম্ভাবনাময় এই বিদ্যালয়টি কোনো রকম টিকে আছে।
কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. কাদিরুল মুকতাদির বলেন, জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত আমাদের এই বিদ্যালয়টি ইতোমধ্যেই বেশ সুনাম অর্জন করেছে। আমাদের এখানে প্রতিবছরই শিক্ষার্থীদের ভর্তির চাপ বাড়ছে। কিন্তু জরাজীর্ণ ছোট ভবনে শ্রেণিকক্ষের অপ্রতুলতার কারণে আমরা বেশি পরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে পারছি না। এখন প্রয়োজন ছয় তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও জেলা প্রশাসনসহ সকলে মনে করেন, জরাজীর্ণ এই ভবনটি ভেঙ্গে নতুন ছয় তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মিত হলেই সকল সমস্যার সমাধান হবে।
এই বিষয়ে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান বলেন, শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগে একটি নতুন ভবন স্থাপনের জন্য অনুরোধের প্রেক্ষিতে এক তলা ভবনের অনুমোদন হয়েছে। যার নির্মাণ কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। কিন্তু সকল শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিমুক্ত রেখে পাঠ দান করতে গেলে জরুরি ভিত্তিতে ছয় তলা ভবনের নির্মাণ আবশ্যক।