ঢাকা, ২১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বাংলাদেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী মতাদর্শ আর যাতে কখনো ফিরে আসতে না পারে সেজন্য সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষকে ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ সোমবার বিকেলে কারিগরি ও মাদ্ররাসা শিক্ষা বিভাগের আয়োজনে ‘মাদরাসা রেজিস্ট্যান্স ডে’ উপলক্ষে যাত্রাবাড়ির জামিয়া মাহমুদিয়া মাদ্রারাসা প্রাঙ্গণে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানা।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষই কোনো না কোনোভাবে মজলুম হয়েছে। ফলে এখন সবচেয়ে প্রয়োজন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মজলুম মানুষের মধ্যে একটি ঐক্য গড়ে তোলা। সেই ঐক্য হতে হবে জুলুম ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, যাতে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী মতাদর্শ আর কখনো বাংলাদেশে ফিরে আসতে না পারে।’
মাহফুজ আলম বলেন, গত ৫৩ বছর ধরে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি বজায়ে ছিল। রাষ্ট্রীয় নীতিতে ইসলামফোবিয়া, আলেম ও শিক্ষার্থীদের প্রতি অবজ্ঞা ও বিদ্বেষ জায়গা করে নেয়। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে এই বিদ্বেষ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। এমনকি তাদের মৃত্যুকেও রাষ্ট্র ‘এক্সপেন্ডেবল’ বা ‘মরে গেছে তো কী হয়েছে? মনে করেছে।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, শাপলা চত্বরে নির্বিচারে গুলি করে এক রাতেই অসংখ্য মানুষকে শহীদ করা হয়েছিল। আমরা ৬০-৭০ জনের কথা জানলেও সেই সংখ্যাটা আরও বেশি। ওই রাত্রেই সবাইকে ঢাকা থেকে বের করে দিয়ে ঢাকা শহরকে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত করা হয়েছে বলে জাস্টিফিকেশন দে
য়া হলো
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আগের শাসনামলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ৯৬ এর আমলে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে শাইখুল হাদিস আজিজুল হক থেকে শুরু করে অনেক আলেম ওলামাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। গত ৫০ বছরের রাষ্ট্রের পলিসি ছিল সবসময় আলেম ওলামাদেরকে আলাদা করা। মাদরাসার শিক্ষার্থীদের শহীদের সংখ্যা শতাধিক দেখে বুঝতে পারি যে এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কত ঘৃণা ও ক্ষোভ জমেছিল। এই ব্যবস্থাকে মূলোৎপাটনে কত আকাঙ্ক্ষা তাদের মনে ছিল যে তারা তাদের জীবন কোরবানি করে দিয়েছে। আমরা তাদের আজকে সশ্রদ্ধ সালাম ও আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
উপদেষ্টা বলেন, মাদ্রসার শিক্ষার্থীদের একটি আখলাকের বিষয় আছে, যার উপর ভিত্তি করেই জাতি গঠন সম্ভব। আমি মনে করি, এই জায়গাটিতে আমাদের আরও বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। এই নৈতিকতা ও আখলাকই আমাদেরকে সবসময় জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে অনুপ্রেরণা দেয়। তাই এই আখলাককে সব ধরনের জুলুমের বিরুদ্ধে পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
তিনি বলেন, নবীজির আখলাক অনুযায়ী যেভাবে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা গঠিত হয়, সেই নৈতিকতা যেন আমাদের কর্ম, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিফলিত হয়। আমরা যেন কাউকে মজলুম না করি, হঠকারী কাজ থেকে বিরত থাকি এবং এমন কিছু না করি যাতে মাদরাসা ও আলেম সমাজকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের লক্ষ্য বানানো যায়।
তিনি আরও বলেন, কোনো প্রধানমন্ত্রী যেন আর সংসদে দাঁড়িয়ে বলতে না পারে ‘ওরা রং মেখে শুয়েছিল, ওরা শহীদ হয়নি।’ এই ঔদ্ধত্যতা যেন আর কেউ কোনো মজলুমের বিরুদ্ধে দেখাতে না পারে। এই দেশে আলেম-ওলামাদের লড়াইয়ের সিলসিলা দুই থেকে তিনশ বছরের পুরোনো। বাংলাদেশের আলেম সমাজ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তান আন্দোলন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বক্তব্যের শুরুতে উপদেষ্টা উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের মাগফেরাত কামনা ও আহতদের সুস্থতা কামনা করেন।