
ঢাকা, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের সভাপতিত্বে আজ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশে অপতথ্য, গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে সমন্বিত, আধুনিক ও সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, নির্বাচনকালীন সঠিক তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা গণতন্ত্র ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি। অপতথ্য এখন শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও নির্বাচন ব্যবস্থায় আস্থা ক্ষুণ্ন করতে পারে। এ জন্য প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া পরিচালনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ সহকারী অপতথ্য প্রতিরোধে প্রযুক্তিগত সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নির্বাচনকালীন জেলা-উপজেলায় কমিটি গঠন করে আন্তঃসমন্বয়ের মাধ্যমে অপ ও অসত্য তথ্য প্রতিরোধ করার বিষয়টিও তিনি উল্লেখ করেন।
তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মাহবুবা ফারজানা বলেন, নির্বাচনকালীন সারাদেশের মসজিদ, মন্দির, গির্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অপ ও অসত্য তথ্য বিষয়ে জনসচেতনতামূলক আলোচনা করার পাশাপাশি স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষক এবং মসজিদের ইমামদের এ বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে।
পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আমরা শুধু ড্যামেজ কন্ট্রোল করব; তা বন্ধ করতে পারবো না। তাই তিনি নির্বাচনকালীন সময় সমস্যার সমাধানে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এবং জনসচেতনতামূলক কন্টেন্ট তৈরির কাজ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে করার পরামর্শ দেন।
এনটিএমসি প্রতিনিধি অপ ও অসত্য তথ্য প্রতিরোধে সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেলের কার্যক্রম শুরু করার কথা জানান।
এনএসআই প্রতিনিধি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিদিন বিভিন্ন ফ্যাক্ট চেক প্রচারের পাশাপাশি সারাদেশে স্থাপিত ডিসপ্লে বোর্ডগুলোতে অসত্য এবং অপতথ্য বিষয়ে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম প্রচারের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন।
গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ৬৪ জেলা এবং চার উপজেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন প্রচার প্রচারণার কথা সভায় তুলে ধরেন।
সভায় অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ তুলে ধরেন। পাশাপাশি ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স, টিকটকসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের নীতিনির্ধারকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ চ্যানেল সক্রিয় করার সুপারিশ করা হয়, যাতে জরুরি কনটেন্ট দ্রুত অপসারণ বা যাচাই করা যায়। সরকারি-বেসরকারি ফ্যাক্ট-চ্যাকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত ডাটাবেস তৈরি, যাচাইকৃত কনটেন্ট দ্রুত প্রচার এবং ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও সভায় মতামত ব্যক্ত করা হয়। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ও আইসিটি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে গণমাধ্যম, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং এসএমএসের মাধ্যমে নাগরিকদের সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করার বিষয়টি সভায় আলোচনা হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, নির্বাচনি পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য রাখতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি গণমাধ্যম, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। তারা আশা প্রকাশ করেন যে, সমন্বিত তৎপরতার মাধ্যমে অপ ও অসত্য তথ্যের বিস্তার কার্যকরভাবে মোকাবেলা করে একটি উৎসবমুখর নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হবে। সভায় আন্তঃসংস্থার সদস্যদের নিয়ে একটি কার্যপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন অগ্রগতি মূল্যায়নের জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ সভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আব্দুন নাসের খান, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা-সহ বিটিআরসি, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), ডিজিএফআই, এনএসআই, এনটিএমসি, ডিবি, তথ্য অধিদফতর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, ডিএমপি, টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর, পিআইবি এবং বিভিন্ন ফ্যাক্ট-চ্যাকার গ্রুপের সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।