শিরোনাম
ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : আগামী ১ নভেম্বর থেকে চার মাসের জন্য সীমিত পরিসরে খুলছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটকের যাতায়াতের সীমা নির্ধারণ করা হবে।
আজ বৃহস্পতিবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ১ নভেম্বর থেকে প্রথম দুই মাসে শুধুমাত্র দিনের বেলায় ভ্রমণ করা যাবে। পরবর্তী দুই মাসে ভ্রমণের পাশাপাশি রাত্রিযাপনও করা যাবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটকের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাহাজের টিকিট বিক্রির প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রস্তুতকৃত সফটওয়্যার সিস্টেম যুক্ত করা হয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান জানান, সেন্টমার্টিনের প্রবাল বাংলাদেশের একটি মূল্যবান সম্পদ। গত এক বছর নিয়ন্ত্রণের ফলে প্রবালে প্রাণসঞ্চার হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে পর্যটন কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষমতায়িত করা এবং জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে অতিপর্যটনের বিরূপ প্রভাব কমাতে কমিউনিটি অংশগ্রহণমূলক পর্যটন সংক্রান্ত একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
পাশাপাশি নিরাপদ হাওড় পর্যটন ও দায়িত্বশীল সমুদ্র পর্যটনের জন্য প্রাথমিক গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে। পর্যটনসেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন সেবাদানকারীর সক্রিয় সম্পৃক্ততা বিবেচনায় রেখে পর্যটনসহ সকল অংশীজনের জন্য একটি রঙিন ছবি সংবলিত আচরণবিধি (কোড অব কন্টাক্ট) প্রণয়ন করা হয়েছে।
এই আচরণবিধি পর্যটনসেবার মান, পর্যটন খাতে টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, গতিশীলতা ও সেবা সহজীকরণ নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়ের বহুমুখী উদ্যোগের অংশ। গত এক বছরে পর্যটন খাতে টেকসই উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণে মন্ত্রণালয় উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
জাতীয় পর্যটন দিবসকে “গ” শ্রেণি থেকে “খ” শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে এ খাতের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই পর্যটন উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ২০১০ সালের পর্যটন নীতিমালা সংশোধন ও হালনাগাদ করে ২০২৫ সালের নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
নীতিমালার খসড়া প্রস্তুতের সময় অংশীজনদের মতামত গ্রহণের জন্য পরামর্শ সভা আয়োজন করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে এটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে আরও মতামত আহ্বান করা হচ্ছে।
ট্রাভেল এজেন্সি নিয়ন্ত্রণ ও নিবন্ধন আইন, ২০১৩ এবং বিধিমালা, ২০২২ সংশোধন করে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির বিষয়টি স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি ট্রাভেল এজেন্সির কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
গত অর্থবছরে ট্রাভেল এজেন্সি থেকে ৭.৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১১০ শতাংশ। প্রতারণা ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বা সিন্ডিকেটে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৩টি ট্রাভেল এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
দেশব্যাপী পর্যটনসেবা সম্প্রসারণে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ছয়টি জেলায় আঞ্চলিক অফিস স্থাপনের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বাগেরহাটে নতুন ‘পর্যটন মোটেল এন্ড ইয়ুথ ইন’ উদ্বোধন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের বাণিজ্যিক ইউনিটগুলোকে আরও স্বচ্ছ ও লাভজনক করতে ‘বিপণন কৌশল ২০২৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং শতভাগ অটোমেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খাদ্য বিক্রিতে রশিদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তরুণ প্রজন্মকে পর্যটনে সম্পৃক্ত করতে উদ্যোক্তা তৈরির সেমিনার, বেসক্যাম্প ট্রেনিং এবং পর্যটন ভলান্টিয়ার তৈরির কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারে ১০০ জন পর্যটন ভলান্টিয়ার গড়ে তোলা হয়েছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ট্যুর অপারেটর ও গাইডদের দক্ষতা বাড়ানো হচ্ছে এবং শিল্প-একাডেমিয়া সমন্বয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পর্যটনকে জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও খাদ্য উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকায় ‘টেস্ট অব বাংলাদেশ’ খাদ্য উৎসব ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এছাড়া শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরা হয়েছে।
পর্যটন খাতের তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়নে ‘ট্যুরিজম স্যাটেলাইট একাউন্ট (টিএসএ)’ প্রণয়নের কাজ চলছে। এটি চালু হলে পর্যটন সংক্রান্ত রিয়েল-টাইম তথ্য পাওয়া যাবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্রীড়া বোর্ডের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে দেশে ক্রীড়া পর্যটনের সূচনা হয়েছে।
