রেজাউল করিম মানিক
রংপুর, ১২ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : উত্তরের বাতিঘর খ্যাত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রতিষ্ঠার ১৭তম বছর পেরিয়ে ১৮তম বর্ষে পদার্পণ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দিনব্যাপী রয়েছে নানা আয়োজন।
আজ রোববার সকালে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে শুরু হয় কর্মসূচি। উদ্বোধন শেষে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা। বর্ণিল এ আনন্দ শোভাযাত্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছাড়াও পার্কের মোড়সহ নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
পরে আলোচনা মঞ্চে কেক কাটেন অতিথিবৃন্দ। আলোচনা পর্বে জুলাই আহত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় বক্তব্য দেন উদ্বোধক হিসেবে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের আহবায়ক ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. রেজাউল হক, প্রধান অতিথি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
প্রধান আলোচক ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. এম লুৎফর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. এনামউল্ল্যা, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রাশেদুল ইসলাম, রংপুর মহানগর সুজনের সভাপতি শিক্ষাবিদ ফখরুল আনাম বেনজু প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সভাপতিত্ব করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী। এছাড়াও দিনব্যাপী আয়োজনে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বাদ আসর মিলাদ মাহফিল ও সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এদিকে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭তম বর্ষপূর্তিতে রঙিন সাজে সজ্জিত করা হয় পুরো ক্যাম্পাস।
প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। দিনব্যাপী নানা আয়োজন, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্মৃতিচারণ ও পুনর্মিলন উৎসবে ক্যাম্পাসে প্রাণোচ্ছল আবহের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়িয়ে তোলে আয়োজনের গভীরতা। এ সময় তারা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মলগ্নের নানা চ্যালেঞ্জ, সংগ্রাম ও সফলতার কথা।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেবল একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি উত্তরাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন ও সংগ্রামের প্রতীক। প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছিলেন, তাদের অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে থাকবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ।
স্মৃতি রোমন্থনের আবহে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ফিরে যান তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সোনালি দিনগুলোয়।
কেউ বললেন ক্লাসরুমের গল্প, কেউ বললেন আন্দোলনের স্মৃতি, কেউ আবার খুঁজলেন পুরোনো বন্ধুদের মুখ।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই আয়োজন রূপ নেয় এক স্মৃতিময় মিলনমেলায়, যেখানে অতীত ও বর্তমান মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় প্রীতি ও গৌরবের বন্ধনে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের এই দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়। পরে পরিবর্তন হয়ে এটি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নাম করা হয়। প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরে উত্তরের বাতিঘর খ্যাত এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে নানান সংগ্রাম ও গৌরবের ইতিহাস।