
।। বেলাল রিজভী।।
মাদারীপুর, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : মাদারীপুরে এ বছর আমন ধানের ভালো ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, সরকারি প্রণোদনা, উচ্চফলনশীল জাতের বীজ বিতরণ এবং কৃষি বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে জেলার পাঁচ উপজেলাজুড়ে এখন চলছে ধান কাটার মহোৎসব।
এক সময়ে যে জমিগুলো মৌসুমে অনাবাদি পড়ে থাকত, সেসব জমিতেই এখন দুলছে সোনালি ধান। এতে কৃষকদের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি।
জানা গেছে, জেলার মাদারীপুর সদর, রাজৈর, কালকিনি-ডাসার ও শিবচর উপজেলায় এ মৌসুমে মোট ২৪ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে, যা নির্ধারিত ২২ হাজার ৬১০ হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে চাষ এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ফলনও প্রত্যাশার তুলনায় ভালো হওয়ায় কৃষকরা মহাখুশি। এখন তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজে।
জেলায় মাঠের পর মাঠজুড়ে ধান কাটার দৃশ্য এখন স্বাভাবিক চিত্র। কেউ কাঁচি হাতে ধান কাটছেন, কেউ ধানের আঁটি বাঁধছেন, আবার কেউ মাথায় করে সেই আঁটি বাড়ির উঠোনে তুলছেন। উঠোনজুড়ে কৃষাণীরা ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নতুন ধানের সুবাসে গ্রামাঞ্চল জুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ, যেখানে ক্লান্তির চেয়ে আনন্দই বেশি দৃশ্যমান।
মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা গ্রামের কৃষক রজ্জাক তায়ানি বলেন, কয়েক বছর আগেও এই মৌসুমে কেউ ধানের আবাদ করত না। কৃষি বিভাগের পরামর্শে অনাবাদি পড়ে থাকা জমিতে আবার ধানের আবাদ শুরু হয়েছে।
এতে একদিকে আমরা লাভবান হচ্ছি, অন্যদিকে অনাবাদি জমিও এখন ফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ডাসার উপজেলার কৃষক তুহিন শরীফ বলেন, চলতি মৌসুমে খুব ভালো ধানের আবাদ হয়েছে। বৃষ্টি-হাওয়া সবই ছিল অনুকূলে, কোনো রোগবালাই হয়নি। ফলে ফলনও ভালো পেয়েছি। আমরা সবাই খুশি।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকা এবং সময়মতো প্রয়োজনীয় সার ও বালাই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় কৃষকেরা এবার উৎপাদন খরচের তুলনায় অধিক মুনাফার আশা করছেন। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের পাশে থাকার ফলে উৎপাদন বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রহিমা খাতুন বাসসকে বলেন, সরকারি প্রণোদনার অংশ হিসেবে কৃষকদের উচ্চফলনশীল জাতের বীজ এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ফলে এ বছর রোপা আমনের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কোনো রোগবালাই হয়নি এবং ফলন আশানুরূপ এসেছে। কৃষকরা ঘরে কাঙ্খিত উৎপাদন তুলতে পারবেন। বাজারেও ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশা করছি।
তিনি আরও জানান, মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা নিয়মিত জমি পরিদর্শন ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন, যার সুফল মাঠেই দেখা যাচ্ছে।