চট্টগ্রাম, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : চট্টগ্রামে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে আয়োজিত ধর্মীয় শোভাযাত্রা জশনে জুলুসে অংশ নিয়ে পদদলিত হয়ে ২ জন মারা গেছেন। এছাড়া নগরীর মুরাদপুর এলাকায় একটি লোহার সাঁকো ভেঙে পড়ে কয়েকজন আহত হয়েছেন।
আজ শনিবার বেলা ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে নগরের পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুর মোড় এলাকায় পৃথক দুর্ঘটনা ঘটে।
পদদলিত হয়ে আহত আরো ৪ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অজ্ঞাত একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নিহতরা হলেন, আইয়ুব আলী (৬০) ও সাইফুল ইসলাম (১৩)। তাদের মধ্যে আইয়ুব আলী চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা এবং সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম নগরের কালামিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা। আহতদের একজনের নাম মাহফুজ (৩৫) এবং বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি।
শনিবার দুপুর ২টার দিকে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘জশনে জুলুসে পদদলিত হয়ে আহত ৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। একজনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকি ৩ জনকে ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
নিহত আইয়ুব আলীর শ্যালক মো. আজাদ জানান, আজ সকালে তার দুলাভাই জশনে জুলুসে অংশ নিতে পটিয়া থেকে শহরে আসেন। অতিরিক্ত গরমে ও মানুষের ভিড় সহ্য করতে না পেরে মাথা ঘুরে পড়ে যান। এরপর আশপাশের মানুষের পায়ের নিচে চাপা পড়েন। এক পর্যায়ে তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে কিশোর মো. সাইফুলের বড় বোন জয়নব বলেন, ‘সকাল ১০ টায় বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে জুলুসে এসেছিল। পরে জানতে পারি সে হাসপাতালে ভর্তি। এরপর আমরা হাসপাতালে এসে জানতে পারি সে পদদলিত হয়ে মারা গেছে।’
এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর মুরাদপুর এলাকায় একটি লোহার সাঁকো ভেঙে পড়ে কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুলুসে অংশ নিতে আসা লোকজন মূল সড়কে ভিড়ের চাপ সামলাতে না পেরে পাশের নালার ওপর নির্মিত সাঁকোয় অবস্থান নেন। এসময় সাঁকোর একটি অংশ ভেঙে যায়। এতে হুড়োহুড়িতে অনেকে নিচে নালায় পড়ে আহত হন। স্থানীয়রা ও স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
জুলুস উপলক্ষ্যে আজ সকাল থেকে লাখো মানুষ চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলা থেকে নগরের মুরাদপুর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে সমবেত হন। সকাল ৯টায় আলমগীর খানকাহ থেকে শুরু হওয়া এই শোভাযাত্রা নগরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। লাখো মানুষের অংশগ্রহণে আয়োজিত এ জুলুসে নেতৃত্ব দেন আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মা. জি. আ.)। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, শাহজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ্ (মা. জি. আ.) ও সৈয়্যদ মুহাম্মদ মেহমুদ আহমদ শাহ্ (মা. জি. আ.)।
আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের উদ্যোগে এবং গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের সার্বিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয় এই জুলুস।
আনজুমান ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর আগমনের ১৫০০’ বছর পূর্তি এ বছর। একই সঙ্গে আনজুমান ট্রাস্ট শতবর্ষে পদার্পণ করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম মিলাদ শোভাযাত্রা হিসেবে খ্যাত এ জুলুস এখন চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।