শিরোনাম
ঢাকা, ৮ জানুয়ারি, ২০২৩ (বাসস): বাংলাদেশকে বিপজ্জনক জৈব রাসায়নিক কীটনাশক ডিডিটি মুক্ত ঘোষণা করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
তিনি আজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চট্টগ্রামের মেডিকেল সাব-ডিপো থেকে সফলভাবে ৫শ’ টন ডিডিটি অপসারণ এবং বিশ্ব জৈববৈচিত্র সম্মেলনে অর্জন নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব ডক্টর ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব মিজানুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডক্টর আব্দুল হামিদ ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
শাহাব উদ্দিন জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১৯৮৫ সালে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ৫শ’ টন ডিডিটি পেস্টিসাইড আমদানি করেছিল। নিম্নমান বিবেচনায় আমদানিকৃত অব্যবহৃত বিপজ্জনক জৈব রাসায়নিক পেস্টিসাইড ডিডিটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের আগ্রাবাদস্থ মেডিকেল সাব-ডিপোতে মজুদ রাখা হয়।
তিনি জানান, এই পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় গ্লোবাল এনভাইরনমেন্ট ফেসিলিটির অর্থায়ন এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কারিগরি সহায়তায় পেস্টিসাইড রিস্ক রিডাকশন ইন বাংলাদেশ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পটির মাধ্যমে কর্মকর্তাদের নিরলস পরিশ্রমে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও গত বছরের ১০ ডিসেম্বর এ বিষাক্ত পদার্থ সম্পূর্ণভাবে ফ্রান্সে রপ্তানী করা সম্ভব হয়। মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই রপ্তানীতে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষা সম্ভব হয়েছে। স্টকহোম কনভেনশন অনুযায়ী নিষিদ্ধ পণ্য ডিডিটি রপ্তানীর সঙ্গে বাংলাদেশের একটি আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূর্ণ হলো।
শাহাব উদ্দিন গত বছরের ৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর কানাডার মন্ট্রিলে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জীববৈচিত্র্য সম্মেলনের অর্জন নিয়েও জানান।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, এ সম্মেলনের মধ্যে হাই-লেভেল সেগমেন্টে বাংলাদেশের দেওয়া বক্তব্যে ২০২০ পরবর্তী গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়নে উন্নত বিশ্বকে আরো বেশি পরিমাণ সহায়তা বাড়ানো এবং বিশ্বের মোট জিডিপির অন্তত ১ ভাগ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ব্যয় করা জরুরি।
তিনি জানান, এবারের সম্মেলনে ২০৫০ সনের মধ্যে ‘লিভিং হারমোনি উইথ নেচার’ রূপকল্প এবং ২০৩০ সনের মধ্যে জীববৈচিত্র্য ও ইকোসিস্টেমের ক্ষতিসাধন রোধ ও রক্ষার অভিলক্ষ্য নিয়ে ‘কুনমিং-মনট্রিল গ্লোবাল বায়োডাইভার্সিটি ফ্রেমওয়ার্ক’ গৃহীত হয়। এই ফ্রেমওয়ার্কে ৪ টি অভীষ্টের আওতায় ২৩ টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, এই অভিষ্টগুলোর মধ্যে অন্যতম লক্ষ্য হলো পৃথিবীব্যাপী ৩০ ভাগ স্থল এবং জলজ পরিবেশকে সংরক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সকল উৎস হতে প্রতি বছর কমপক্ষে ২শ’ বিলিয়ন ইউএস ডলার অর্থায়ন, উন্নত বিশ্ব হতে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত বিশ্বে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর কমপক্ষে ২০ বিলিয়ন ডলার এবং ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর কমপক্ষে ৩০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন নিশ্চিত করা। এই ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় দেশের ‘ন্যাশনাল বায়োডাইভার্সিটি স্ট্রাটেজি এন্ড একশন প্ল্যান’ আপডেট করা হবে।
মন্ত্রী জানান, সম্মেলনে সাসটেইনেবল ওয়াইল্ডলাইফ ম্যানেজমেট, নেচার এন্ড কালচার, কোস্টাল এন্ড মেরিন বায়োডার্ভিসিটি, বায়োডার্ভিসিটি এন্ড এগ্রিকালচার, বায়োডাইভার্সিটি এন্ড ক্লাইমেট চেইঞ্জ, ইনভেসিভ এলিয়েন স্পেসিজ, সিন্থেটিক বায়োলজি শিরোনামে আরও কয়েকটি ডকুমেন্টস গৃহীত হয়।
তিনি জানান, এই ডকুমেন্টস নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে সভা করে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে। উন্নত বিশ্ব যাতে পর্যাপ্ত আর্থিক, কারিগরি এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা পেতে পারে এবং তারা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে আসে সেজন্য বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের সঙ্গে একমত হয়ে সম্মেলনে আহ্বান জানান।
মন্ত্রী আরো জানান, বিশ্ব জীববৈচিত্র্য সম্মেলনে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটির উদ্যোগে ২০২৩ সালের মধ্যে গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্ক তহবিল (জিবিএফ ফান্ড) প্রতিষ্ঠা করা হবে।
তিনি জানান, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জিবিএফ বাস্তবায়নে তথা জীববৈচিত্র্য এবং প্রতিবেশ সংরক্ষণে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা প্রদান করার অঙ্গীকার করেছেন।