জনসচেতনতার মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব

বাসস
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:০০

ঢাকা, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মুগদা শাখার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সাইমা। কয়েকদিন হলো তার শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেশি। পরিবারের সকলের ধারণা সাধারণ জ্বর। কিন্তু সাইমার জ্বর কোনোভাবেই কমছে না। বরং দিন দিন তার অসুস্থতা বাড়তে থাকে। পাঁচ দিন পর সাইমার বাবা ডাক্তারের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষা করে দেখেন, সাইমা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। এরপর সাইমাকে চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সে সুস্থ রয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, কীটতত্ত্ববিদ ও চিকিৎসকদের মতে, এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে। সংক্রমণ ও মৃত্যু এমনই পূর্বাভাস দিচ্ছে। দেশ জুড়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ গত বছরের চেয়ে এবার অনেক বেশি। মৃত্যুও অনেক বেড়েছে। ঢাকার বাইরের জেলা বিশেষকরে বরগুনা জেলার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। এই জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দেশে ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধির চারটি কারণ রয়েছে। সেগুলো হলো- মশা নিধনে সুব্যবস্থার অভাব, পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা না থাকা, ভিন্ন ধরনের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা এবং দেশে অসময়ে বৃষ্টিপাত।

আমাদের দেশে ডেঙ্গুর ধরণ চারটি। ডেন-১, ২, ৩, ৪। গত বছর দেশে ডেন-২ আক্রান্তের রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল। চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গুতে দ্বিতীয়বার বা নতুন কোনো ধরনে আক্রান্ত হলে, সেই রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়। ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডেঙ্গু বেশি ছড়ালে এ পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। কেননা, দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে রোগী বেশি হলে, তা সামলানো অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। ঢাকার বাইরে মশা নিধনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো খুবই দুর্বল। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা থাকার জন্য আমাদের কিছু বিষয় জানা অত্যন্ত জরুরি। যেমন-

ডেঙ্গু কি?

ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগ। ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ হলো জ্বর। এক্ষেত্রে ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠতে পারে। জ্বর টানা থাকতে পারে, ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেওয়ার পর, আবারও আসতে পারে। এরসঙ্গে শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।

ডেঙ্গু হলে কি করা প্রয়োজন?

ডেঙ্গু হলে কি ধরনের চিকিৎসা নেবেন, বাসায় না হাসপাতালে তা নির্ভর করে এর ধরণ বা ক্যাটাগরির ওপর। ডেঙ্গু জ্বরের চারটি ধরণ বা ক্যাটাগরি রয়েছে। প্রথম ক্যাটাগরির রোগী স্বাভাবিক থাকে।

তাদের শুধু জ্বর থাকে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়াই যথেষ্ট। ধরণ বা ক্যাটাগরি-৩ এর ডেঙ্গু রোগী সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকে। এতে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ’র প্রয়োজন হতে পারে।

ডেঙ্গু রোগীর খাবার কি?

ডেঙ্গু রোগীকে প্রচুর প্রোটিন ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এছাড়া প্রচুর পরিমাণ পানি, স্যালাইন, স্যুপ, ডাবের পানি, ফলের রস এবং দুধ জাতীয় তরল পানীয় পান করতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর থেকে সেরে ওঠার পরও প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে হবে। এ সময় শরীর যেন পানিশূন্যতায় না ভোগে সে জন্য প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে। 

ডেঙ্গুতে কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন?

ডেঙ্গুতে সাধারণত বেশি ঝুঁকিতে থাকেন- ১ বছরের কম এবং ৬৫ বছরের উপরে যাদের বয়স তারা। এছাড়া গর্ভবতী নারী যাদের ওজন বেশি, যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, যারা হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত, কিংবা যাদের নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয়। তাদেরকে ডেঙ্গু সংক্রমণের শুরু থেকেই হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশা এবং ডেঙ্গু রোগীর উপর নজরদারী বাড়াতে হবে। এডিস মশার লার্ভা জন্মে এমন জায়গাগুলো অপসারণ করতে হবে। জনগণকে ডেঙ্গু নিধনে সম্পৃক্ত করতে হবে। সুতরাং ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আগেই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সচেতনতা বাড়াতে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর’। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পুতিন ‘পশ্চিমা বিশ্বকে’ পরীক্ষা করছেন : কিয়েভ
অস্ট্রেলিয়ায় কোয়ালার ক্ল্যামিডিয়া টিকার অনুমোদন
ইসরাইল ‘সবসময় মার্কিন স্বার্থে কাজ করে না’: ইসরাইলি দূত
বিগত দিনে ভিন্নমতের সাংবাদিকরা ছিল বঞ্চিত: এম আবদুল্লাহ
নাটোরে ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা
চাঁদপুরে যান চলাচলের নিয়ম না মেনে চালকদের বিক্ষোভ, যাত্রীদের চরম ভোগান্তি
কাতারে ইসরাইলি আগ্রাসনের নিন্দা বাংলাদেশের
এনআইডি হারালে জিডি করতে হবে না
কারাগারে থাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিনের প্রথম রাত্রিযাপন
বগুড়ার গাবতলীতে দরিদ্র নারীদের হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের উদ্বোধন
১০