লাভজনক হওয়ায় বিদেশি ফলের আবাদে ঝুঁকছে কৃষকরা

বাসস
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:৫১
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশে বিদেশি ফলের বাগানের সংখ্যা দিনে-দিনে বাড়ছে। বিদেশি ফল বাজারে বিক্রি করে অধিক লাভবান হওয়ায় এদিকে ঝুঁকছেন তরুণরাও। এতে দেশের পুষ্টি নিরাপত্তাও জোরদার হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ড্রাগন, মাল্টা, রাম্বুটান, স্ট্রবেরি, অ্যাভোকাডো, পার্সিমন, কাঠলিচু, সাম্মাম ও মাচায় বেড়ে ওঠা তরমুজের মতো উচ্চমূল্যের বিদেশি ফলগুলো দেশীয়ভাবে উৎপাদনে আমাদের কৃষি অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দিতে অবদান রাখছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের (ডিএই) উদ্যানতত্ত্ব শাখার উপ-পরিচালক নাদিরা খানম বলেন, এই পরিবর্তন কেবল কৃষিকাজ সম্পর্কিত নয়, এটি স্মার্ট খামার সম্পর্কিতও।

তিনি আরো বলেন, ক্রমবর্ধমান দেশীয় চাহিদা মেটাতে এবং ফলের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে আমরা কৃষকদের বিদেশি ফল চাষে উৎসাহিত করছি।

তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের জলবায়ু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বিদেশি অনেক ফল চাষের জন্য উপযুক্ত। এসব ফল চাষের কারণে পরিবেশের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না। দেশে বিদেশি ফলের চাহিদা দ্রুতগতিতে বাড়ছে এবং বিদেশি ফলের জাতগুলো স্থানীয়ভাবে চাষাবাদে বৈচিত্র্য নিয়ে আসছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যানুসারে, বিদেশি ফলের মোট উৎপাদন ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯২২ টন থেকে বেড়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৭ টন। এক বছরে উৎপাদন ২১ হাজার টনেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে বিদেশি ফল চাষের জমির পরিমাণ ১৫ হাজার ৪৩১ থেকে বেড়ে ১৬ হাজার ৫৬৮ হেক্টর হয়েছে।

কৃষকরা দ্রুত গতানুগতিক অন্যান্য ফসল চাষ থেকে বেরিয়ে এসে আরো লাভজনক বিদেশি ফল আবাদের দিকে ঝুঁকছে।

নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার দুকুণ্ডি গ্রামের কৃষক আকরাম হোসেন বলেন, আমি আমার পুকুরের চারপাশে রাম্বুটান চাষ করেছি। এ বছর ১ লাখ টাকার ফল বিক্রি হয়েছে। আগামী বছর এখান থেকে আড়াই লাখ টাকার বেশি আয়ের আশা করছি। ফলটি ৩ থেকে ৪ মাস স্থায়ী হয় এবং বাগানে প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয় এবং খুচরা বাজারে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।

এদিকে, নাটোর সদর উপজেলার সৌখিন কৃষক সেলিম রেজা ২০১২ সাল থেকে ১৩ থেকে ১৪ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ করে আসছেন। এর আগে তিনি পেয়ারা ও বরই চাষ করতেন। এখন তিনি ‘দৃষ্টান্ত অ্যাগ্রো ফার্ম অ্যান্ড নার্সারি’ পরিচালনা করেন। এটি ২৫ হেক্টর জমিতে বিস্তৃত এবং স্থানীয় ফলের পাশাপাশি অ্যাভোকাডো ও রাম্বুটানও সেখানে উৎপাদন করা হয়।

সেলিম রেজা বলেন, আমি এখন অ্যাভোকাডো চাষের দিকে মনোযোগ দিয়েছি। এটি আমাদের স্থানীয় আবহাওয়ার সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছি।

সেলিম ২০২০ সালে কৃষিখাতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন এবং এই খাতে এখন পর্যন্ত ৮১টিরও বেশি আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পেয়েছেন।

সেলিম রেজা বলেন, কৃষকরা উন্নত জাত পেলে ড্রাগন ফলের চাষ করে বিঘা প্রতি ২ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন।

খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের মতো পাহাড়ি জেলায় বিদেশি ফলের চাষের ঊর্ধ্বগতি বিশেষভাবে দৃশ্যমান। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালে রাঙ্গামাটিতে শুধু ১ হাজার ১৭৯ হেক্টর জমি থেকে ১০ হাজার ৭২৯ টন মাল্টা উৎপাদিত হয়েছিল।

নাটোরের বাড়াইগ্রাম উপজেলার কৃষক রবিউল করিম বলেন, উৎপাদন বাড়ছে। তবে, কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য উন্নত বিপণন ব্যবস্থা প্রয়োজন।

পাহাড়ি অঞ্চলে ড্রাগন ফল ছয় মাস ধরে সংগ্রহ করা হয় এবং বান্দরবান শহরেই এটি প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা ড্রাগন ফল চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ঢাকার প্রধান বাজারগুলোতে নিয়ে যায়। স্থানীয়ভাবে সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ার পরেও প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানি করা ফল বাজারে প্রাধান্য পায়।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ ২০১৮ অর্থবছরে ৩.৫৬ লাখ টন ফল আমদানি করেছিল, যা ২০২০ অর্থবছরের ৩ লাখ টনে নেমে আসে। এরপর ২০২৩ অর্থবছরে বিদেশি ফল আমদানির পরিমাণ বেড়ে ৬.১৬ লাখ টনে পৌঁছায়। আমদানি করা ফলের মধ্যে ৭৭ শতাংশ ছিল আপেল এবং মাল্টা। এগুলোর ৯৪ শতাংশই আসে চীন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিশর, ভুটান ও ব্রাজিল থেকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যানতত্ত্ববিদ মইনুল হক বলেন, উচ্চশিক্ষিত তরুণরা কৃষির প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। অনেকেই প্রচলিত পদ্ধতিতে ফসল চাষ থেকে বেরিয়ে এসে বিদেশি ফল আবাদের মাধ্যমে কৃষিকাজে প্রবেশ করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
গাজা সিটি ছেড়েছে আড়াই লক্ষাধিক বাসিন্দা : ইসরাইলি সেনাবাহিনী
নির্বাচিত হলে দুই মাসে গ্যাস সুবিধা পাবে নাটোর : দুলু
জুলাই সনদের বিষয়ে ঐক্যের আহ্বান গোলাম পরওয়ারের
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে কুয়েটে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত
আগামী সোমবার ফাজিল অনার্স পরীক্ষার ফল প্রকাশ
লক্ষ্মীপুরে শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা পেলেন ১৯ গুণী শিল্পী
মান্তা সম্প্রদায়ের শিক্ষায় আলোর পথ দেখাচ্ছে ‘বাতিঘর’ 
শিক্ষা ও গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে : অর্থ উপদেষ্টা
গণমাধ্যম কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চয়তার লক্ষ্যে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ রিভিউ করার দাবি
ফ্যাসিস্টরা মাদরাসা শিক্ষা ধ্বংসের আয়োজন করেছিল : মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান
১০