
\ দিলরুবা খাতুন \
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : অগ্রহায়ণের শুরু থেকেই প্রকৃতিতে বেজে উঠেছে শীতের আগমনি। পৌষ আসতে আর কয়েকদিন বাকি। তারই প্রভাব পড়েছে দৈনন্দিন গ্রামীণ জীবনাচারণে। শীত এলেই বাংলাদেশের ঘরে ঘরে যেমন পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায়, তেমনি বিভিন্ন শুকনো খাবারও তৈরি করা হয়। যে এলাকায় যে পণ্যের প্রাধান্য থাকে সেই এলাকার মানুষ সেটাই সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে। যেমন, দেশের প্রায় সব এলাকায় মাছ পাওয়া গেলেও এ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে ও পার্বত্য অঞ্চলে মাছের শুঁটকি করা হয়। এসময় বৃষ্টি কম হওয়ায় এবং বাতাসের আদ্রতা কম থাকায় মাছ শুকানোর জন্য উপযুক্ত সময়।
বাংলাদেশে শীতকালেই সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয়। এসময় সবজির বৈচিত্র্যও থাকে। কিন্তু শীতের পরেই বসন্ত ও গ্রীষ্মকাল। সেসময় সবজি চাষ সীমিত হয়ে আসায় সবজির দামও বাড়ে। এসব বিষয়কে মাথায় রেখেই গ্রাম বাংলার মানুষ শীত মৌসুমে কিছু সবজি সংরক্ষণ করে। তারই একটি উপায় হলো কুমড়ো বড়ি।
শীত এলেই মেহেরপুরের প্রতিটি বাড়িতে চাল কুমড়া ও কলাইয়ের ডালের বড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বড়ি তৈরির প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকেন ঘরের বউ-ঝিয়েরা। কাক ডাকা ভোরে পুকুর ঘাট, নদীর ধারে কিংবা বাড়ির আঙিনায় দলবেঁধে কলাইয়ের ডাল ধোয়ার দৃশ্য যেন গ্রামীণ জীবনে বিশেষ এক উৎসবের আবহ তৈরি করে।
চাল কুমড়া ঝুরি করা, কলাইয়ের ডাল তৈরি, ডাল ভিজিয়ে রাখা, ভেজানো ডাল ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে পরিষ্কার করা, ভোরে পিষে আনা এসব কাজে সারাদিন কেটে যায়। রোদ উঠলেই শুরু হয় বড়ি বসানোর কাজ। রোদে শুকিয়ে জারে সংরক্ষণ করে পরিবারের সদস্যরা সারা বছর বড়ি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের রান্না উপভোগ করেন।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের গৃহবধূ জাহানারা বেগম বলেন, ‘শীতকালে বড়ি বানিয়ে সারা বছর খাই। বড়ি দিয়ে মাছ রান্না হলে আর বাড়তি তরকারির প্রয়োজন হয় না। শীতের সকালে বড়ি ভর্তা হলেই পরিবারের সবাই তৃপ্তি করে ভাত খায়। মাছ, মুরগির মাংস, বেগুন, শীম, লাউ বিভিন্ন সবজির সাথে বড়ি রান্না করি।’
গৃহবধূ শিরনি আক্তার বলেন, বড়ি তৈরিতে পরিশ্রমের পরিমাণ অনেক বেশি হলেও স্বাদের কারণে কষ্ট ভুলে যেতে হয়। তিনি বলেন, ‘দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত প্রস্তুতির পর ভোরে উঠে ডাল পিষতে হয়। রোদ উঠতেই বড়ি বসাতে শুরু করি। ঠিকমতো শুকালে বয়ামে ভরে সংরক্ষণ করে সারা বছর ধরে খাওয়া যায়।’
মেহেরপুর শহরের বড় বাজারের বড়ি ব্যবসায়ী রাকিবুল ইসলাম জানান, স্থানীয় বড়ির সুনাম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি প্রতিদিন প্রায় এক মণ বড়ি বিক্রি করেন। কিছু বিক্রেতা সবজি মিশিয়ে বড়ি তৈরি করে কমদামে বড়ি বিক্রি করায় কয়েক বছর চাহিদা কমেছিল। তবে গত বছর থেকে পুনরায় চাহিদা বেড়েছে বলে জানান তিনি।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সঞ্জীব মৃধা বলেন, বড়ি তৈরিতে চাল কুমড়ার বিকল্প নেই। স্থানীয় চাহিদা মেটাতে এখন বাণিজ্যিকভাবে চাল কুমড়ার চাষ হচ্ছে। বসতবাড়ির আঙিনা, পতিত জমি এবং সাথি ফসল হিসেবে এ চাষ বাড়ছে। প্রতি বিঘায় ৫০-৬০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি হয়, যা লাভজনক বলে তিনি উল্লেখ করেন। মাত্র ১০০ দিনেই বাগান থেকে কুমড়া তোলা যায়।