তানজিম আনোয়ার
ঢাকা, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে সরকার যাত্রী ও কার্গো সেবায় আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) তৃতীয় টার্মিনালে বিমানের পাশাপাশি আরেকটি আন্তর্জাতিক গ্রাউন্ড হ্যান্ডলারকে অনুমোদন দিতে পারে।
উপদেষ্টা বশির আজ রোববার বাসসকে বলে, ‘গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং শিগগিরই তা প্রকাশ করব।’ তিনি ইঙ্গিত দেন যে এ ঘোষণা আগামী সপ্তাহেই আসতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হলো সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে সেবা উন্নত করা। আমরা সমন্বিত একটি পদ্ধতি চাই।’
বশির যোগ করেন, ‘আমরা চাই না কোনোভাবে বিমান প্রতিযোগিতাহীন হয়ে যাক, তবে একইসাথে চাই না যাত্রীসেবাও নষ্ট হয়ে যাক।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশ হয়তো এখনই সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে পারবে না, কিন্তু নতুন টার্মিনালে অন্তত মর্যাদাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য মানের সেবা নিশ্চিত করতে হবে। ‘তাই আমরা প্রতিযোগিতা আনার পরিকল্পনা করছি,’ তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে, নতুন নির্মিত তৃতীয় টার্মিনালের পরিচালনা নিয়ে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (সিএএবি) এবং একটি জাপানি কনসোর্টিয়ামের মধ্যে তিনদিনব্যাপী আলোচনার চূড়ান্ত পর্ব আজ বিকেলে শুরু হয়েছে।
সিএএবি কর্মকর্তারা জানান, প্রথম দুই অধিবেশনের সভাপতিত্ব করছেন সিএএবি চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক, আর উপদেষ্টা বশির শেষ দিনের আলোচনায় সভাপতিত্ব করবেন। লেনদেন উপদেষ্টা হিসেবে আন্তর্জাতিক অর্থ করপোরেশন (আইএফসি) সহ সব স্টেকহোল্ডারের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।
সিএএবি সূত্র জানায়, বিমানের জন্য দুই বছরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং দায়িত্ব দেওয়ার নীতি সিদ্ধান্ত কনসোর্টিয়ামের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছে। তারা আরও বিস্তৃত পরিচালন ও রাজস্ব ভাগাভাগির অধিকার চাইছে।
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ব্যবস্থায় বিমানের সাথে টার্মিনাল পরিচালনাকারী বেসরকারি অংশীদারের মধ্যে একটি সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট (এসএলএ) স্বাক্ষরিত হবে।
পিপিপি কর্তৃপক্ষের মতে, যদি বিমান দুই বছরের মধ্যে কর্মদক্ষতার মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে অপারেটর বিমানের পাশাপাশি একটি স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কোম্পানিকে নিয়োগ দিতে পারবে।
গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিষয়টি বহু বছর ধরে বিতর্কিত। অপসারিত পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার ইঙ্গিত দিয়েছিল যে একটি জাপানি প্রতিষ্ঠান এ দায়িত্ব পেতে পারে। বিদেশি এয়ারলাইনগুলো বিমানের সেবার মান নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
বর্তমানে বিমানই বাংলাদেশের সব বিমানবন্দরের একমাত্র গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার, প্রায় ৪০টি বিদেশি এয়ারলাইনের সেবা দিচ্ছে। এ খাতে তাদের বার্ষিক আয় ১,০০০ থেকে ১,২০০ কোটি টাকা।
কর্মকর্তারা দাবি করেন, নতুন সরঞ্জাম ও জনবল যুক্ত হওয়ায় সেবার মান উন্নত হয়েছে। তবে যাত্রী ও এয়ারলাইনগুলো এখনও দেরি, অদক্ষতা এবং মাঝেমধ্যে চুরির অভিযোগ তোলে।
কিছু বিদেশি এয়ারলাইন অসন্তোষ প্রকাশ করে জানায়, বিমানের ফি প্রদান সত্ত্বেও তারা প্রায়ই নিজেদের কর্মী নিয়োগ করে মান বজায় রাখতে।
সাবেক সিএএবি চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এম মফিদুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, এইচএসআইএ কর্তৃপক্ষের করা এক জরিপে ৯৩ শতাংশ এয়ারলাইন তৃতীয় টার্মিনালে একাধিক গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার রাখার পক্ষে মত দিয়েছে।
তবে বিমানের কর্মকর্তারা আত্মবিশ্বাসী। তাদের দাবি, ২০২৩ সালে তারা ৫৭,০০০টিরও বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে এবং গত এক বছরে ৩,৬০০ নতুন গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট কেনায় ১,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। আরও ক্রয় ও জনবল নিয়োগ চলছে।
একজন মুখপাত্র বলেন, ‘বিমানের গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্টে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র যুক্ত হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় ৭০ প্রকার নতুন সরঞ্জাম যুক্ত হবে।’
তিনি আরও বলেন, বিদেশি অপারেটরের হাতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ছেড়ে দিলে ‘রাষ্ট্রীয় রাজস্বে বড় ক্ষতি’ হবে।
২১,৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তৃতীয় টার্মিনালটি জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)’র বড় অর্থায়নে তৈরি হয়েছে। এর ফলে এইচএসআইএ-এর যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা বছরে ২ কোটি ৪০ লাখে এবং কার্গো পরিবহন সক্ষমতা ১২ লাখ টনে উন্নীত হবে।
২,৩০,০০০ বর্গমিটার আয়তনের এই স্থাপনাটিতে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন ডেস্ক, ৫৯টি অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ডেস্ক এবং তিনটি ভিআইপি ইমিগ্রেশন ডেস্ক থাকবে।