ঢাকা, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : দেশের উন্নয়ন টেকসই করতে প্রকল্প ব্যয় কমানো ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতা বাড়াতে ঋণদাতা সংস্থা বা দেশগুলোর শর্ত সহজ করতে কাজ করছে সরকার।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্প ব্যয় ও শর্ত কমাতে সরকার ঋণদাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ঋণদাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর শর্তের কারণে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া ক্রমেই ঋণদাতা দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর একচেটিয়া আধিপত্যে চলে যাচ্ছে এবং দরপত্র নথিতে পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার সবসময় উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি (ওটিএম) অনুসরণ করে, যাতে ক্রয় কার্যক্রম ন্যায্য, স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক হয়। কিন্তু কিছু বিদেশি অর্থায়িত প্রকল্পে ঋণদাতা দেশ বা সংস্থা কিছু শর্ত যুক্ত করে। আমরা এখন শর্ত ছাড়া প্রকল্পের জন্য ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছি।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, সরকার ক্রয় প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করছে, যা প্রকল্পের ব্যয় সাশ্রয় , উদ্ভাবনকে উৎসাহিত, ন্যায্যতা নিশ্চিত এবং পণ্য ও সেবার দায়িত্বশীল উৎস নিশ্চিত করবে।
তিনি আরও বলেন, একটি সুশৃঙ্খল প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়া সরবরাহকারীদের সেরা দাম ও মান দিতে উৎসাহিত করে, একইসঙ্গে সরকারকে তাদের ক্রয়ক্ষমতা ব্যবহার করে টেকসই উন্নয়ন ও সামাজিক দায়বদ্ধতার লক্ষ্য অর্জনের সুযোগ দেয়।
ঋণদাতা দেশ ও সংস্থাগুলোা শর্তের বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের কিছু প্যাকেজে প্রতিযোগিতা সীমিত থাকায় দরদাতারা অনুমিত ব্যয়ের চেয়ে বেশি দর জমা দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে এমআরটি লাইন-১ এর প্যাকেজ-৭ এর সাম্প্রতিক দরপত্রের কথা উল্লেখ করে ফারুক আহমেদ বলেন, কর্তৃপক্ষ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করায় দরদাতারা অনুমিত ব্যয়ের চেয়ে প্রায় ২৭ শতাংশ কম দরপত্র দিয়েছেন।
তিনি জানান, প্যাকেজ-৭ এর জন্য প্রাক যোগ্যতা (পিকিউ) টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি ২০২৩ সালের ৯ মার্চ জারি করা হয় এবং ২০২৩ সালের ৮ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ, চীন, জাপান, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার ১১টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়।
২০২৪ সালের ১৫ জুলাই নয়জন দরদাতাকে প্রাক যোগ্য ঘোষণা করা হয় এবং তাদের মধ্যে সাতজন দরপত্র ক্রয় করেন। শেষ পর্যন্ত শুধু তিনটি চীনা প্রতিষ্ঠান প্যাকেজটির জন্য দরপত্র জমা দেয়।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে দাতা সংস্থা বা ঋণদাতা দেশের সঙ্গে আরও আলোচনা বাড়াতে হবে।
তিনি প্রকল্পের জন্য অর্থায়নের সেরা উৎস নির্বাচন, ব্যয় ও রিটার্ন যথাযথভাবে হিসাব করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের একটি বড় অংশ বিদেশি অর্থায়নে হয়। এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে যে, এই ঋণগুলো কতটা গ্রহীতা দেশের উন্নয়নে সহায়তা করছে, আর কতটা ঋণদাতা দেশের ব্যবসা সম্প্রসারণ ও রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণের ক্ষেত্রে ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্য থাকে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক ঋণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণের চেষ্টা থাকে, যার মধ্যে রয়েছে ক্রয় প্রক্রিয়া, পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগ।
তিনি বলেন, সাধারণভাবে একটি দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অন্য দেশ থেকে মূলধন ধার নিতে সমস্যা নেই, তবে তা উভয় দেশের জন্য লাভজনক হওয়া উচিত। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, ঋণদাতা দেশের সংস্থাই প্রকল্প পরিকল্পনা করছে, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করছে, পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে এবং ঠিকাদার হিসেবেও প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ফলে প্রকল্পের মুনাফা-ক্ষতির হিসাব নিরপেক্ষভাবে করা হয় না এবং প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায়।