খুলনা, ১৯ জুলাই ২০২৫ (বাসস) : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর প্রথম শাহাদত বার্ষিকী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) কর্তৃপক্ষ গতকাল বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শহিদ মীর মুগ্ধ স্মরণসভার আয়োজন করে। এছাড়া ‘শহিদ মীর মুগ্ধ স্মৃতি কর্নার এবং ‘শহিদ মীর মুগ্ধ পানি কর্নার উদ্বোধন করা হয়।
মুগ্ধর স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপউপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হারুনর রশীদ খান ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. নূরুন্নবী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. মো. নাজমুস সাদাত। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গণিত ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মো. আজমল হুদা।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আইন স্কুলের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর শেখ মাহমুদুল হাসান, এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. ইয়াছিন আলী, নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. আশিক উর রহমান এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক আবুল বাশার।
বক্তারা বলেন, সুস্পষ্ট পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জুলাই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে এক গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এই অভ্যুত্থানে অসংখ্য ছাত্র-জনতা শহিদ হন। নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে তারা জীবন উৎসর্গ করেন। তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাই আমাদের দায়িত্ব।
তারা বলেন, যারা এই অভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছেন, তাদের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে তাদের দোসরদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে জুলাই বিরোধী অপশক্তি আবারও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।
বক্তারা আরও বলেন, গত বছর এই দিনে আমরা মীর মুগ্ধকে হারিয়েছি। জুলাই আন্দোলনে তার আত্মত্যাগ দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। মীর মুগ্ধ আজকের তরুণ প্রজন্মের জন্য এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণার প্রতীক। তার স্মৃতি রক্ষায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়েছে। ভবিষ্যতেও আরও কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। এখন থেকে ১৮ জুলাই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শহিদ মীর মুগ্ধ দিবস’ হিসেবে পালিত হবে, যা ইতোমধ্যে সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হয়েছে।
শহিদ মীর মুগ্ধর বন্ধু মো. জাকিরুল ইসলাম এবং জুলাই আন্দোলনে দৃষ্টিশক্তি হারানো নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ শাফিল অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ক্বারী মুস্তাকিম বিল্লাহ। এরপর জুলাই শহিদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহকারী ছাত্র বিষয়ক পরিচালক আইরিন আজহার ঊর্মি। স্মরণসভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শহিদ মীর মুগ্ধ স্মৃতি কর্নার এবং শহিদ মীর মুগ্ধ পানি কর্নার উদ্বোধন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম। এ সময় ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. নূরুন্নবী, ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মো. আজমল হুদা ও ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. মো. নাজমুস সাদাত এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল বাদ জুম্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে শহিদ মীর মুগ্ধসহ সকল শহিদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো রেজাউল করিম। দোয়া অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মুসল্লিরা অংশ নেন। দোয়া পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি আব্দুল কুদ্দুস।
সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্দিরে শহিদ মীর মুগ্ধসহ সকল শহিদের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ অংশ নেন।